পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে আজ, একগুচ্ছ দাবি পুলিশের!
‘পুলিশ জনতা ঐক্য গড়ি, মাদক জঙ্গি নির্মূল করি’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯। পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারই প্রথম বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পাওয়া সদস্যরা আগেই পদক পরে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবারও একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরবে পুলিশ।
এসব দাবির মধ্যে আছে- পুলিশ বাহিনীর জন্য নিজস্ব মেডিকেল কলেজ, পৃথক পুলিশ বিভাগ, আবাসন, যানবাহন, ঝুঁকি ভাতা ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদকে ফোর স্টার জেনারেলের পদমর্যাদা, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ে ৫০ লাখ টাকার সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, সুপারনিউমারারি পদের সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন করে এক লাখ পুলিশ নিয়োগ, সব সদস্যের জন্য বিশেষ ভাতা চালু, অ্যাভিয়েশন ইউনিটসহ দুটি ইউনিট দ্রুত চালু করা, উন্নত অস্ত্রসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা, ক্যাডার কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা দেয়া ও শ্রান্তি ভাতা প্রচলন। একাধিক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, এ উপলক্ষে এক বছর পুলিশ সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৪০ জনকে বিপিএম, ৬২ জনকে পিপিএম এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১০৪ জনকে বিপিএম এবং ১৪৩ জনকে পিপিএম দেয়া হবে। এর মধ্যে জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় ডিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর মরহুম মো. জালাল উদ্দিন পিপিএম ও ডিএমপির কনস্টেবল মরহুম শামীম মিয়াকে বিপিএম মরণোত্তর পদক প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। সবমিলিয়ে এবার পদকপ্রাপ্ত পুলিশের সংখ্যা ৩৪৯ জন। রীতি অনুযায়ী প্রতিবছর পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে পদকপ্রাপ্তদের ব্যাজ পরিয়ে দেন। কিন্তু এত সংখ্যক সদস্যকে পদক পরিয়ে দেয়া সময়ের ব্যাপার। এ নিয়ে গত সোমবার আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে সভা হয়। সেখানে পদকপ্রাপ্তদের আগে থেকেই পদক পরে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পুলিশ সদর দফতরের জ্যেষ্ঠ একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আইজিপি পদটি ফোর স্টারে রূপান্তরিত করা ছাড়াও মেডিকেল কলেজ ও আবাসন সুবিধাসহ অনেক দাবিই আমাদের দীর্ঘদিনের। এসব দাবি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সরকারও এসব বিষয়ে ইতিবাচক। কর্মকর্তারা বলেন, মেডিকেল কলেজ বিষয়ে দু’বছর আগেই প্রধানমন্ত্রী মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। জায়গার অভাবে সেটা হয়ে উঠেনি। পূর্বাঞ্চলে জায়গা পাওয়া গেছে। আশা করি, দ্রুতই এ দাবি বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া ‘সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়াতে সুপারনিউমারারি পদ বৃদ্ধি জরুরি। পুলিশে অতিরিক্ত ডিআইজি (গ্রেড-৪) থেকে অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) পদে ২৮০টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টির দাবি অনেক দিনের। কারণ উচ্চতর পদে প্রসারণ আশানুরূপ না হওয়ায় পদোন্নতির সব যোগ্যতা থাকার পরও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে পুলিশ ও জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ১:১৩৫৫। এখন দেশে পুলিশের অনুপাত ১:৮০১। জাতিসংঘ স্বীকৃত পুলিশ জনসংখ্যার অনুপাত ১:৪০০ করা প্রয়োজন। পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন এক লাখ পুলিশ সদস্য বাড়ানোর দাবি জানানো হবে।
সূত্রে জানা গেছে, আজ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনের পর তার উপস্থিতিতে দরবার হবে। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। দরবারেই দাবিদাওয়া উপস্থাপন করা হতে পারে। সপ্তাহজুড়েই প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎসহ পুলিশের ব্যাপক কর্মসূচি রয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সুবর্ণগ্রাম রিসোর্টে আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধসংক্রান্ত মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এবারের পুলিশ সপ্তাহ শেষ হবে। পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে নেতৃত্ব দেবেন পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা। তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন সহস্রাধিক পুলিশ। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং আজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ পৃথক বাণী দিয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন থাকবে অনুষ্ঠান ঘিরে। বছরজুড়ে পুলিশের যেসব কর্মকর্তা ভালো কাজ করেছেন, তাদের পুরস্কৃত করা হবে। পাশাপাশি পুলিশি সেবার মান বাড়াতে নানা দাবিও তুলে ধরা হবে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.