সাবমেরিন বা ডুবো জাহাজের কাহিনী
জাহাজ বলতে শুধু পানির ওপর ভেসে বেড়ানো প্রকাণ্ড বাহনকেই বোঝায় না। পানিতে ডুবে ডুবেও চলতে পারে এই বাহন। আর তখন তার নাম বদলে হয়ে যায় ডুবোজাহাজ বা সাবমেরিন।
বিশেষ পদ্ধতির এই জাহাজ তৈরির কৌশল কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। কয়েকশ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর আজকের আধুনিক সাবমেরিন যুগে আসছে। বর্তমানে সাবমেরিন দিয়ে শত্রু বাহিনীর জাহাজ কিংবা ডুবোজাহাজ আক্রমণ মোকাবিলা, বিমানবাহী জাহাজ বহর রক্ষা, অবরোধ দূরীকরণ, প্রচলিত স্থল আক্রমণ ও বিশেষ বাহিনীকে গুপ্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তাই প্রতিটি সাবমেরিনের আর্থিক মূল্যও অনেক বেশি। কিন্তু তাতে কী, প্রমোদবিহারেও ব্যবহার হয় এই বিলাসবহুল যানটি। সাবমেরিনের বিস্তারিত নিয়ে আজকের রকমারি।
সাবমেরিন
দৈত্যাকার শরীর নিয়ে পানির নিচে দিব্যি ঘুরে বেড়াতে পারে কে আর, সে তো নীল তিমিই। কিন্তু না, তার চেয়ে কোনো অংশে কম যায় না পানির নিচের দৈত্য-খ্যাত সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ। নিজের পেটের ভিতর অনেক মানুষ ঢুকিয়ে সাগর সাঁতরে বেড়ায়। বহনকারী মানুষগুলোর জন্য খাবার পানি, আয়েশের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়েই সমুদ্র দাপিয়ে বেড়ায়। শুধু কি তাই, হাজারো যন্ত্রপাতিতে ভর্তি এই সাবমেরিন। কিন্তু এই সাবমেরিনটি আসলে কী? এটি এক ধরনের জাহাজ। তবে পানির ওপর ভেসে বেড়ানো যে জাহাজগুলো দেখা যায় এটি তেমন নয়। পানিতে ভেসে থাকা জাহাজকে দেখে মনে হতে পারে হঠাৎ ফুটো হয়ে টুপ করে ডুবে যেতে পারে। কিন্তু সাবমেরিন দেখে তা ভাবার অবকাশ নেই। কারণ সে সবসময় ডুবেই থাকে। নীল তিমির পাখা ভাসিয়ে সাগরে চলার মতো করে শুধু একটি নিশানা উঁচিয়ে সাবমেরিনও পানির নিচে থাকে। এ হলো মোটামুটি সাবমেরিনের পরিচিতি। এখন আসা যাক ‘সাবমেরিন’ শব্দটির অর্থ উদ্ধারে। মূলত ইংরেজি এই শব্দের অর্থই ‘সাগরের তলদেশ’। প্রথমে এটি তৈরি হয়েছিল যুদ্ধ করার জন্য। পানির নিচে ডুবে থেকে সাবমেরিন বোমা মেরে উড়িয়ে দিত শত্রুপক্ষের জাহাজ। তবে আজকাল অবশ্য সাবমেরিনকে শুধু যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে না। সব ভালো কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। সমুদ্রে ডুবে যাওয়া কোনো জাহাজ বা অন্য কিছু খোঁজা, সমুদ্রের নিচের কোনো পাইপ বা ক্যাবল মেরামত করা, পানির নিচে কোনো গবেষণার কাজে, এমনকি পানির নিচে ঘুরে বেড়াতেও আজকাল সাবমেরিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
শুরুর গল্প
সাবমেরিন সর্বপ্রথম তৈরি করা হয় ১৭৭৫ সালে। তবে সেটি ছিল খুবই নিম্নমানের। অনেকেরই ধারণা, প্রথম ডুবোজাহাজের ধারণা দেন জুল ভার্ন। বস্তুত জুল ভার্নেরও কয়েকশ বছর আগে মানুষ ডুবোজাহাজ বানানোর চেষ্টা করেছে। এমন কথাও প্রচলিত আছে, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকেই এক ধরনের জাহাজ বানিয়েছিলেন, যেগুলো পানিতে ডুবে চলতে পারত। ১৫৭৮ সালে ডুবোজাহাজ বানানোর চিন্তা মাথায় আসে উইলিয়াম বর্ন নামের এক ইংরেজ লোকের। তবে সে চিন্তা শেষ পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। কর্নেলিয়াস ড্রেবেল নামে এক ডাচ লোকের হাত ধরেই ১৬২০ সালে পানিতে ডুব দেয় পৃথিবীর প্রথম ডুবোজাহাজ। ড্রেবেলস সাবমেরিন নামে পরিচিত ডুবোজাহাজটি ছিল কাঠের তৈরি। চালাতে হতো দাঁড় বেয়ে। ভিতরে থাকা মাঝিদের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য কয়েকটি আলাদা টিউব বা নল ছিল, সেগুলো পানির ওপরে ভেসে থাকত। ডুবোজাহাজটিকে প্রথম পানিতে নামানোও হয় বেশ ঘটা করে। সেই ঐতিহাসিক দৃশ্যের সাক্ষী হতে সেদিন টেমস নদীর তীরে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো লন্ডনবাসী। তারপর ড্রেবেল তার সঙ্গীসাথী ও মাঝিদের নিয়ে ডুবোজাহাজে করে পানির নিচে ডুব দিয়েছিলেন প্রায় তিন ঘণ্টা।
ব্যর্থ প্রথম সামরিক সাবমেরিন
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে থাকতেন পেশায় কাঠমিস্ত্রি ইয়েফিম নিকোনোভ। তার মাথায় এলো সামরিক ডুবোজাহাজ তৈরির ভাবনা। নাম দিয়েছিলেন ‘গোপন নৌযান’। তার চিন্তা ছিল, একটি জাহাজ বানাবেন, যেটি পানির নিচে ডুবে চলতে পারবে এবং শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে তার ভিতরে থাকবে আস্ত কামান। ১৭১৮ সালে তিনি রাশিয়ার জার (সম্রাট) পিটার দ্য গ্রেটের কাছে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন। জারের অনুমতি পেয়ে নিকোনোভ ১৭২১ সালে যে মডেল দাঁড় করেন সেটি শত্রুদের উদ্দেশে আগুন আর বিস্ফোরক ছুড়তে পারত। এমনকি তাতে এয়ারলক সিস্টেমও ছিল, যাতে প্রয়োজনে পানির নিচে থাকতে থাকতেই ডুবোজাহাজ থেকে দু-একজন বেরোতে-ঢুকতে পারে। সম্রাটের উপস্থিতিতে সেটিকে পরীক্ষামূলকভাবে পানিতে নামানো হলো। মডেল দেখে জারের মুগ্ধতা অর্জন করা গেলেও ১৭২৪, ২৫ এবং ২৭ সালে তিন দফায় আসল ডুবোজাহাজ পানিতে নামালে চূড়ান্ত রকম ব্যর্থ হয়। এর ফলে সরকারি টাকার অপব্যবহারের দায়ে দোষী করে আবার কাঠমিস্ত্রির কাজে নিকোনোভকে ফেরত পাঠানো হয়। পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভলগা নদীর তীরের এক জাহাজ কারখানায়।
সফলতা আঠারো শতকে
প্রথম সফল সামরিক ডুবোজাহাজটি ব্যবহৃত হয় ১৭৭৫ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে। ডুবোজাহাজটির নকশা করেন ডেভিড বুশনেল নামের এক মার্কিন উদ্ভাবক। পানিতে ডুব দিলে ডুবোজাহাজটি একটি বড়সড় কাছিমের মতো দেখাত। তাই হয়তো নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দ্য টার্টল’। আকারে খুব বেশি বড় ছিল না। ডুবোজাহাজটিতে চড়তে পারত মাত্র একজন। হাত দিয়ে চালাতে হতো। তবে ওটার বড় সুবিধা ছিল, পানির নিচে যে কোনো দিকেই চালানো যেত। সর্বোচ্চ গতিসীমা ছিল ঘণ্টায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। ডুবোজাহাজটির নিচের দিকে একটি ট্যাংক ছিল। ডুব দেওয়ার জন্য সেই ট্যাংকে পানি ঢুকিয়ে নিতে হতো। আবার ভেসে ওঠার জন্য হাতে চালানো পাম্প দিয়ে সেই ট্যাংকের পানি বের করতে হতো। আর ডুবোজাহাজটির ভিতর যে পরিমাণ বাতাস জমা করা যেত, তা দিয়ে একজন অনায়াসে পানির নিচে আধা ঘণ্টা থাকতে পারত।
বাংলাদেশও সাবমেরিন যুগে
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার আয়তন প্রায় আরেকটি বাংলাদেশের সমান। এ সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকার চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছে। সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে এক একটি সাবমেরিন ১০টি ভাসমান যুদ্ধজাহাজের সমান বলে গণ্য করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশকে চীন সাবমেরিন দুটি হস্তান্তর করে। সাবমেরিন দুটির নাম বনৌজা নবযাত্রা এবং বনৌজা জয়যাত্রা। এ ধরনের সাবমেরিন যে কোনো নৌবাহিনীর জন্য বড় এক সম্পদ। কারণ এ সাবমেরিন দিয়ে শত্রুপক্ষের উপকূলভাগের একেবারে কাছে যাওয়া যায়। এমনকি যে কোনো জাহাজের কাছাকাছি যেতে পারে এবং যে কোনো দেশের তীরের কাছেও যেতে পারে। সাবমেরিন দুটি থেকে মিসাইল মারা নিক্ষেপ ও মাইন স্থাপন করা যায়। এ দুটি সাবমেরিনকে সহজেই যুদ্ধজাহাজ থেকে শনাক্ত করা যাবে না। সাবমেরিন দুটির দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার ও প্রস্থ ৭ দশমিক ৬ মিটার। সাবমেরিন দুটি চলে ডিজেল ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে। এ ধরনের একটি সাবমেরিনের অবস্থান জানতে প্রায় ১০টা জাহাজ লাগে।
শক্তিশালী প্রিন্স ভ্লাদিমির
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সাবমেরিন ‘প্রিন্স ভ্লাদিমির’। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ‘বোরেই-২’ শ্রেণির এই ব্যালাস্টিক মিসাইল সাবমেরিনটি এখন পর্যন্ত তৈরি হওয়া সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও ধ্বংসাত্মক। রাশিয়ার এই সাবমেরিনটি বুলাভা আরএসএম-৫৬ সজ্জিত ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইলে। প্রায় ছয় হাজার মাইল বা ৯ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরের কোনো লক্ষ্যবস্তুকে নিমেষেই শেষ করে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে ২০টি পরমাণু অস্ত্র ছুড়ে লক্ষ্যবস্তুকে ধূলিসাৎ করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে এই সাবমেরিনটির। সাবমেরিনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, খুব শক্তিশালী রাডারের সাহায্যেও এটিকে খুঁজতে বেগ পেতে হবে শত্রুপক্ষের। রাডারের চোখ এড়াতে সমুদ্রের প্রায় ৪০০ মিটার গভীরেও অবাধে চলতে পারে এই প্রিন্স ভ্লাদিমির। উত্তর রাশিয়ার স্যাভমেশ শিপইয়ার্ডে সাবমেরিনটি তৈরি হয়েছে। প্রজেক্টির ডেভেলপার ছিল রুবিন ডিজাইন ব্যুরো এবং সাবমেরিনটির চিফ ডিজাইনার ছিলেন সারজে কোভালেভ।
কত রকমের সাবমেরিন
হাইপার-সাব
সাবমেরিনের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে হাইপার-সাব নামের সাবমেরিন। এর সৌন্দর্যে অভিভূত সবাই। এর দামটাও নেহায়েতই কম নয়, ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার! বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ২৫ কোটি টাকারও বেশি। সুন্দর এ সাবমেরিনটির ডিজাইন করেছে মেরিওন এইচএসপিডি। সাবমেরিনটির দৈর্ঘ্য ৩১ ফুট। এতে রয়েছে বায়ু আর পানি নিরোধক কেবিন। এটি সর্বোচ্চ ৪০ নট গতিতে চলতে পারে। যেতে পারে সর্বোচ্চ ২৫০ ফুট পর্যন্ত পানির গভীরে।
ইয়োলো সাব
সাবমেরিনের মতো কোনো যান্ত্রিক জলহস্তীও যে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হতে পারে তা হয়তো সাধারণ মানুষের জানা নেই। তবে ইয়োলো সাবমেরিনটিকে বলা হয় ব্যক্তিগত সাবমেরিন। যারা শখের বশে সাগরতলে ঘুরতে যান, তাদের কথা মাথায় রেখে হলদে রঙের এই সাবমেরিনটি বানানো হয়েছে। তাই একে প্রমোদ সাবমেরিন বললেও ভুল হবে না। হাইপার-সাব থেকে এর দাম কিছুটা কম, তবে তা-ও নেহায়েত কম নয়। ২০ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ১৫ কোটি টাকা প্রায়।
ইজি ও কমপ্যাক্ট সেমি-সাবমেরিন
ইজি ও কমপ্যাক্ট সেমি সাবমেরিনটি দেখতে বেশ নজরকাড়া। নাম সাবমেরিন হলেও এটিকে পুরোপুরি সাবমেরিন বলা যায় না। এটি মূলত সেমি-সাবমেরিন। অর্থাৎ সাবমেরিনের সব বৈশিষ্ট্য না থাকলেও অধিকাংশের উপস্থিতি রয়েছে এতে।
সিব্রিচার-এক্স
সাগরের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণী হিসেবে পরিচিত হাঙ্গর। কিন্তু তার পিলে যদি চমকে দেওয়া যেত, কেমন হতো? অবশ্য এমন ধারণা থেকেই তৈরি করা হয়েছে সিব্রিচার-এক্স। এটি দেখতে পুরোপুরি সত্যিকার হাঙ্গরের মতো। এই হাঙ্গরের পেটের ভিতর বসে থেকে সাগরের অসীম সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। হাঙ্গররূপী এই সাবমেরিনের রয়েছে শক্তিশালী একটি ইঞ্জিন, যা দিয়ে এটি পানির ওপর প্রায় ৫০ মাইল এবং পানির নিচে প্রায় ২৪ মাইল বেগে চলতে পারে।
নটিলাস
প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রে ভ্রমণ করতে যেতে চাওয়া অমূলক কোনো শখ নয় নিশ্চয়। সাগরেই যখন যাবেন তখন ‘নটিলাস ভিএএস লাক্সারি সাবমার্সিবল’ নামের সাবমেরিনে করে ঘুরে আসতে পারেন। সাগরতলে ভ্রমণের জন্য এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতেই পারে না। দেখতে কিছুটা সিলিন্ডার আকৃতির সাবমেরিনটির ভিতরে রয়েছে আরাম আয়েশের দারুণ সব ব্যবস্থা। এমনকি গানও শোনা যায়। এর দাম প্রায় ২০ কোটি টাকা।
পারমাণবিক ডুবোজাহাজ
পারমাণবিক চুল্লিতে উৎপাদিত শক্তি দিয়ে পরিচালিত ডুবোজাহাজকে পারমাণবিক ডুবোজাহাজ বা পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ বলা হয়। ডিজেল-তড়িৎ ইঞ্জিনে চালিত ডুবোজাহাজের তুলনায় পারমাণবিক ডুবোজাহাজের অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন, পারমাণবিক ডুবোজাহাজ চালাতে বায়ুর দরকার নেই। ফলে ঘন ঘন সমুদ্রপৃষ্ঠে ফিরে আসতে হয় না। দীর্ঘ সময় দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া এসব ডুবোজাহাজে ঘন ঘন জ্বালানি সরবরাহেরও দরকার নেই। বর্তমানে প্রচলিত পারমাণবিক ডুবোজাহাজগুলো জ্বালানি পুনঃসরবরাহ না করেও ২৫ বছর ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারে। তবে পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজের উচ্চমূল্যের কারণে অল্প কয়েকটি দেশের নৌবাহিনীতেই এমন ডুবোজাহাজ রয়েছে।
সাবমেরিন তথ্য
—সাবমেরিন পানিতে ভাসে, আবার নিচে চলে যায়। এটি মূলত কাজ করে প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের ব্যালাস্ট ট্যাংক থিওরির ওপর ভিত্তি করে। কোনো বস্তুকে পানিতে ডুবালে তা নিজের আয়তনের সমপরিমাণ পানি অপসারিত করবে। অর্থাৎ অপসারিত পানির ভরের চেয়ে ডোবানো জিনিসটি যদি হালকা হয় তবে তা ভেসে থাকতে পারে। যেমন খালি প্লাস্টিকের বোতলে বাতাস ভরে পানিতে ছেড়ে দিলে বোলতটি ভেসে থাকবে। আবার পানি ভরে দিলে বোতলটি ভারী হয়ে ডুবে যাবে। কিন্তু অর্ধেক বাতাস বোতলে রাখা হলে সেটি অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় ভেসে থাকবে। এই সূত্র অবলম্বন করে সাবমেরিন পরিচালিত হয়। সাবমেরিনে কিছু ব্যালাস্ট ট্যাংকার থাকে। ট্যাংকারগুলোর ভিতর যন্ত্রের সাহায্যে পানি ও বাতাস ঢুকানো হয়।
— যখন সাবমেরিন ডুবানোর দরকার হয় ব্যালাস্ট ট্যাংকারে পানি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আবার ভাসানোর দরকার হলে ব্যালাস্ট ট্যাংকারের পানি বের করে যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত বাতাস ঢুকানো হয়। ফলে সাবমেরিন পানির ওপরে ভেসে ওঠে।
— সাবমেরিনের ভিতরে অথবা বাইরে চাপের কোনো পরিবর্তন হয় না। কারণ এতে উন্নত মানের স্টিল, টাইটেনিয়ামের মতো ধাতু ব্যবহার করা হয়।
— সাবমেরিনের ভিতরে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হয়।
— বর্তমানের মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন সবচেয়ে বেশি চাপ নিতে সক্ষম।
— মজুদ জ্বালানি ও ক্রুদের খাদ্যের ওপর নির্ভর করে সাবমেরিন কত দিন পানির নিচে থাকবে।
— ডিজেল সাবমেরিন কিছুদিন পরপরই জ্বালানি নিতে ওপরে আসে। তবে পারমাণবিক সাবমেরিন একটানা ২৫ বছরের বেশি সময় পানির নিচে থাকতে পারে।
— বর্তমানে সাবমেরিনগুলো প্রায় ৪৫০০ ফুট গভীর পর্যন্ত যেতে পারে! ঘণ্টায় গতি থাকে ৪৯ থেকে ৫২ মাইল।
— বর্তমানে উল্লেখযোগ্য মিলিটারি সাবমেরিনের মধ্যে রয়েছে— ক্রুশ মিসাইল, নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড, ব্যালাস্টিক মিসাইল সাবমেরিন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.