বাজরিগারের ডিম পাড়া বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বাজরিগার ৮ মাস বয়সেই ব্রিডিং করার জন্য উপযুক্ত হলেও সুস্বাস্থ আর ভালো বাচ্চা পাওয়ার জন্য ব্রিডিং করানোর জন্য ১ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিৎ। কিছু কিছু স্ত্রী বাজেরিগার আছে যারা সঠিক সময় বা মেটিং না থাকলেও হরমোনের প্রভাবে নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল না করে অনবরত বংশবিস্তার করে যায়। এর ফলে এগ বাইন্ডিং, ডিমের ভেতরে বাচ্চা মারা যাওয়া, ফ্রেঞ্চ মল্টিং সহ নানা সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চা পালন করার কাজটা করে থাকে পুরুষ পাখি কিন্তু ডিম পাড়ার সিদ্ধান্তটা আসে স্ত্রী পাখির কাছ থেকে। তাই পাখির ডিম পাড়ার লক্ষণ , পাখির ডিম পাড়ার প্রভাবক বা কি কি বিষয় পাখিকে ডিম পাড়ায় উৎসাহিত করে এবং অসময়ে পাখি যদি ডিম পাড়তে চায় কিভাবে তা থেকে বিরত করা যায় তা জানা প্রয়োজন।
ডিম পাড়ার লক্ষন সমূহঃ
(১) সেয়ার (cere) এর রঙের পরিবর্তনঃ সেয়ার এর রঙ সাদা থেকে ধীরে ধীরে বাদামী রঙ্গে রূপান্তরিত হবে।
(২) আচার-আচরনে পরিবর্তনঃ শরীরে হরমোনের প্রভাবে সে আগ্রাসী ও স্থানাভাবাপন্ন হয়ে ঊঠবে। তার ভিতর সবসময় তার বাসাকে রক্ষার একটা প্রবনতা দেখা যাবে।
(৩) অতিরিক্ত চর্বণঃ প্রকৃতিতে স্ত্রী পাখি তার বাসা বড় এবং ফাঁপা বানানোর জন্য কামড়াতে থাকে এবং বাসা থেকে ময়লা ফেলে দেয়। আর খাঁচায় সে হাড়ির প্রবেশ পথ কামড়াতে থাকে এবং খাবারের বাটি থেকে খাবার ফেলে দিতে থাকে।
(৪) অন্ধকার আরামদায়ক স্থানে বেশি সময় কাটানোঃ সে কিছুটা অন্ধকার, আরামদায়ক জায়গায় বেশি সময় কাটাবে।
(৫) ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণঃ যে স্ত্রী পাখি খুব একটা বেশি মিনারেল ব্লক না ক্যাটলফিস বোন খায় না, সে একেবারে একটা পুরো খেয়ে শেষ করে ফেলবে ডিম পাড়ার আগে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করার জন্য।
ডিম পাড়ার জন্য প্রভাবক বিষয়সমূহঃ
১/ প্রকৃতিতে বর্ষাকালে যখন দিনের বেলায় আলো দীর্ঘ সময় ধরে থাকে তখন স্ত্রী পাখি বেশি সময় ধরে বাচ্চাদের জন্য খাবার খুঁজতে পারে এবং সেই সময়টাতেই সে ডিম পাড়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। খাঁচায়ও এই একই ঘটনা ঘটে।
২/ উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার তাদের ডিম পাড়ার প্রবৃত্তিকে প্রভাবিত করে।
৩/ ভালো কোন বাসা পেলে তারা ডিম পাড়ার জন্য উৎসাহিত বোধ করে।
৪/ ব্রিডিং এর জন্য নিরাপত্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই যখন স্ত্রী পাখিটি নিরাপদ বোধ করবে তখন সে ডিম পাড়ার জন্য আগ্রহী হবে।
৫/ মোল্টিং ( স্বাভাবিক ভাবে পাখির পালক ঝরে যাওয়া ) এর পর একটা স্ত্রী পাখি তার পূর্ণ শারীরিক ক্ষমতায় থাকে, এর সাথে সাথে তার ভিতর ব্রিডিং এর পূর্বলক্ষন গুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।
ব্রিডিং প্রতিরোধক ব্যবস্থাঃ অপরিণত বয়সে ব্রিডিং এড়াতে বা ঘন ঘন বাচ্চা দেয়া এড়াতে আপনাকে অবশ্যই পেয়ার বা জোড়া গুলোকে বিশ্রাম দিতে হবে। তাই অনাকাঙ্খিত ব্রিডিং এড়ানোর কিছু কিছু পদ্ধতি আছে যেমনঃ
(১) দিনের আলোক সময় কমিয়ে দেয়া। পাখির ঘরে পর্দার ব্যবস্থা থাকলে ভালো। এতে পর্দা টেনে দিয়ে পাখির ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেয়া যায়। দিন ছোট হলে স্ত্রী পাখি ডিম দিতে অনুৎসাহিত হবে।
(২) পাখিকে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার না দিয়ে শাক-সবজী, ফলমূল ইত্যাদি খাবার বেশি দিতে হবে।
(৩) পাখির থাকার জায়গা/পরিবেশ পরিবর্তন করাটাও একটা সহজ পদ্ধতি। যেমন পাখির খাঁচার বসার কাঠি গুলো বদলে দেয়া, খাঁচায় নতুন কোন খেলনা দেয়া, বা খাঁচা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া ইত্যাদি। নতুন পরিবেশে গেলে পাখি থিতু না হওয়া পর্যন্ত ব্রিডিং অবস্থায় আসবে না। সোজা কথা হল তার পরিচিত পরিবেশ পাল্টে দিতে হবে।
(৪) স্ত্রী-পুরুষ আলাদা করে রাখা হল আরেকটি সহজ পদ্ধতি। তার পরেও কিছু কিছু স্ত্রী পাখি ডিম দিয়ে দিতে পারে, সেক্ষেত্রে সেগুলো ফেলে দিতে হবে। কারন সেগুলো থেকে বাচ্চা ফুটবে না।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.