সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    কবুতরের জাতের নাম ও কবুতর পালন পদ্ধতি

    কবুতর একটা এমন একটা প্রানী যে, এটা মসজিদ, মন্দির, গির্জা কিংবা মঠ সব জায়গায় এর দেখা মিলে। বর্তমানে গ্রামের শতকরা ৬০ ভাগ ঘরেই কবুতর পালতে দেখা যায়। কবুতরের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ তা অন্য কিছুতেই নেই। এটা মানুষের নেশা, পেশা, শখ ও সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম হিসাবে আজ পরিচিত। কবুতর প্রেমিদের সেই নেশা ,পেশা ও ভালো লাগার আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে সৌখিন কবুতর (fancy pigeon), এই সৌখিন কবুতর যে কত সুন্দর হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আজ স্কুলের একজন ছাত্র থেকে শুরু করে অফিস আদালতের কর্মরত, সেনাবাহিনী, জর্জ, উকিল, পুলিশ কমিশনার এর মত সব উচ্চপদের মানুষ আজ এই কবুতর পালন কে নিয়েছে শখ কিংবা নেশা হিসেবে । এভাবেই কবুতর পালন আজ সবারই ভালো লাগা ও ভালবাসার প্রানীতে পরিনত হয়েছে। আজ সৌখিন কবুতর (fancy pigeon) পালন শুধু শখ বা নেশা নয় এটা আজ অনেক বড় পেশাতেও পরিণত হয়েছে। আজকাল অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরা এই পেশায় নিজেদের কাজে লাগাচ্ছে। এই পেশায় সময় দিয়ে অনেক যুবকরা তাদের বাইরের আড্ডা, বা খারাপ সঙ্গ থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারছে। একজন কবুতর খামারি নিজেও বলতে পারবে না যে, তাকে খামারে সময় দিতে গিয়ে দিনটা কিভাবে কেটে যায়। অনেক সময় হয়তো ভেবেই পাওয়া যায় না যে দিনটা এত তাড়াতাড়ি কিভাবে কাটল, আজ দিনটা কি ছোট নাকি ? অনেকে আবেগের তাড়নায় বলে ফেলেন যে, বন্দি বা খাচায় পাখি বা কবুতর পালা উচিৎ না। আর এটা ইসলামে এটা নিষেধ। আসলে এটা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা, যারা এধরণের কথা বলেন তারা না জেনেই বলে থাকেন। আর না জেনে কথা বলাটা মারাত্মক পাপ।

    পশু-পাখি ও জীব-জন্তু আল্লাহ তায়ালার অনন্য দান। আল্লাহ তায়ালা মানুষের খেদমতের জন্য এগুলো তৈরি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا ﴿۷۰﴾

    নিঃসন্দেহে আমরা আদম-সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং স্থল ও সমুদ্রে (বাহনসমূহে) আরোহণ করিয়েছি এবং তাদের পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে জীবিকা দান করেছি এবং আমরা যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনি-ইসরাইল- ৭০)

    খাঁচায় আটকে রেখে পাখি পালনে শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে অবশ্যই পাখির আহার প্রদানসহ যথাযথ যত্ন নিতে হবে। আনাস (রাঃ)-এর ছোট ভাই আবু উমায়ের বুলবুলি পাখি পুষতেন এবং তার সাথে খেলা করতেন। একদা পাখিটি মারা গেলে রাসূল (ছাঃ) মজা করে বলেছিলেন, হে আবু উমায়ের!  তোমার  ছোট বুলবুলিটির কি হ’ল?’ (বুখারী হা/৬১২৯, মুসলিম হা/২১৫০, মিশকাত হা/৪৮৮৪)।
    আর যথাযথভাবে খাদ্য প্রদান ও যত্ন না নিতে পারলে জায়েয হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এক মহিলা একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে খেতে না দেওয়ায় মারা যায়। ফলে মহিলাটিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয় (বুখারী হা/৩৩১৮, মুসলিম হা/২৬১৯; মিশকাত হা/৫৩৪১)।
    তাই একজন মুসলিম যিনি একটি পোষা প্রাণী রাখতে পছন্দ করে, তার দায়িত্ব হল ভালমত এর যত্ন নেয়া, যথাযথ খাদ্য, পানি এবং আশ্রয়ের ব্যাপারে খেয়াল করা। কোন ব্যাক্তি যদি একটি পোষা প্রাণীর যত্নের ব্যাপারে উদাসীন বা উপেক্ষিত হয়, তবে হাদিসে তার কঠিন শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে।
    সুতরাং কেউ যদি সত্যি সত্যি পাখি, প্রানি বা কবুতর পালতে চান তাহলে তাদের অবশ্যই এসব শর্ত মানতে হবে। যাই হোক যারা আগে থেকেই সৌখিন কবুতর পালেন তাদের ও যারা পালতে চান তারা আজ এই পোষ্টটি পড়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন বলে আশা রাখি।

                                 

    আপনি কিভাবে একটি ভালো খামার গঠন করবেন?

    কবুতরের জাত বা ধরন গুলো কোন নির্দিষ্ট কিছু নয়। বিভিন্ন রং, বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ, চোখ ইত্যাদি এর উপর ভিত্তি করে নামকরণ বা জাত ঠিক করা হয়। এছাড়া ক্রস ব্রিডিং -এর মাধ্যমেও নতুন জাত তৈরি হয়ে থাকে। সচরাচর লভ্য জাতগুলো হলোঃ

    ১.হোমার কবুতর (উড়াল প্রতিযোগিতায় ব্যবহার হয়)- হোমিং পিজিয়ন থেকে

    ২.গোলা কবুতর (দেশী কবুতর)

    ৩.লাক্ষা কবুতর (সৌখিন, লেজগুলো দেখতে ময়ুরের মত ছড়ানো) - ভারত থেকে এসেছে

    ৪.সিরাজী (সৌখিন )কবুতর  - লাহোর নামে পাওয়া যায়

    ৫.গিরিবাজ কবুতর - (উড়ানোর জন্য বিখ্যাত)

    ৬.কাগজি কবুতর (সমস্ত শরীর সাদা কিন্তু সমস্ত চোখ কালো)

    ৭.চিলা কবুতর

    ৮.গোররা কবুতর (শরীর সাদা কালো মিশ্রণ, যেমন মাথা সাদা, পিঠ কালো, ডানা সাদা)

    ৯.চুইনা  কবুতর (সমস্ত শরীর সাদা কিন্তু সমস্ত চোখ কালো নয়)

    ১০.রান্ট কবুতর

    ১১.প্রিন্স কবুতর

    ১২.পটার কবুতর (গলার নিচটা ফুটবলের মতো)

    ১৩.ফ্রিল ব্যাক কবুতর

    ১৪.জ্যাকোবিন কবুতর

    ১৫.স্ট্রেসার কবুতর

    ১৬.মডেনা কবুতর

    ১৭.মুসল দম কবুতর (সমস্ত শরীর কালো কিন্তু দম বা লেজ গুলো সাদা)

    ১৮.নোটন কবুতর (মাটিতে ডিগবাজি দেয়)

    ১৯.কিং কবুতর

    ২০. জালালি কবুতর


    ১) জায়গা নির্বাচনঃ
    খামারের জায়গা এমন হওয়া উচিৎ, যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ও রোদ আসে। অর্থাৎ গরমের সময় বাতাস ও শীতের সময় রোদ দুটোই পাওয়া যায়। গ্রামে যারা থাকেন তাদের এমন ধরণের জায়গা নির্বাচন নিয়ে তেমন বেগ পেতে হয় না। কিন্তু যারা শহরে থাকেন, বিশেষ করে সেটা যদি ভাড়া বাসা হয় তাহলে, তা হয় এক মহা বিপদের মত। আপনি আপনি যদি বাড়ির মালিক হন তাহলে আপনার ছাদে ঘর বানিয়ে, খামার তৈরি করতে পারেন। আর যদি ভাড়া থাকেন, তাহলে মালিকের অনুমতি নিয়ে, একটা ঘর বা বারান্দায় খামারের ব্যাবস্থা করতে পারেন।
    ২) কিভাবে পালবেনঃ
    সৌখিন কবুতর দুই ভাবে পালা যায়, ক) ছাড়া অবস্থায় (কলোনি) ও খ) খাঁচার মধ্যে।
    ছাড়া (কলোনি) অবস্থায় পালতে চাইলে খেয়াল রাখতে হবে যেন মিস ক্রস না হয়, তাহলে জাত নষ্ট হবার ভয় থাকে। তাই আমি খাঁচায় পালন করাটাই বেশি অগ্রাধিকার দিই।
    ৩) খাচার মাপ/আকার/সাইজঃ
    খাঁচার আকার বা সাইজ কি হবে তা নির্ভর করে আপনি কি ধরণের কবুতর পালতে চাচ্ছেন তার উপর। যদি আপনি শুধু গিরিবাজ পালতে চান তাহলে। ১৪*১৪*১৬ ইঞ্চি হলে ভালো। আর যদি সৌখিন কবুতর পালতে চান তাহলে সাধারণত আদর্শ মাপ হল ২৪*২৪*১৮ ইঞ্চি আর ২৪*২৪*২০ ইঞ্চি হলে আরো ভালো। তবে খামারে পালন করতে গেলে সব খাঁচা একই মাপের হলে ভালো হয়। এতে খামারের জায়গার ব্যাবস্থাপনা করাটা ভালো হয়।
    ৪) খাঁচা কোথায় পাবেন বা বানাবেন আর এর দামঃ
    বাজারে বা এলাকায় তৈরি খাঁচা পাওয়া যায়। কিন্তু যা ৪০০-১২০০ টাকার মধ্যে, তবে এসব খাঁচার মান তেমন ভালো থাকে না। তাই অর্ডারি খাঁচা বা নির্দেশ মোতাবেক খাঁচা বানানো ভালো, যদিও দামের পার্থক্য খুব বেশি হয় না। কিন্তু ভালো মানের জিনিস পাওয়া যায়। যার রিসেল মূল্য ভালো হবে। ঢাকার নিমতলি পশু হাসপাতাল এর অপরপাশে এই ধরনের খাচার অনেক দোকান আছে যারা সুলভে খাঁচা তৈরি করে থাকে। যার মূল্য ১১৫ টাকা/কেজি থেকে ১৩০ টাকা/কেজি। দেখে নিবেন যেন খাঁচার তার তা একটু মোটা ও জং ধরা না হয়। ট্রে টা একটু মোটা শিট দিয়ে তৈরি করবেন যাতে সেটা জং ধরার ভয় না থাকে। খাঁচার শিক গুলো অনেক সময় জং ধরা থাকে তাই খাঁচা আনার আগে রঙ করিয়ে নিলে আর ভালো হয়। আর অবশ্যই খাঁচা তৈরির পর ভালো করে দেখে নিবেন যেন কোনা গুলো ঠিক মত মেশিন দিয়ে ঘষা হয়েছে তা না হলে আপনার হাত ও কবুতরের পা কাটার ভয় থেকেই যাবে। খাঁচার ফাঁকটা(গ্যাপ) ৪*৪ ইঞ্ছি হয় বা এর কম বেশি করতে পারেন। এতে দুটি উপকার হবে এক আপনার খাঁচার খরচ কমে যাবে ও দুই খাবারের পাত্র খাঁচার বাইরে লাগানো যাবে। কারণ খাঁচার ভিতরে খাবারের পাত্র থাকলে কবুতর পানি ও খাবারের পাত্রে পায়খানা করতে পারে বা খাবার নষ্ট করার প্রবনতা তৈরি হতে পারে। যারা ভাড়া বাসায় থাকেন তারা খাঁচা আলাদা ভাবে তৈরী করলে ভালো এতে বাসা পরিবর্তনের সময় খাঁচা নিতে সুবিধা হবে। যদিও এতে একটু খরচ বাড়তে পারে। কিন্তু এতে আপনি বেশি উপকারিত হবেন। আর খাঁচা যখন পরিবহণ করবেন কবুতর সহ তখন অবশ্যই খাঁচা ঢেকে নিবেন। এতে কবুতরের ভয় পাবার বা স্ট্রেস হবার ভয় কম থাকে। আর যাদের নিজের বাড়ি তারা ৬ টা বা ৮ তার একটা সেট তৈরি করতে পারেন। তবে খাঁচার নিচের দিকে একটু বেশি গ্যাপ দেয়ার চেষ্টা করবেন এতে করে আপনার খাঁচার পরিচর্যা করতে সুবিধা হবে।
    ৫) খাবার ও পানির পাত্রঃ
    খাবার ও পানির পাত্র টিনের না হয়ে প্লাস্টিক এর হলে ভাল হয় যাতে আপনি কিছুদিন পর পর ধুতে পারেন আর এটা জং ধরার ভয়ও থাকবে না। আর পাত্র গুলো একটু বড় ও গভীর হলে ভালো কারণ তাতে কবুতর খাবার গুলো নষ্ট করবে কম ও ফেলতেও পারবেন না। সবচেয়ে যেটা বেশি দরকার সেটা হল ঔষধ বা সাধারণ অসুস্থ কবুতর কে খাওয়ানোর জন্য নল লাগান syringe।
    ৬) ঔষধ ও ভিটামিন মজুতঃ
    কথায় আছে ঘোড়া কেনার আগে লাগাম কেন গরু কেনার আগে দড়ি। তেমনি কবুতর পালনের আগেই আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও অ্যান্টিবায়টিক এর মজুত এর ব্যাপারে। যেমনঃ Doxivet, ESB30 (অ্যান্টিবায়টিক), Cosmix Plus, Electrolyte(saline), Biovit/Toxinil(ভিটামিন), Powermax Ws(মাল্টি ভিটামিন), Calcium Forte(ভিটামিন),Shafi,Febnil,Cinkara(tonic),Riboflabin,Flazil ইত্যাদি। এছাড়া হোমিও কিছু ঔষধ যেমনঃBelodona 30,Borax 30, Kali curb 30,Kali Hydro 30 ইত্যাদি জীবাণু নাশক ফার্ম ৩০, Timson,Virocid, Vircon S, Hexisol hand rub, Povisep,Detol,Antiseptic creme ঔষধ ও মজুত রাখলে ভাল। ঔষধ নিমতলি ভি-ফার্মাতে পাবেন।(মিঃইমরান সেল #০১৭১৭৯২০৭১৮) আপনি পার্সেল যোগেও ঔষধ নিতে পারবেন।
    ৭) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ
    কিছু জিনিস যা আপনার হাতের কাছে রাখলে ভালো যেমনঃ কাচি, হ্যান্ড গ্লাভস(৯০ টাকা), মাস্ক, আলাদা স্যান্ডেল, হ্যান্ড স্প্রে( যার দাম পড়বে অটো ৩ লিটার ১৮০ টাকা, আর বড় অটো ২০ লিটার ৯০০ টাকা।) ছেনি (ময়লা বা পায়খানা পরিস্কার এর জন্য।), এছাড়াও ঔষধ ও ভিটামিন রাখার জন্য ছোট বড় রঙ্গিন বোতলে রাখলে ভালো হয়। এছাড়াও খাবার রাখার জন্য একটা ঢাকনা ওয়ালা বড় পাত্র ও পানির বড় ঢাকনা ওয়ালা পাত্র হলে ভালো হয়, আর পানি পরিবেশনের জন্য একটা জগ ও খাবার দিবার একটা ছোট বাটি বা হাতল ওয়ালা ছেনি। গোসল করানর জন্য একটা টিনের বা প্লাস্টিক বড় টব।
    কবুতর পালন
    ৮) কি ধরনের বা জাতের কবুতর পালবেনঃ
    কবুতর পালনের ৩টি স্তর আছে, যেমন –
    ক) প্রথম স্তর/ পর্যায়ঃএই স্তরে একজন নতুন পালক নতুন ভাবে কবুতর অবস্থায় কবুতর পালন শুরু করেন। এই অবস্থাকে কঠিন অবস্থা বলা হয়। কারণ এই পর্যায়ে একজন নতুন খামারি বেশি ঠকে থাকেন। নতুন অবস্থায় যে কবুতর দেখা হয় সেটাই ভালো লাগে। আর তাই ফাটা বা বেজাতের, মিস ক্রস, যেমন ইচ্ছে তেমন কবুতর সংগ্রহ করে খামার ভরিয়ে তুলেন। যে কবুতরের দাম ৫০০ টাকা তা না জেনে বুঝে কেনেন ১০০০ টাকা দিয়ে এভাবে দুই গুন ৩ গুন দামে কবুতর কেনেন। আর কিছু অসাধু ব্যাবসায়ি ও খামারি এই সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকেন। এই লেভেল এর পালক অনেক সময় কম দাম দিয়ে এই স্তরের কবুতর কিনে অল্প কিছুদিন পর তার কেনা সব কবুতরই হারাতে বসেন। কারণ তিনি জেনে না জেনে যথাযথ জ্ঞানের অভাবে সাধারণ চিকিৎসা পর্যন্ত দিতে ব্যর্থ হন। ফলে সুস্থ কবুতর অসুস্থ হয় ও পরে অসুস্থ কবুতর মারা যায়। তাই এই স্তরের পালকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আগে কবুতর পালন শিখতে হবে। আর এর জন্য প্রথমে লাক্ষা,সিরাজি,হমার,এই ধরনের কবুতর পালন করে হাত জস/পাকাতে হবে। কারন সৌখিন কবুতর দেশি/গিরিবাজ কবুতরের মত না এগুলোর রোগবালাই একটু বেশিই হয়।
    খ) দ্বিতীয় স্তর/ পর্যায়ঃ
    এই পর্যায়ে একজন খামারি কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে। আর তার ভুলের কারনে প্রথমে নিজের প্রতি ও পরে তাকে যারা ঠকিয়েছে তাদের প্রতি একটু বিরিক্ত বোধ করে। অনেকেই হতাশ হয়ে পালন ছেড়েই দেন। আর অনেকেই পুরান ভুল সুধরানোর জন্য, ফাটা বা বেজাতের কবুতর গুলোকে বিক্রি করেই হোক বা দান করেই হোক বা জবাই করেই হোক কবুতর পালনের ইতি ঘটান। অনেকেই আবার নতুন করে তৈরি করার পরিকল্পনা করে থাকে। এই পর্যায়ে এই স্তরের পালক রিং ও আমদানিকৃত কবুতরের প্রতি ঝুকে বেশি। যা তাকে আরেকটি ভুল পথে পা বাড়ায়। আর যেহেতু আগে অনেক দাম দিয়ে ফেলেছেন তাই এই স্তর/ পর্যায় এ কম দামে ভাল কবুতর কিনতে যান। ফলে দ্বিতীয় বারের মত ভুল করে বসেন। আর যেহেতু এই স্তরের খামারি রিং সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। আর এই সুযোগে সেই সকল ব্যাবসায়ি ও খামারি নিজের সরবরাহকৃত রিং, সেই অলিক রিং বলে চালিয়ে দেয়। আর আমদানিকৃত কবুতর কিনে ১ বছরেও ডিম না পেয়ে হতাশায় ডুবে যান। তখন খামার করবে না ছাড়বেন, এই ধরের দোটানায় থাকেন। আমার এই পর্যায়ের খামারির প্রতি অনুরোধ, রিং বা আমদানিকৃত কবুতরের পিছনে না ছুটে। দাম যাচাই করে ভালো মারকিং ও জাতের কবুতর সংগ্রহ করুন। এই স্তরের খামারি যেহেতু কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে তাই তাদের একটু ভালো জাতের ও দামের কবুতর পালনে যেতে পারেন। যেমনঃ পটার, স্ত্রেসার,কিং,জ্যাকবিন, বিউটি হুমার, হলুদ লক্ষা, হেলমেট, নান ইত্যাদি।
    গ) তৃতীয় স্তর/ পর্যায়ঃ
    এই স্তর/ পর্যায় এর খামারি অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে, রোদে জলে থেকে, অনেক ঠক খেয়ে,অনেক ভালবাসার ও পছন্দের কবুতর হারিয়ে অবশেষে খাঁটি খামারি হয়ে যান। আর এই পর্যায়ের খামারি চিনতে শিখেন সেই সব কবুতর ব্যাবসায়ি ও ঠকবাজদের। আর চিনতে শিখেন কোনটা আসল রিং আর কোনটা নকল। কোনটা আমদানিকৃত আর কোনটা লোকাল। তিনি জানতে শিখেন আমদানিকৃত কবুতর কিনে কি করতে হবে। আর এই পর্যায়ের কবুতের পালক বা খামারিদের আমার কোন উপদেশ নেই কারণ, তারা যদি একটু নিজের বিচার বুদ্ধি খাটায় তাহলেই তারা একজন সফল খামারি হতে পারবেন। আপনি যে স্তরের খামারি হোন না কেন অল্প পালেন কিন্তু, ভাল জাতের কবুতর পালেন।
    ৯) ফসটার কবুতর তৈরিঃ
    কিছু কবুতর আছে যারা নিজেদের ডিম বা বাচ্চা নিজেরাই করে আর, কিছু দামি কবুতর তারা এটা করতে পারে না। তাদের দেহের গঠন এর কারনেই হোক বা অন্য কারনেই হোক, এসব কবুতরের ডিম তা দিবার জন্য বা বাচ্চা তোলা ও বাচ্চা পালনের জন্য কিছু শক্ত সামর্থ্য কবুতর রাখতে হয় আর এটা করতে হয় এক জোড়ার জন্য দুই জোড়া ফসটার। যেমনঃ পটার, স্ত্রেসার, কিং, জ্যাকবিন ইত্যাদি। ডিম ফস্টারিং করলে ভাল এক্ষেত্রে, ডিম দিবার ও চালার তারিখ মনে রাখতে বা লিখে রাখতে হবে। আর এর পার্থক্য ২-৩ দিনের ব্যাবধানের বেশি যেন না হয়।
    ১০) কবুতরের খাবারঃ
    কবুতরের খাবার একজন খামারির জন্য অন্যতম প্রধান উপাদান। একজন খামারি কি খাবার দিবেন বা একজন খামারি কিভাবে খাবার সংরক্ষণ করবেন তার উপর তার সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে থাকে। কারণ কবুতরের অধিকাংশ রোগ ও ব্রিডিং ক্ষমতা এই খাবারের উপরেই নির্ভর করে। তাই একজন খামারি শুধু গম বা ধান দিয়ে তার দায়িত্ব সারতে পারবে না। অনেকেই আছেন যে ব্যাবসার চিন্তা মাথায় থাকে বলে, খাবারের পিছনে বেশি খরচ করতে চান না। যাতে তার ব্যাবসার ক্ষতি না হয়।কিন্তু ব্রিডিং কম ও ডিম না ফুটা বা বাচ্চা ভাল মত না হবার কারনে যে তার কত ক্ষতি হচ্ছে তিনি সেটা মনে রাখেন না। আপনি আপনার কবুতর কে কি ধরনের খাবার দিবেন তা খাবারের পোস্ট এ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে একটু দেখে নিবেন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন অলসতা করে বা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখে সাধারন মিক্স খাবার বেশি দামে কিনবেন না। আপনার খাবার আপনি নিজেই কিনুন। এতে আপনার খরচ বাচবে ও অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হবে। আর খাবার কখন দিবেন কিভাবে দিবেন এটা আপনার উপর নির্ভর করে। তবে খাবার দিনে ২ বার দিবেন ও তুলে নিবেন পানি যেন সব সময় থাকে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। আর পানি যদি নষ্ট করে তাহলে তাড়াতাড়ি পরিবত্তন করে ফেলবেন। তবে যে কবুতর ডিম পেড়েছে, বা বাচ্চা আছে, বা তাদের খাবার সব সময় রাখা ভাল এতে বাচ্চার আকার বড় হয়। আর এই অবস্থায় গ্রিট এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর খাবারের ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন যেন ডাবলির পরিমান বেশি থাকে কারন এটা কবুতরের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার।
    ১১) গ্রিটঃ
    গ্রিট কবুতর ও ঘুঘুর জন্য অন্যতম একটি খাদ্য উপাদানের মত। যদিও পাখিদের গ্রিট দিয়া হয়। যা কবুতরের গ্রিট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। গ্রিট মূলত কবুতরের খাদ্য ও বীজ হজমে বিশেষ ভুমিকা রাখে। যদিও অনেকেই মনে করেন যে গ্রিট ডিমের খোসা শক্ত করে ক্যালসিয়াম এর অভাব পুরণ করে ইত্যাদি। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। গ্রিট ক্যালসিয়াম এর কিছুটা অভাব পুরণ করে, ঝিনুক শেল,সমুদ্রের ফেনা ইত্যাদির কারনে, কিন্তু এর উদ্দেশ্য এটা না। গ্রিট এর ব্যাপারে একটা বিষয় খুবই খেয়াল রাখতে হবে যে, তৈরি গ্রিট যেখান থেকেই কিনুন না কেন, খেয়াল রাখবেন যেন শামুকের শেল না থাকে। এটা কবুতরের অনেক ক্ষতি করে থাকে। অনেকের ধারণা বাজারে যে গ্রিট কিনতে পাওয়া যায় তা ভাল না। অথচ যারা নতুন কবুতর পালে তাদের প্রথম এই গ্রিট দিয়েই শুরু করে। অনেকেই ব্যাবসায়িক চিন্তা থেকে বলে থাকেন যে বাইরের গ্রিট দিবেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমি বলি বাইরের গ্রিট যদি আপনি গরম করে আপনার কবুতর কে সরবরাহ করেন তাহলে আপনার ভয়ের কোনই কারণ নাই। তবে আপনি নিজে গ্রিট তৈরি করতে পারলে ভাল। গ্রিট তৈরির পদ্ধতি নিয়ে একটা পোস্ট আছে। অনুগ্রহ করে দেখে নিবেন।
    ১২) কবুতরের রোগ ব্যাধিঃ
    কবুতরের যত ধরনের রোগ আছে সেগুলো নিয়ে অনেক পোস্ট দেয়া হয়েছে। যা গ্রুপ এর ফাইল মেনুতে সংরক্ষণ করা আছে। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, আপনি যদি সাল্মনেল্লা (salmonella) ক্রিমি ও কবুতরের শরীরের মাইট কে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন তাহলে কবুতর পালন নিয়ে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না। মনে রাখবেন যে, কবুতরের রোগে না মরে তার থেকে বেশি মরে উল্টাপাল্টা ঔষধ ও রোগ নির্ণয়ের অভাবে। অধিক পরিমানে ও মাত্রার অ্যান্টিবায়টিক এর ব্যাবহারের ফলে, তাই এগুলোর ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকবেন।
    ১৩) ব্রিডিং পেয়ার তৈরিঃ
    কটা ব্রিডিং জোড়া তৈরি করাটা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। মানে আপনি যদি ভাল ডিম বাচ্চা করতে চান তাহলে আপনাকে অল্প বয়স থেকে তাকে তৈরি করতে হবে। যদিও অনেকেই পূর্ণ বয়স্ক কবুতর কিনতেই বেশি পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি পূর্ণ বয়স্ক কবুতর কিনতে গিয়ে বুড়ো কবুতর আবার না কিনে ফেলেন । এই জন্য নতুন পূর্ণ বয়স্ক কবুতর কিনতে পারেন। তবে জিরো পরের কবুতর কিনলে আপনি তাকে আপনার পরিবেশ ও খাবারের সাথে খাপ খাওয়াতে বেশি সুবিধা হবে । একটা ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন যেন ব্রিডিং জোড়া কে পারত পক্ষে অ্যান্টিবায়টিক না দেয়া হয়, আর যদিও দিতে হয় মধ্যম বা নিন্ম লেভেল এর অ্যান্টিবায়টিক দিবেন। তা না হলে তার ডিম পাড়ার ক্ষমতা কমে যাবে।
    কবুতর পালন টিপস
    ১৪) খামারের নিরাপত্তাঃ
    নিরাপদ খামার তৈরি আদর্শ খামারের পূর্ব শর্ত। খামার গঠনের পর আপনাকে চোর ও অনাখাঙ্খিত আগুন্তুক প্রতিরোধ করতে হবে। যেমনঃ বাইরের পাখি, বেড়াল, বেজি, কাক ইত্যাদি। আপনার কোন অতিথিকে খামার দেখাতে হলে অবশ্যই খামারের স্যান্ডেল ব্যাবহার করবেন। বাইরের ময়লা যেন আপনার খামারে প্রবেশ না করে। আর অনর্থক কবুতরদের বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর এ জন্য নিয়মিত জীবাণু নাশক ছিটাতে হবে। হাঁট থেকে কবুতর কেনার ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকবেন। আর নতুন কবুতর আনার পর কিছু নিয়ম মেনে তারপরই কেবল খামারে প্রবেশ করাবেন। আর খামারে নেট লাগাতে ভুলবেন না যাতে, মশা, মাছি ও পোকা, মাকড়ের হাঁট থেকে রক্ষা পেতে।
    ১৫) খামারের পরিচর্যাঃ
    একটা খামারের মূল শত্রু হল ইদুর, তেলাপোকা ও ধুলা। তাই যে কোন ভাবে এগুলো থেকে আপনার খামার কে মুক্ত রাখতে হবে। আর এরই লক্ষে আপনাকে প্রতি ২-৩ দিন অন্তর জীবাণু নাশক ছিটাতে হবে ও কবুতরের মল পরিস্কার করতে হবে। এর জন্য আপনি ট্রেতে কাগজ বা কাপড় দিয়ে রাখতে পারেন। আর খাঁচাতে এক টুকরা কাঠ দিতে ভুলবেন না। আর পারলে ছোট একটুকরা কাপর বা চট(বস্তা কেটে) দিলে ভাল হয়। ডিম পারার জন্য হাড়ি দিবেন। আর তা নিয়মিত পরিস্কার করবেন। খাঁচাতে নাম্বার দিবেন, আর খাবার ও পানির পাত্রেও নাম্বার দিতে ভুলবেন না। ডিম পাড়ার পর ডিমের পরিচর্যা করবেন নিয়মিত। কারণ ডিমে যদি ৯০% আদ্রতা না থাকে তাহলে বাচ্চা ফুটার জন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। নিয়মিত ভাবে মাসিক ছক করে, উন্নত মানের ভিটামিন ও মিনারেলস দিবেন,লিভার টনিক দিবেন, ভালো মানের খাবার দিবেন আর ২ মাস অন্তর ক্রিমির ঔষধ দিবেন।( মানুষের টা নয়)। সাল্মনেল্লা কোর্স করাবেন প্রতিমাসে(অ্যান্টিবায়টিক দিয়ে নয়), প্রতি সপ্তাহে নিজের মত করে গোসলের ব্যাবস্থা করবেন। সপ্তাহে না পারলে ১৫ দিনে বা মাসে একবারের জন্য হলেও এই ব্যাবস্থা করবেন। ৩ মাস অন্তর ধরে উকুন নাশক শ্যাম্পু দিয়ে গোসলের ব্যাবস্থা করবেন। সাধারণত একার পক্ষে কোন খামার পরিচর্যা সম্ভব হয় না। আর এ জন্য বাসার মানুষদের এতে সহযোগিতা নিতে পারেন। অথবা কেয়ার টেকার নিতে পারেন। কারন আপনি হয়ত চাকরি করেন বা ব্যাবসা করেন বা স্কুল বা কলেজে পড়েন। তাই হয়ত সময় নাও পেতে পারেন দুপুরে বা অন্য সময়ে যথাযথ ভাবে পরিচর্যা করার। আর এই ওজুহাতে আপনি আপনার খামারের কোন প্রকার গাফলতি করার কোন সুযোগ নেই। কারণ একটা খামার কে যেমন লাইনে আনতে কষ্ট করতে হয়। আর একবার ঠিক হয়ে গেলে আপনাকে এটা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু আবার যদি কোন কারনে লাইনচ্যুত হয় তাহলে তাকে আবার সঠিক পথে আনতে অনেক বেগ পেতে হয়। তাই এ ব্যাপারটা একটু খেয়াল রাখবেন। কোন কবুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে অনতিবিলম্বে এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যাতে করে অনাখাংকিত পরিস্থিতির মোকাবেলা সম্ভব হয়। আর বাচ্চা যখন বড় হবে ও খাওয়া শিখবে তখন তাদের তাড়াতাড়ি আলাদা করার ব্যাবস্থা করতে হবে। তা না হলে তারা পরবর্তীতে ডিম বা বাচ্চা কে মেরে ফেলার চেস্টা করতে পারে।
    ১৬) কবুতরের আচার আচারন লক্ষ করা ও খামারে সময় দেয়াঃ
    আপনার খামারের অন্যতম সাফল্য নির্ভর করে আপনি যদি আপনার কবুতরের আচার-আচরন ঠিকমত খেয়াল করতে পারা আর না পারার উপর। কারণ এক এক কবুতরের আচরণ এক এক রকম। তাই যখন এর পরিবর্তন দেখবেন তখনই বুঝবেন এর কোন সমস্যা হয়েছে। আর এর জন্য আপনাকে কিছু সময় কাটাতে হবে খামারে আপনার ভালবাসার কবুতরের পাশে। আর যেটা খুবই জরুরি সেটা হল রোগাক্রান্ত কবুতরের লক্ষণ গুলো ভাল মত লক্ষ করা, তার মধ্যে পায়খানা টা অন্যতম।
    ১৭) ভাল উপদেষ্টা বা খামারের জন্য বন্ধু খুজে নেওয়াঃ
    একজন মুচি যেমন চায় আরেকজনের জুতা ছিঁড়ুক, একজন ডাক্তার চান বেশি বেশি রোগী আসুক তার চেম্বারে। তেমনি কিছু মানুষ চাই যেন আপনার খামারেও সেই অবস্থা হোক। আর এরই লক্ষ্যে নানা ধরণের আমন সব উপদেশ আপনাকে দিবে যা তিনি নিজেও যে কাজ করেন না। তাই যে কোনো কাজ বা চিকিৎসা বা ঔষধ অথবা ভিটামিন প্রয়োগ করার আগে অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নিবেন বা দুই একজনের কাছে জিজ্ঞেস করবে। যাতে আপনি অনাখাংকিত ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন।
    কবুতরের রোগবালাই ও টিকাঃ  

    পর্যাপ্ত যত্নের পরও কবুতরের বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে।
    ১@ কবুতরের একটি অতিপরিচিত রোগ হলো রানিক্ষেত। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগ প্রতিরোধে কবুতরকে তিন দিন বয়সে একবার২১ দিন বয়সে একবারএরপর প্রতি দুই মাস অন্তর প্রতিষেধক টিকা দিতে হয়।
    ২@ বসন্ত একটি পরিচিত রোগ। এ রোগের জন্য ডিম পাড়ার আগে মা কবুতরকে এবং বাচ্চাকে ২১ দিন বয়সে টিকা দিতে হয়। কলেরা রোগের জন্য জন্মের দুই মাস বয়সে টিকা দিতে হয়।
    ৩@ এ ছাড়া কবুতরের ঠাণ্ডা-জ্বর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রেনামাইসিন ট্যাবলেটের সঙ্গে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়।
    ৪@ কবুতরের আরেকটি পরিচিত অসুখ হলো বদহজম। বদহজম হলে কবুতরকে এজাইম ট্যাবলেট বা বিট লবণের পানি খাওয়াতে হয়।
    ৫@ প্রতি ২ মাস অন্তর কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হবে ।  
    প্রত্যেক উপজেলায় পশু হাসপাতালে কবুতরের যাবতীয় চিকিসাসেবা পাওয়া যায়
    ভিটামিন অভাবজনিত  রোগসমূহঃ

    ভিটামিন এ এর ঘাটতি
    দেহে ক্ষত হয়দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় এবং অক্ষিঝিলি্লর প্রদাহ দেখা দেয়,ক্ষুধা কমে যায়দৈহিক বৃদ্ধি ও পালকের গঠণ ব্যাহত হয়পাদন ওহ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায়
    নিয়মিত ভিটামিনপ্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান অথবা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে।
    ভিটামিন ডি এর ঘাটতি
    অস্থি নরম ও বাঁকা হয়ে যায়ডিম উপাদন ও হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায়,ডিমের খোলস পাতলা হয়।
    ভিটামিন ডি ও মিনারেল প্রিমিক্স প্রদান,ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (কডলিভারঅয়েলফিস মিল) প্রদান করতে হবে।
    ভিটামিন ই
    এনসেফালোম্যালাশিয়া রোগ হয়,পক্ষাঘাতের ফলে চলতে অসঙ্গতি দেখা দেয়। বুক ও পেটের নীচে তরল পদার্থ জমেইডিমা হয়। ডিমের উর্বরতা কমে যায়।
    সেলিনিয়াম সহ ভিটামিন ই প্রদান করতে হবে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার (শস্যদানাগমচাউলে কুড়াশুটকি মাছ) খাওয়াতে হবে।
    ভিটামিন কে
    রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
    ভিটামিন কে প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (সবুজ শাকসবজি ও মাছের গুঁড়া)।
    ভিটামিন বি১
    পাডানা ও ঘাড়ে পক্ষাঘাত হয়। ঘাড়ের পক্ষাঘাতের ফলে ঘাড় পেছন দিকে করে আকাশের দিকে মুখ করে থাকেচলনে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়।
    ভিটামিন বি১ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান (চাউলের কুড়াগমের গুঁড়াশাক সবজি)
    ভিটামিন বি২
    ছানার পা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়। পরে নখ বা আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যায়। ছানার দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
    ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (সবুজ শাক সবজিছোলাখৈলআলফা-আলফাঈষ্ট)
    ভিটামিন বি৬
    ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। ছানার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। প্যারালাইসিস ও পেরোসিস হতে পারে।
    ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (শস্যমাছের গুঁড়াআলফা-আলফাঈষ্ট ইত্যাদি)
    ভিটামিন বি১২
    বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ডিমের উর্বরতা হ্রাস পায়।
    ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃতমাংস ফিসমিল ইত্যাদি)
    ফলিক এসিড
    রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও পালক কম গজায়।
    ফলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও সাথে ম্যানগানিজ (সহ) প্রদান করতে হবে। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত,ঈষ্ট)
    ম্যানটোথেনিক এসিড
    বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও চর্ম রোগ হয়। পা ও চোখের চারিপাশে নেক্রোসিস হয়। ডিমের উর্বরতা হ্রাস।
    প্যানটোথেনিক এসিড সমৃদ্ধ ভিটামিন প্রদান (চীনাবাদামআখের গুড়ঈষ্টচাউলের কুড়াগমের ভূষি ইত্যাদি)
    বায়োটিন
    পেরোসিসডিমের উর্বরতা হ্রাস ও চর্ম প্রদাহ দেখা দেয়।
    বায়োটিন সমৃদ্ধ ভিটামিন ও খাদ্য প্রদান।
    খনিজ পদার্থ (সোডিয়াম,ক্যালসিয়ামফসফরাস,পটাসিয়ামম্যাগনেসিয়াম,আয়োডিনম্যানগানিজ,কপার এন্ড কোবাল্ট,আয়রন
    হাড় গঠন ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ডিমের খোসা নরম হয়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। পেরোসিস ও প্যারালাইসিস হয়।
    পাখিকে নিয়মিত ভিটামিনখনিজ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও খাদ্য প্রদান করতে হবে।


    ১৮) খামারির কিছু জরুরি সতর্কতাঃ
    প্রত্যেক খামারি কেই কিছু জরুরি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, আর এগুলো যদি সঠিক ভাবে মেনে চলা হয় তাহলে, আশা করা যাই তিনি সফল ভাবে খামার পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। যেমনঃ
    a) অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহারের ৩ দিনের মধ্যে খেয়াল করবেন যে পায়খানার রঙ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা? যদি না হয় তাহলে ৩ দিন পর অন্য অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করতে হবে।
    b) অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহারের পর অবশ্যই probiotic দিতে হবে। তাহলে আবার ভাল ব্যাকটেরিয়া তৈরি হবে। আর পাতলা পায়খানা, সর্দি ইত্যাদির মত রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে।
    c) অধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করবেন না।
    d) চোখের রোগের জন্য কোন চোখের ড্রপ ৫ দিনের বেশি ব্যাবহার করবেন না।
    e) ভিটামিন বা কোন ঔষধ দলা বেঁধে গেলে আর ব্যাবহার করবেন না।
    f) ভিটামিন ব্যাবহারের পর যদি হলুদ ধরণের পায়খানা করে, তাহলে ওই ভিটামিন আর ব্যাবহার করবেন না।
    g) কবুতর বমি করলে omidon বা এই ধরনের ঔষধ বেশি ব্যাবহার করবেন না বা histasin ধরনের ঔষধ কখনও ব্যাবহার করবেন না।
    h) খামার ভিজা বা স্যাঁতসেঁতে রাখবেন না
    i) ঔষধের গায়ে লেখা নির্দেশনা মত ঔষধ ব্যাবহার করতে যাবেন না।
    j) কবুতর অসুস্থ হলে আগে চালের স্যালাইন দিবেন।
    k) ভিটামিন বা ঔষধ যেন রোদে না রাখা হয় সেটা খেয়াল রাখবেন। বা কোন ঔষধ বা ভিটামিন ১২ ঘণ্টার বেশি রাখবেন না।
    l) যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে নিজেকে দিয়ে বিচার করবেন।যেমনঃ অনেকেই ঠাণ্ডা লাগলে কবুতর কে অ্যান্টিবায়টিক দিতে বলেন।কিন্তু আমাদের জানামতে আমরা কখনও এক্ষেত্রে নিজেদের জন্য অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করি না।
    m) পানি অবশ্যই ফুটিয়ে দিবেন বা নলকূপের টা দিবেন বা ফিল্টার এর টা দিবেন।
    n) অনর্থক কবুতর কে ধরবেন না। বা ডিম চালার সময় বেশি নাড়ানাড়ি করবেন না এতে ডিমের ভিতরের লিগামেন্ট ছিড়ে যেতে পারে।
    পরিশেষে, আপনি আমার এই পর্যন্ত যত রোগ বালাই সম্পর্কিত যত পোস্ট আছে সেগুলো পড়েন আর সেই অনুযায়ী মানে চলেন। তাহলে আশা করে আপনার খামারে কোন অসুবিধা হবার সম্ভাবনা নেই। আর যদিও বা হয় তাহলে আশা করি আপনি নিজেই একজন বিজ্ঞ লোকের মত নির্ভয়ে তার চিকিৎসা করতে অসুবিধা হবার কথা না। আর এর জন্য চাই আপনার আত্মবিশ্বাস। আর সাধারণ কিছু জ্ঞান ও প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি। আপনি যদি এটা চিন্তা করেন যে এটা আমি পারব না তাহলে আর কখনও পারবেন না। আপনার যদি ইচ্ছে ও চেষ্টা থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ বাকিটুকু আল্লাহ করে দিবেন। আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন(আমীন)।

    কবুতর পালনে আর্থিক লাভঃ
    বাড়ির ছাদে বা ১০ ফুট ১০ ফুট ঘড়ে ২০ জোড়া উন্নত বা সৌখিন জাতের কবুতর পালনে প্রাথমিকভাবে ২০০,০০০/- টাকা বিনিয়োগ করে এক বসরে ৩০০,০০০/- টাকা লাভ করা যায়। তবে ৩০ জোড়া দেশী জাতের কবুতরের পালনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ১৫০০০/- টাকা বিনিয়োগ করে এক বসরে প্রায় ৫০,০০০/- টাকা লাভ করা যায়। পরবর্তীতে স্থায়ী খরচের (ঘরপানি পাত্রবালতিমগকবুতরের খোপদানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র ও গোসল করার পাত্র এবং কবুতর বসার স্ট্যান্ড) দরকার হয় না । ফলে পরবর্তীতে লাভ বেশী হয়।

    কবুতরের দর দামঃ
    বাজারে প্রতি জোড়া-
    • দেশি গোল্লা ০০ থেকে ০০
    • বোম্বাই গোল্লা ০০ থেকে এক হাজার
    • গিরিবাজ প্রজাতির মধ্যে সবুজ গোল্লা এক হাজার থেকে দুই হাজারগররা ১০০০ থেকে ১৫০০মুসলদম ৮০০ থেকে ১৫০০কালদম ১০০০থেকে ২৫০০বাগা ৮০০ থেকে  হাজার;
    ফেন্সি প্রজাতির-
    • লক্ষ্যা কবুতর  হাজার থেকে ৫০ হাজার
    • প্রিন্স ৫০০ থেকে  হাজার। 
    • কবুতরের মধ্যে হোমার প্রজাতির দাম সবচেয়ে বেশি। এ প্রজাতির মধ্যে সবজি ৩ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা, মাকসি ছয় থেকে আট হাজার,ব্ল্যাক হোমার  থেকে ৫ হাজার, রেড চেকার ১০ থেকে ১ হাজার, মিলি ১০ থেকে ২০ হাজার এবং হোয়াইট হোমার ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
    • বিউটি হোমা ৫ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা
    • পোটার ৫০০০ থেকে ২৫ হাজার
    • সিরাজী ৪০০০ থেকে ১০০০০
    • কিং ৬০০০ থেকে ১৫ হাজার
    • মডেনা ১০০০০ থেকে ৫০০০০
    • নান ৫০০০ থেকে ২০০০০ 
    • মল্টেস ১৫০০০ থেকে ২৫০০০ টাকা ।
    (বিঃ দ্রঃ – এই লিখা বা এর সব কথা টাই যে চূড়ান্ত টা নয়, আপনি এর থেকে আপনার মনের মত করে খামার গড়ে নিতে পারেন। এটি শুধুই একটি পথ নির্দেশনা মাত্র।)

    অন লাইনে কবুতর বিক্রি করতে চাইলে- 

    https://bikroy.com/bn/ads/bangladesh/pets-animals

    http://www.kroybikroy.com/index.php?page_id=9&cpage_id=2&category_id=18/

    http://www.clickbd.com/


    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !