সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    গোপালগঞ্জ জেলার নাম করণের ইতিহাস

    সেই গোপালগঞ্জ এই গোপালগঞ্জ


    এক সময়ের রাজগঞ্জ এখন গোপালগঞ্জ। কলকাতার জ্ঞানবাজার নিবাসী প্রীতিরাম দাস ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে অনুর্বর অসমতল মকিমপুর পরগনা (বর্তমান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার অধীন) জমিদারি ১৯ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। তার দ্বিতীয় ছেলে রাজচন্দ্র দাস ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ এপ্রিল মাহিষ্য বংশীয় মেয়ে রাসমনিকে বিয়ে করেন। স্ত্রী রানী রাসমনি ও বিবাহিত তিন মেয়েকে রেখে ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মারা যান জমিদার রাজচন্দ্র। জমিদার রাজচন্দ্র ও রাসমনির কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। চার মেয়ের মধ্যে প্রথম মেয়ে পদ্মমণির বিয়ে হয় রামচন্দ্রের সঙ্গে। তাদের মহেন্দ্র নাথ, গণেশচন্দ্র, সৌদামিনী, সুভদ্রা, বলরাম, কালী ও সতীনাথ নামে সাত সন্তানের জন্ম হয়। প্রথম ছেলে মহেন্দ্র নাথ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে জীবিত বয়োজ্যেষ্ঠ ছেলে গণেশ জমিদার হন। খাটরা এস্টেটের প্রজারা রানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খাটরা এস্টেটের রাজগঞ্জ বাজারের নাম বদল করে রানীর নাতি তথা গণেশের একমাত্র ছেলে নবগোপালের নামানুসারে রাখতে চান। নবগোপালের নামের গোপাল ও রাজগঞ্জের গঞ্জ এই মিলিয়ে গোপালগঞ্জ নামকরণ করা হয়। 

    সময়ের পরিক্রমায় গোপালগঞ্জ এখন বদলে যাচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়। গোপালগঞ্জ ছিল চারদিক থেকে নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপের মতো। এলাকার মানুষের যোগাযোগ ও যাতায়াতের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা ও লঞ্চ। গত শতাব্দীর আশির দশকে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কে প্রথম কিছু যানবাহন চলাচল শুরু করে।

    এখন এ জেলায় নৌকা ও লঞ্চ চলাচল নেই বললেই চলে। গোপালগঞ্জের সঙ্গে সারা দেশের আধুনিক বাস যোগাযোগ শুরু হয়েছে। গোপালগঞ্জ এখন শিক্ষাক্ষেত্রেও অনেক এগিয়েছে।সরকার এ জেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব চক্ষু ইনস্টিটিউট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক মানের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বিসিক শিল্পপার্ক, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, পিটিআই, গোপালগঞ্জ মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, প্রাণিসম্পদ ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প (বাপার্ড), জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা শিশু একাডেমি, পাসপোর্ট অফিস, জেলা সার্ভার স্টেশন, আবহাওয়া অফিস, ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্ট, রেললাইনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করেছে। এ ছাড়া শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সরকারি ওষুধ কোম্পানি ইডিসিএল তৃতীয় প্রকল্প, শেখ লুত্ফর রহমান ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামোতে। এখন কোনো গ্রাম নেই। সব এখন শহর হয়ে গেছে। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। আছে ডিশ লাইন। সবার হাতে স্মার্টফোন। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের কারণে মানুষের বেকারত্ব কমেছে। এখন সবাই বলতে গেলে সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করছে। একসময় এখানকার মানুষ বেশির ভাগ বসবাস করত টিনের ঘরে। এখন গ্রামেগঞ্জে সব মানুষ মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং নির্মাণ করছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই গোপালগঞ্জ এখন একটি অগ্রসরমান জেলা। 

    এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিদিন তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আসেন।এখানে অনেকেই এখন ব্যক্তি উদ্যোগে শিল্প-কলকারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এসব বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে গোপালগঞ্জের মানুষের ভাগ্য।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !