মীর জাফর আলী খান
এক ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতার পরিণতিতে একটি উপমহাদেশ তথা একটি স্বাধীন জাতিকে দীর্ঘ ১৯০ বছর বিদেশিদের নাগপাশে পরাধীন জীবন কাটাতে হয়। তাই ইতিহাসের পাতায় সর্বকালের কুখ্যাত বিশ্বাসঘাতক হিসেবে কেবল একটি নামই নয়, বিশ্বাসঘাতকের প্রতিশব্দ হিসেবে ঘৃণাভরে উচ্চারিত হয় তার নাম। তিনি হলেন পলাশী যুদ্ধের সেই বেইমান সেনাপতি মীর জাফর আলী খান। নবাব সিরাজউদদৌলার নানা নবাব আলীবর্দী খাঁর মতো মীর জাফরও ছিলেন আরব থেকে আসা এক নিঃস্ব বেদুইন। নবাব আলীবর্দী খাঁর সঙ্গে আত্দীয়তার সূত্রে নবাবের পরের পদেই অধিষ্ঠিত করেন মীর জাফরকে। যার পদমর্যাদা ছিল 'বকশী'। আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর তার নাতি সিরাজউদদৌলা নবাবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেননি মীরজাফর। নবাবের খালাতো ভাই শওকত জংকে নবাবের মসনদে বসানোর চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেলে নবাব সিরাজউদদৌলা মীর জাফরকে 'বকশী' পদ থেকে সরিয়ে দেন। নতুন বকশী করা হয় মীর মদনকে। কিন্তু মীর জাফর সেনাপতির দায়িত্বে থেকে যান। ইংরেজরা যখন নবাব সিরাজউদদৌলাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করতে থাকেন, তখন গোপনে মীর জাফর ইংরেজদের পক্ষ নেন এবং নিজে নবাবের সিংহাসনে বসার আয়োজন করতে থাকেন। এই চক্রান্তের কারণেই পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ আক্রমণের মুখে মীর জাফরের অনুগত সেনাবাহিনীর একটি অংশ নবাবের বদলে ইংরেজদের পক্ষ নেয়। ফলে সহজেই পরাজিত হয় বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব সিরাজউদদৌলা। সেই সঙ্গে অস্তমিত হয় স্বাধীনতার সূর্য। কেননা পরবর্তীতে ১৭৫৭ সালে মীর জাফরকে নবাব করা হলেও বাস্তবে তিনি ছিলেন ইংরেজদের আজ্ঞাবহ হাতের পুতুল। ইংরেজদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১৭৬০ সালে তাকে ছুড়ে ফেলে তারই জামাতা মীর কাশেমকে নবাব করা হয়। অন্যদিকে জামাতা মীর কাশেমের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় পুনরায় মীর জাফরকে নবাব করা হয়। দন্ত-নখরহীন বাঘের মতো মীর জাফর ইংরেজদের হাতের পুতুল রূপেই বাকি জীবন পাড়ি দেন। লোকমুখে যদিও প্রচলিত আছে যে কুষ্ঠ রোগে মীর জাফরের মৃত্যু ঘটেছিল। কিন্তু ইতিহাসে তার সাক্ষ্য নেই। ইতিহাস মতে, ১৭৬৫ সালের ১৭ জানুয়ারি মীর জাফরের মৃত্যু ঘটে বার্ধক্যজনিত কারণে। ভারতের মুর্শিদাবাদে মীর জাফরের প্রাসাদের মূল তোরণের নামকরণ করা হয়েছে 'নেমক হারাম দেউল' বা বিশ্বাসঘাতক গেট হিসেবে। আর এভাবেই গালি বা বিশ্বাসঘাতকের প্রতিশব্দ হিসেবে বেঁচে থাকবে সর্বকারের কুখ্যাত বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের নাম।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.