মাথার কাছে নীরব ঘাতক: সাবধান বাংলাদেশ
আলো-আঁধারি রুম। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা আর সুন্দর পরিপাটি বিছানা- এই তো ঘুমানোর আদর্শ স্থান। কিন্তু আরামদায়ক এই বিছানাতেই যে নীরব ঘাতক ঘাপটি মেরে আছে, সেটা হয়তো কেউ বুঝতেই পারে না। এটি এমন এক ঘাতক যা শারীরিক এবং মানসিক দুই স্বাস্থেরই ক্ষতি করছে। স্মার্টফোন। হাতে হাতে স্মার্টফোন থাকার কারণে অনেকেই ঘুমানোর আগে ফেসবুকে পোস্ট কিংবা ইনস্ট্রাগ্রামে নিউজ ফিডে চোখ বুলাতে থাকেন। এক সময় তা নিজের বালিশের নিচে বা মাথার কাছে রেখেই ঘুম। কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না, মোবাইল ফোন বালিশের নিচে কিংবা মাথার কাছে ঘুমানোর কাছাকাছি কোনো স্থানে রাখা কতটা বিপজ্জনক! গবেষকরা বলছেন, মোবাইল ফোন থেকে বের হওয়া রেডিয়েশন মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে এবং প্রচন্ড মাথাব্যথা, মাংসপেশি ব্যথা কিংবা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা অনুভব হতে পারে। মোবাইল থেকে বের হওয়া ৯০০ মেগা হার্জেল পরিমাণ রেডিয়েশন শরীরের কার্যকারিতা নষ্ট করার সংকেত প্রদান করে। মোবাইল ফোন থেকে বের হওয়া রেডিয়েশনের সঙ্গে শরীরের কার্যকারিতার একটা যোগসূত্র রয়েছে। এটা শরীরের সব ধরনের উর্বরতা কমিয়ে দেয়। মোবাইল ফোন থেকে বের হওয়া নীল রঙের রশ্মি ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। কারণ এই রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেকটা দিনের আলোর মতোই, এ কারণে মনে হয় আমরা দিনের আলোতেই ঘুমাচ্ছি। শুধু তাই নয়, বিশেষ করে শিশুদের জন্য এই সম্টার্ট ফোনটি হয়ে ওঠে অনিরাপদ বস্তু। কেউ বুঝতেই পারে না চোখের সামনেই শিশুদের কত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন নিজের কাছ থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে রাখতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোনের সুইচ বন্ধ রাখা অথবা এরোপ্লেন মুডে রাখা জরুরি। অনেকে মোবাইল ফোনেই অ্যালার্ম দিয়ে নিজের পাশে রেখে ঘুমান। কিন্তু যখন আপনি জানছেন এটা আপনার জন্য ক্ষতিকর তখন সত্যিকারের অ্যালার্ম ঘড়ি রাখুন।
কেউ কেউ আবার ঘুমানোর আগে প্রিন্টের চাইতে ই-বুক পড়তে পছন্দ করেন । শরীর ও মন সুস্থ রাখতে ঘুমানোর আগে এই ধরনের খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ থেকে শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। প্রযুক্তি ইতিবাচকের পাশাপাশি নেতিবাচক দিকও যথেষ্ঠ। আর কোমলমতি শিশুরা এর নেতিবাচক প্রভাবেরই শিকার হচ্ছে বেশি। মোবাইল ফোন ব্যবহারে শিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ফোন একদিকে যেমন শিশুর স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে খেলার মাঠ ও স্বজনদের কাছ থেকেও দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। শিশুরা গৃহবন্দী ও প্রাণচাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়ছে। ফলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা নানা ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। সম্প্রতি সুইডেনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব তরুণ মোবাইলফোন ব্যবহার করে এবং যাদের বয়স ২০ বছরের কম, অন্যদের তুলনায় তাদের প্রায় ৫ গুণ বেশি আশঙ্কা থাকে ব্রেন ক্যান্সারের। অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি দুই মিনিট স্থায়ী মোবাইল কল শিশুদের মস্তিষ্কে যে হাইপার অ্যাকটিভিটি সৃষ্টি করে, তা পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত মস্তিষ্কে বিরাজ করে। এর ফলে শিশুরা নানারকম জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে ব্রেন ক্যান্সার, ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি অনেকগুণ বেশি। কারণ, বড়দের চেয়ে শিশুদের রেডিয়েশন শোষণ শতকরা ৬০ ভাগ বেশি। আর যেহেতু শিশুদের চামড়া ও হাড় নরম, তাই এদের ক্যান্সার ঝুঁঁকিও বেশি। এ ছাড়াও অন্যান্য সমস্যার মধ্যে ক্লাস পারফরমেন্স কমে যাওয়া, খিঁচুনি, নির্ঘুমতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, শিশুদের জন্য তা আরও মারাত্মক ক্ষতিকর, যা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে ব্যাহত করে। সারা পৃথিবীতেই এখন শিশুরা প্রায় বেশিরভাগ সময়েই মোবাইল ফোন নিয়ে খেলা করে থাকে। দিনের পর দিন এ হার দ্রুত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে শিগগিরই হয়তো সারা বিশ্বের শিশুরা একটি মহামারী রোগের শিকার হতে পারে এবং যা হতে পারে প্রাণঘাতী মস্তিষ্কের ক্যান্সার। গবেষণা থেকে আরও বেরিয়ে এসেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে শিশুদের শ্রবণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও সমাজ এবং অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, অভিভাবকরা সতর্ক হলে এবং শিশুদের প্রতি যথাযথ যত্ন নিলেই আগামীতে আমরা সমৃদ্ধ জাতি গঠনে পরিপূর্ণ সুস্থ প্রজন্ম আশা করতে পারি, যারা আমাদের দেশকে সত্যিকার সোনার বাংলা গড়তে সহায়ক হতে পারে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.