বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর সঞ্চালন লাইন নির্মাণের উদ্যোগ
ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া হয়ে কালিয়াকৈর পর্যন্ত উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য ‘বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৪২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ভারতীয় ঋণ থেকে ১ হাজার ৭৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তহবিল থেকে ১৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানি গ্রুপের প্রস্তাবিত ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর এরই মধ্যে প্রক্রিয়াকরণের অংশ হিসেবে গত বছরের ১৯ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় দেয়া বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পিজিসিবি।
বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-২) এটিএম মোস্তফা কামাল শনিবার যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন পিজিসিবির ডিজি। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রয়োজনীয় বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু সেই বিদ্যুৎ যদি জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে হয় তাহলে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন লাইন নির্মাণ ও পুরনো সঞ্চালন লাইন সংস্কারে সরকার বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুতের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ, লোডশেডিং কমানো এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে সরকার দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে আন্তঃদেশীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।
২০২২-২৩ সালের মধ্যে ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানি গ্রুপের প্রস্তাবিত ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ অংশে সরবরাহের জন্য বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর সঞ্চালন লাইনটি নির্মাণ করা জরুরি। এ ছাড়া ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে দেশের উত্তরাঞ্চলে উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা দরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৯ মার্চ বাংলাদেশ সরকার ও এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মধ্যে ডলার ক্রেডিট লাইন অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভারতীয় নমনীয় ঋণের আওতায় এ প্রকল্পটিতে অর্থায়নের বিষয়ে ভারত সরকারের চূড়ান্ত সম্মতি পাওয়া গেছে।
একনেকের জন্য তৈরি করা প্রকল্পের সারসংক্ষেপে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্পশক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস উল্লেখ করেছেন, প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের ফলে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য দেশের উত্তরাঞ্চলে উন্নত ভোল্টেজের সঞ্চালন অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা দরকার।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, বগুড়া থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ কিলোমিটার যমুনা রিভার ক্রসিং লাইনসহ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, কালিয়াকৈরে ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্রে ৪০০ কেভি এআইএস দুটি বে সম্প্রসারণ এবং পার্বতীপুরে ২৩০ কেভি সুইচিং স্টেশনে ২৩০ কেভি এআইএস দুটি বে সম্প্রসারণ করা হবে।
প্রকল্পটি রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের ৭টি জেলার ১৯টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পভুক্ত এলাকা হচ্ছে, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলা। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা, বগুড়ার বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, কাহালু, গাবতলী, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলা, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া ও বেলকুচি উপজেলা, টাঙ্গাইলের টাঙ্গাইল সদর, মির্জাপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.