সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    আয়াতোল্লাহ খোমেনি নির্বাসন থেকে দেশে ফেরেন যেভাবে


    প্যারিসের কাছে নফলে দ্য শাতো গ্রামে তার বাসস্থানে অনুসারীদের সাথে নামাজ পড়ছেন খোমেনি
    ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
    Image captionপ্যারিসের কাছে নফলে দ্য শাতো গ্রামে তার বাসস্থানে অনুসারীদের সাথে নামাজ পড়ছেন খোমেনি
    ৪০ বছর আগে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে তার নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন।
    বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল সেটি।
    প্যারিসের বাইরে নফলে-ল্য শাতো নামের গ্রামটিতে থাকতেন আয়াতোল্লাহ খোমেনি। সেখানে বসেই ইরানে তার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
    গত ৪০ বছরে গ্রামটির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। শুধু আয়াতোল্লার প্রস্থানের কিছুদিন পরেই তার আস্তানাটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল।
    নফেলের তেমন পরিবর্তন না হলেও গত ৪০ বছরে এই গ্রামের বাইরের বিশ্ব অনেক বদলে গেছে। এবং চার দশক আগে এই গ্রামে নীরবে নিভৃতে যা হয়েছিল, বিশ্বের পরিবর্তনের পেছনে তার ভূমিকা অনেক।

    ভুল সিদ্ধান্ত এবং বিপর্যয়

    ১৯৭৮ সালে ইরানে যখন চরম অস্থিরতা এবং সহিংসতা শুরু হয়, আয়াতোল্লাহ খোমেনি তখন ইরাকে শিয়াদের পবিত্র নগরী নাজাফে কড়া পাহারায় নির্বাসিত জীবনে ছিলেন।
    বিমানে করে দেশে ফিরছেন খোমেনিছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
    Image captionদেশে ফেরার পথে বিমানে আয়াতোল্লাহ খোমেনি
    ইরাকে তখন সাদ্দাম হোসেনের শাসন। । ইরানের শাহ আয়াতোল্লাহ খোমেনিকে ইরাক থেকে বহিষ্কারের জন্য সাদ্দাম হোসেনকে অনুরোধ করেন।
    চরম ভুল করেছিলেন শাহ। বহিষ্কৃত আয়াতোল্লাহ ফ্রান্সে পাড়ি জমালেন এবং সেখান থেকে সহজে সারা পৃথিবীর উদ্দেশ্যে কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলেন।
    তার আপোষহীন এবং জোরালো সব বক্তব্যের কারণে দ্রুত তিনি সারা বিশ্বের নজর কাড়েন।
    শেষ পর্যন্ত ১৯৭৯ সালে জানুয়ারিতে যখন শাহ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, আয়াতোল্লাহ দেশে ফেরার সুযোগ পান এবং ফিরেই রাজতন্ত্র উপড়ে ফেলেন।
    ভাড়া করা যে বিমানে করে তিনি প্যারিস থেকে তেহরানে এসেছিলেন, সেখানে বিবিসির জন সিম্পসন এবং তার এক ক্যামেরাম্যান টিকেট জোগাড় করতে পেরেছিলেন।
    ১৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরছেন আয়াতোল্লাহ খোমেনিছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
    Image caption১৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরছেন আয়াতোল্লাহ খোমেনি
    বিবিসি তখন মি সিম্পসনকে তেহরানে যেতে বারণ করেছিল, কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেছিলেন।
    তবে সাথে সাথেই পরিণতি টের পেয়েছিলেন এই সাংবাদিক। মাঝ আকাশে আয়াতোল্লাহর একজন মুখপাত্র জানালেন যে ইরানের বিমান বাহিনী, যারা তখনও শাহ'র প্রতি অনুগত ছিল, পরিকল্পনা করছে আয়াতোল্লাহকে বহন করা বিমানটি ইরানের আকাশসীমায় ঢুকলেই সেটিকে গুলি করে নামানো হবে।
    সে কথা শুনে, বিমানে বিদেশী সাংবাদিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু বিমানটিতে আয়াতোল্লাহর বিপ্লবী যেসব সঙ্গী ছিলেন, তারা হাততালি দিতে শুরু করেন। কেউ কেউ আবেগে কাঁদতে শুরু করেন। তাদের বক্তব্য ছিল- শহীদ হওয়ার সুযোগ তারা পেয়েছেন।

    ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

    বিমানের প্রথম শ্রেণীতে বসে ছিলেন আয়াতোল্লাহ। সাংবাদিকরা তার কাছে গেলেন। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের দিকে নজর না দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করলেন - এতদিন নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরতে তার কেমন লাগছে। আয়াতোল্লাহ উত্তর দেন - 'কিছুই মনে হচ্ছেনা'।
    বিমানটিকে গুলি করা হয়নি। কিন্তু বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে দীর্ঘ দেন-দরবার চলতে থাকার কারণে বিমানটি বেশ কিছুক্ষণ ধরে তেহরানের ওপর চক্কর খেয়েছিল।
    তেহরানে তার বাড়ি থেকে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন আয়াতোল্লাহ খোমেনিছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
    Image captionতেহরানে তার বাড়ি থেকে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন আয়াতোল্লাহ খোমেনি
    শেষ পর্যন্ত বিমনাটি নামে। এত মানুষ তাকে অভিবাদন জানাতে বিমানবন্দরে বাইরে হাজির হয়েছিল যে দেখে মনে হয়েছিল এত বড় জমায়েত বিশ্বে আর কোনোদিন কোথাও হয়নি। তারপরের ইতিহাস সবারই জানা। রাজতন্ত্র ধ্বংস হয়ে ইরানে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হলো। মুসলিম বিশ্ব পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়লো এবং পশ্চিমা উদারপন্থার প্রধান চ্যালেঞ্জার হয়ে পড়লো আয়াতোল্লাহ খোমেনির নতুন ইরান।এই পুরো পরিকল্পনাটি করা হয়েছিল প্যারিসের বাইরে ছোট শান্ত একটি গ্রামে বসে।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !