জাপানের ঋণে ঢাকায় হচ্ছে পাতাল রেল, চলছে নকশার কাজ
ঢাকায় দেশের প্রথম পাতাল রেল লাইন নির্মাণে ঋণ সহায়তা দিতে সম্মতি দিয়েছে জাপান। ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) প্রকল্পের দুটি অংশের মাধ্যমে ঢাকায় মোট ২৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার পাতালরেল লাইন নির্মাণ করা হবে।
ওই রেললাইনের নকশা তৈরির কাজ চলছে বলে প্রকল্প পরিচালক মো. সাইদুল হক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে জাপান রাজি হয়েছে। এটা অনেক বড় প্রকল্প। বর্তমানে এ প্রকল্পের নকশার কাজ চলছে।’ আগামী জুনে অর্থায়ন নিয়ে জাপানের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার পর এ বছরের মধ্যেই প্রকল্পের টেন্ডারের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জাপান অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শহীদুল ইসলাম বলেন, আগামী জুনেই জাইকার সঙ্গে ৪০তম ঋণ প্যাকেজের চূড়ান্ত চুক্তি হতে পারে। এই চুক্তির আওতায় আড়াই বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। ওই অর্থ পাঁচটি প্রকল্পে ব্যয় করা হবে, যার মধ্যে এমআরটি-১ রয়েছে।
জাপানের এই অর্থ সহায়তা অতীতের যে কোনো অর্থবছরে দেয়া অর্থের চেয়ে বেশি। সহজ শর্তে দেয়া এই ঋণের জন্য মাত্র দশমিক ৯৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। জাইকা নতুন এই ঋণ প্যাকেজে এমআরটি-১ প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে বলে জানিয়েছেন ইআরডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর আগে ২০১৭ সালে জাইকার ৩৮তম লোন প্যাকেজে এ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে ৫৫৯ কোটি ইয়েন ঋণ দেয়া হয়। তা দিয়ে এই প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়।
প্রকল্পের একটি অংশ হচ্ছে- বিমানবন্দর রুট। এটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ থেকে খিলক্ষেত-যমুনা ফিউচার পার্ক-নতুন বাজার-উত্তর বাড্ডা-বাড্ডা-হাতিরঝিল-রামপুরা-মালিবাগ-রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর যাবে। এই রেলপথ হবে ১৬ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ। পাতালরেলের দ্বিতীয় অংশটি হবে পূর্বাচল রুট। এটি নতুন বাজার থেকে শুরু হয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক-বসুন্ধরা-পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি-মাস্তুল-পূর্বাচল-পশ্চিম পূর্বাচল-সেন্টার পূর্বাচল হয়ে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত হবে। এই রুটের দৈর্ঘ্য হবে ১০ দশমিক ২০ কিলোমিটার। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে ইআরডির যুগ্ম সচিব আবদুল বাকী বলেন, পাতাল রেল নির্মাণের পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই এ প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। ‘শিগগির’ এ প্রকল্পের ডিপিপি চূড়ান্ত হবে। তখন চূড়ান্ত ব্যয় প্রাক্কলন পাওয়া যাবে। গত বছর আগস্টে জাইকার একটি সমীক্ষায় এমআরটি-১ প্রকল্পের ব্যয় হিসেবে আনুমানিক ৪৯১ কোটি ডলারের হিসাব দেয়া হয়। এতে প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ৪০তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় এমআরটি-১ প্রকল্পের এক বছরের ব্যয় মেটানো হবে। বাকি অর্থায়নের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে যুগ্ম সচিব আবদুল বাকী বলেন, ‘বাংলাদেশে এ পর্যন্ত জাপান যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন শুরু করে তাতে শেষ করে থাকে। তবে ম্যাচিং ফান্ড হিসেবে কিছু অর্থায়ন সরকারি তহবিল থেকে করা হয়।’ এমআরটি-১ প্রকল্প ছাড়া জাইকার সঙ্গে ৪০তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় বাকি প্রকল্পগুলো হল- মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক প্রকল্প এবং জ্বালানি দক্ষতা ও সুরক্ষা সহায়ক প্রকল্প।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.