সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    যেভাবে নামকরণ হয় বাংলাদেশের



    বাংলাদেশ নামের পেছনে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। কীভাবে এ দেশের নাম বাংলাদেশ রাখা হল-এ বিষয়টিকে ইতিহাসের কয়েকটি পরিক্রমায় ভাগ করে বিশ্লেষণ করেন ইতিহাসবিদরা।
    ১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে বাংলা। এর পর স্বাধীন দেশের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে দেশ। এই দুটি ইতিহাস ও সংগ্রামকে এক করে 'বাংলাদেশ' নামকরণ করা হয়।
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনও বাংলাদেশ শব্দের উৎপত্তিগত ব্যাখ্যা দেন।
    তার মতে, আর্যরা বঙ্গ বলে এই অঞ্চলকে অভিহিত করত। বাংলা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত শব্দ বঙ্গ থেকে। খবর বিবিসির।
    তবে বঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানরা বঙ্গ শব্দটির সঙ্গে ফার্সি আল প্রত্যয় যোগ করে। এতে নাম দাঁড়ায় 'বাঙাল' বা বাঙ্গালাহ। জমির বিভক্তি বা নদীর ওপর বাঁধ দেয়াকে আল বলা হয়।
    সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ইতিহাসবিদ আবুল ফজলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মুসলমান শাসনামলে বিশেষ করে ১৩৩৬ থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি আমলে এবং ১৫৭৬ সালে মোগলরা বাংলা দখল করার পর এ অঞ্চলটি বাঙাল বা বাঙ্গালাহ নামেই পরিচিতি পায়।
    তবে বাংলা, বাঙাল বা দেশ-এই তিনটি শব্দের কোনোটিই বাংলা শব্দ নয়। এগুলো ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে।
    এর পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজা বাংলাকে বিভিন্ন নাম দেন। শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাও বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের মতো কয়েকটি প্রেসিডেন্সি নিয়ে নাম দিয়েছিলেন বঙ্গ।
    ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের নাম হয় বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি। এর পর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় গোটা বাংলায় একটি প্রশাসনিক বিভাজন হয়। বাংলার পশ্চিম অংশ হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব অংশ হয়ে যায় পূর্ববাংলা।
    ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর ১৯৪৭ সালে বঙ্গপ্রদেশ ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত হল। সেই সময় পাকিস্তানিরা পূর্ববাংলার নাম দিতে চাইল পূর্ব পাকিস্তান।
    কিন্তু এ নিয়ে সেই সময় থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলা।
    এর পর ১৯৫৭ সালে করাচিতে পাকিস্তানের গণপরিষদের তরুণ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা দেয়ার সময় 'পূর্ব পাকিস্তান' নামটির প্রতিবাদ করে বলেন, পূর্ববাংলা নামের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে।
    'আর যদি পূর্ব পাকিস্তান নাম রাখতেই হয়, তা হলে বাংলার মানুষের জনমত যাচাই করতে হবে। তারা নামের এই পরিবর্তন মেনে নেবে কিনা-সে জন্য গণভোট নিতে হবে।'
    তার পর ১৯৬২ সালে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে নিউক্লিয়াস নামে ছাত্রলীগের একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা পায়। যারা স্বাধীনতার পক্ষে চিন্তাভাবনা করত। তারা এই অঞ্চলকে বলতেন-স্বাধীন পূর্ববাংলা। এর পর ১৯৬৯ সালে শুরু হয় আইয়ুব পতন আন্দোলন। সেই সময় গণঅভ্যুত্থানে স্লোগান দেয়া হয় 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।'
    ইতিহাস অনুযায়ী-ওই প্রথম পূর্ববাংলাকে 'বাংলাদেশ' নামে অভিহিত করা হয়। পরে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন-'আমাদের স্বাধীন দেশটির নাম হবে বাংলাদেশ'।
    আওয়ামী লীগের নেতারা ওই বৈঠকে বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করেন। পরে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নামটি প্রস্তাব করলে তাতে সবাই একবাক্যে সায় দেন।
    এই নাম দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন-১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে- বাংলা। এর পর স্বাধীন দেশের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে- দেশ। এই দুটি ইতিহাস ও সংগ্রামকে এক করে 'বাংলাদেশ' নামকরণ করা হয়।
    এর পরও নথিপত্রগুলোয় পূর্ব পাকিস্তান লিখতে হলেও কেউ মুখে পূর্ব পাকিস্তান উচ্চারণ করতেন না। সবাই বলতেন বাংলাদেশ।
    সেই থেকে এই দেশকে আর কেউ পূর্ব পাকিস্তান বলেনি। সবাই বাংলাদেশ হিসেবেই মনে-প্রাণে স্বীকৃতি দিয়েছিল বলে জানান ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। মুজিবনগর সরকার স্বাধীনতার যে ঘোষণা প্রচার করে, তাতেও বলা হয়- এই দেশটির নাম হল 'বাংলাদেশ'।
    ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর যখন প্রথম সংবিধান প্রণীত ও গৃহীত হয়, সেই সময়ও দেশটির সাংবিধানিক নাম দেয়া হয় 'বাংলাদেশ'।
    উনিশ শতকের সাহিত্যে অবিভক্ত বাংলাকে বলা হতো- বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশ। বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যে বঙ্গদেশ শব্দের উল্লেখ আছে। কাজী নজরুল ইসলাম তিরিশের দশকে তার কবিতায় বাংলাদেশ নামটি ব্যবহার করেছেন। আবার সত্যজিতের চলচ্চিত্রেও উচ্চরিত হয়েছে বাংলাদেশ নামটি। অন্যদিকে জীবনানন্দ দাস বলেছেন- রূপসী বাংলা আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাকে আখ্যায়িত করেছেন সোনার বাংলা বলে।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !