সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    কিনে খাচ্ছি জীবাণু


    ফার্মগেটে একটি স্কুলের সামনে ফুচকা চটপটি নিয়ে বসে আছেন এক বিক্রেতা। তানজীব নামে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সেই ফুচকা কিনে খাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাস করা হলো, কেন খাচ্ছ ফুচকা। তার উত্তর ‘মজা লাগে, তাই খাচ্ছি।’ পাশেই এক মহিলাও কিনে খাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘আমরা জানি এটা ক্ষতিকর, কিন্তু মুখের স্বাদের জন্য আমরা এটা খেয়ে ফেলি।’ সচেতনভাবেই হোক আর অসচেতনভাবেই হোক এভাবে প্রতিদিন রাস্তার পাশের খাবার কিনে খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তারা খবরও রাখছেন না, টাকা দিয়ে কিনে তারা ভয়ঙ্কর জীবাণু খাচ্ছেন। সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট খাদ্য নিরাপত্তা সমীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, ঢাকা শহরের ৯০ শতাংশ ফুচকা ও ঝালমুড়িতে রয়েছে টাইফয়েডের জীবাণু। ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে কলেরার জীবাণু ই-কোলাইয়ের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাঁচটি ভেলপুরি ও তিনটি ঝালমুড়ির নমুনায় টাইফয়েডের জীবাণু সালমোলিনা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে খাবারের মান পরীক্ষায় দেশের একমাত্র রেফারেন্স প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি। এ ছাড়া ৩০টি ফুচকার নমুনায় জীবাণু আছে, ১২টি ভেলপুরির নমুনায় ৭৫ শতাংশ, ঝালমুড়ির ১৩টি ও চারটি আচারের নমুনায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় ইস্ট পাওয়া গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরের ৪৬টি থানায় অবস্থিত স্কুলর সামনে থেকে ৪৬টি ঝালমুড়ি, ৩০টি ফুচকা, ১৬টি ভেলপুরি ও ৪২টি আচারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনার মাইক্রো বায়োলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য ইস্ট ও মোল্ড, কলিফর্ম, সালমোনিলা, ই-কোলাইয়ের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এতে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে ই-কোলাইয়ের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এক বছর ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার ৪৬টি স্কুলের সামনে থেকে ঝালমুড়ি, ফুচকা, ভেলপুরি ও আচারের নমুনা সংগ্রহ করে ন্যাশনাল ফুড সেফটির নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে মাইক্রো বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। এতে কৃত্রিম রং, ইস্ট, ই-কোলাই, কলিফর্ম, মাইক্রোটক্সিন ও সালমোলিনার মতো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। রাজধানীতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫৫টি নুডলসের গুণগতমান পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ১৪টি নুডলসে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে প্রোটিনের পরিমাণ কম আছে। লেডের পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম ও বেশ কয়েকটিতে শূন্য মাত্রা পাওয়া গেছে এবং বিভিন্ন মাত্রার টেস্টিং সল্ট পাওয়া গেছে। আরও ৪৬৫টি খাবারের নমুনার গুণগতমান পরীক্ষা করে তাতে টেস্টিং সল্ট, পেস্টিসাইড, রং, আফলাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৩০ পদের রাস্তার খাবার পাওয়া যায়। এসব খাবারের কোনোটিরই গুণগতমানের নিশ্চয়তা নেই।
    এর পরও লাখো মানুষ প্রতিনিয়তই এসব ভয়ঙ্কর অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব খাবারের  বেশির ভাগই ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাওয়া হয় না, উপাদেয় ও মুখরোচক হিসেবে খাওয়া হয়। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, ১০ টাকার ঝালমুড়ি বা ফুচকার কারণে ভয়ঙ্কর রোগে জীবন বিপণœœ হওয়া ছাড়া হাজার হাজার টাকা পকেট থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। স্কুলপড়ুয়া ছোট ছোট শিশুও এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খায় এবং প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় মা-বাবাও তাদের সন্তানদের এসব খাবার কিনে দেন এবং খেতে উৎসাহিত করেন, নিজেরাও খান। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর আচার ও অজানা, অচেনা ব্র্যান্ডের আইসক্রিম শিশুদের অতি প্রিয়। কিন্তু ক্ষতিকর এসব খাবার শিশুদের জন্য মোটেও উপযোগী নয়। মা-বাবা এই সাধারণ কথাটি বুঝতে চেষ্টা করেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল আলম বলেন, ঘরের বাইওে তৈরি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাইয়ে আপনাদের শিশুদের জীবন বিপণœ করবেন না। শিশুরা অবুঝ বলে হয়তো অস্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করে ও খায়। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কীভাবে নিশ্চিন্তে, নির্দ্বিধায় এসব খাবার প্রতিনিয়ত খেয়ে চলেছে, তা আমার বুঝতে কষ্ট হয়। অনেক ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, সস্তা ও উপাদেয় বলে তারা এসব রেডিমেড খাবার খায়। সস্তায় নাশতার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণেও তাদের রাস্তার খাবার খেতে হয়।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !