সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    এবার ভারত থেকে নয়া কৌশলে ঢুকছে ইয়াবা



    মিয়ানমারের পর এবার ভারত থেকে ইয়াবা আসার তথ্য পেয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তবে এগুলো মিয়ানমারের ইয়াবার তুলনায় আকারে বড়। প্যাকেটের গায়ে রয়েছে চীনা হরফে লেখা। বদলে গেছে ইয়াবা আসার পথ। গত ২ মাসে ৩টি ছোট চালান উদ্ধারের পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে তারা। এর আগেও ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ইয়াবার চালান আটক হলেও এর উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি কেউ। তবে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে এবার মাদক দ্রব্য অনেকটা নিশ্চিত কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন রুট দিয়ে এতদিন মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালানের পাশাপাশি ভারত থেকেও এসেছে। এছাড়া রাজশাহী, সিলেট, যশোর, সাতক্ষীরাসহ ভারতীয় বিভিন্ন সীমান্ত দিয়েও এসেছে। আর এসব ইয়াবা প্রবেশ করছে ছোট ছোট চালানের মাধ্যমে যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা অন্য কোনও সংস্থা বুঝতে না পারে। বিষয়টি নজরে আসার পর ইয়াবা প্রবেশ ঠেকানো নিয়ে উদ্যোগ প্রকাশ করেছে মাদক বিরোধী অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

    চলতি মাসের গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা চালানের মধ্যে ১৫শ পিস ইয়াবাসহ জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ঘটনায় ১ জনকে আটকও করা হয়। পরে এ ঘটনায় গোদাগাড়ী থানায় মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা(মামলা নং ১৭)। এর আগে ২৮ জানুয়ারি এবং ২১ জানুয়ারি পৃথক দুটি অভিযানে দামকুরা থানার আলীমগঞ্জ এলাকার একটি ইটভাটার সামনে রাজশাহী টু ঢাকা রুটের বাসে তল্লাসি চালিয়ে ১৬ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ জামাল উদ্দিন আরটিভি অনলাইনকে জানান, সম্প্রতি ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসার তথ্য পেয়েছেন তারা। এতদিন তারা জানতেন কেবল মিয়ানমার থেকেই ইয়াবার চালান আসে কিন্তু ২ মাসে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৩টি চালানসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলাও করা হয়েছে। পরে তদন্ত করে দেখা গেছে- যেসব চালান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আটক করেছে তা ভারত থেকে এসেছে। বিষয়টি তারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের মাধ্যমে ভারতকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হবে ভারতীয় সরকার ও সেদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকেও। বিষয়টি নিয়ে তারা তদন্ত করছেন।

    তিনি আরও জানান, তারা ধারণা করছেন, মিয়ানমার সীমান্তে কড়াকড়ি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সীমান্ত বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টেছে। তারা এখন ভারতীয় সীমান্ত থেকে নিয়মিতভাবে ছোট ছোট চালানে ইয়াবা আনছে বাংলাদেশে। সিলেট, রাজশাহী, যশোরসহ ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলো দিয়ে প্রবেশ করা একাধিক ইয়াবার চালান এর আগেও জব্দ হয়েছে। তখন বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে এসব ইয়াবা মূলত কোন দেশ থেকে আসছে। কিন্তু গত ২ মাসে ৩টি চালান ধরা পরে। ওইসব চালানোর ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো সাইজেও কিছুটা বড় ছিল। আর চালানের প্যাকেটে একটি বিশেষ দেশের লেখাও ছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

    প্রথমে মনে হয়েছিল হয়তো ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে কৌশল পাল্টে ওই দেশের লেখা প্যাকেটে মিয়ানমার থেকেই চালানগুলো আনছে। কিন্তু ধারণা পাল্টে যায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। অধিদপ্তরের তদন্তে বেরিয়ে আসে যে ৩টি চালান আটক হয়েছে এগুলো ভারত থেকেই এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে ইয়াবার এখনও ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভারতীয় সীমান্তে ইয়াবার কারখানা গড়ে উঠেছে। মিয়ানমার মধ্যে বাংলাদেশি সীমান্তে এতদিন ইয়াবা কারখানায় যেসব ইয়াবা তৈরি হতো তার প্রধান বাজার ছিল বাংলাদেশ।

    এসব নিয়ে দুই দেশের সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে মিয়ানমার সীমান্তে থাকা ইয়াবার কারখানাগুলো গুড়িয়ে দেয়া হয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও ইয়াবার চালান আসতে শুরু করে। পরে ইয়াবার বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তালিকা করে ইয়াবাকারবারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ব্যাপক ইয়াবাও উদ্ধার হচ্ছে নিয়মিত অভিযানে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা প্রবেশ ঠেকাতে এবং ইয়াবা বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধে রীতিমতো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সীমান্তবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাভিশ্বাস হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে যদি নতুন করে ইয়াবা আসতে থাকে তাহলে ইয়াবা ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়বে।

    র‌্যাব সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম শাখা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে জানান, র‌্যাবের অভিযানে ভারত হয়ে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসা ইয়াবার একাধিক চালান উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় আটকও করা হয়েছে। এসব ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। ভারতীয় বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধার হওয়া ইয়াবার উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে র‌্যাব কাজ করে যাচ্ছে।

    আইনশৃঙ্খলা ও সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর তথ্য মতে, সিলেট বিভাগের চারটি সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসছে দেশে। সিলেটের জকিগঞ্জ ছাড়াও সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও টেকেরঘাট এবং হবিগঞ্জের বাল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা আসছে। এছাড়া রাজশাহী, যশোর, সাতক্ষীরাসহ ভারতীয় সীমন্ত জেলারগুলোর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এতদিন বড় বড় চালানের ইয়াবা আসলেও এবার ছোট ছোট চালানে ইয়াবা প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এছাড়া হিলি সীমান্তের অন্তত ৩৫টি পয়েন্ট দিয়েও ভারত থেকে ইয়াবা আসছে। হিলি সীমান্তের ফুটবল খেলার মাঠ, জিলাপি পট্টি, পুরিপট্টি, মন্ডলগেট, কামালগেট স্টেশন, বালুরচর, ডাব বাগান, ফকিরপাড়া, হিন্দু মিশন, নওপাড়া, হাড়িপুকুর, নন্দিপুর, ঘাসুরিয়া এবং পাঁচবিবি সীমান্তের কয়া, চেঁচড়া, ভুইডোবা, রাম ভদ্রপুর, উত্তর গোপালপুর, উচনাসহ ৩৫টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা আমদানি হয়ে থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা দিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় ইয়াবার চালান আসছে।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !