সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    ধর্ষকরা বেপরোয়া

    ধর্ষকরা বেপরোয়া

    দুধের শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না বেপরোয়া ধর্ষকদের বিকৃত লালসা থেকে। আপন সন্তান, কিংবা নিকটাত্মীয়ের সন্তানদেরও ধর্ষকরা ছাড়ে না। আবার স্কুলের দারোয়ান থেকে কতিপয় বিকৃত রুচির শিক্ষকও প্রাথমিকে পড়ুয়া ছাত্রীদের ধর্ষণ করছে। প্রতিবেশী বা ঘরের কাছে পরিচিত যুবকদের মাধ্যমে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কোমলমতিদের খাবার ও খেলনার লোভ দেখিয়ে এসব ‘অসুস্থ’ ব্যক্তি ধর্ষণের ফাঁদ পাতছে। আবার কয়েক সন্তানের জননীও তার নিজ ঘরেই ধর্ষকদের বিকৃত যৌনাচারের শিকার হচ্ছেন। মনোচিকিৎসকরা ধর্ষকদের বিকৃত এই যৌনাচারকে ‘পার্সোনাল সাইকোপ্যাথি টেনডেন্সি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, এসব ধর্ষকের মধ্যে কোনো ধরনের সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি হয় না। তারা মানসিকভাবে অসুস্থ। এ জন্য তাদের যৌন প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসামাজিকভাবে হয়। ফলে শিশুদের ওপরও তারা নিজেদের যৌন প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে দ্বিধাবোধ করে না। তবে শুধু কিশোর বা তরুণ নয় একজন মধ্যবয়স্ক বা বয়স্ক ব্যক্তিও ‘পার্সোনাল সাইকোপ্যাথি টেনডেন্সিতে’ আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া, নৈতিক অবক্ষয় এবং সাংস্কৃতিক অগ্রাসনের জন্য শিশু-নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিককালের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, অপরাধীরা বোধ-বুদ্ধিহীন শিশু থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধী কিশোরী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও বয়সী নারী এবং গৃহিণীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অসংখ্য মামলা বিচারাধীন আছে। বিভিন্ন কারণে এসব মামলার বিচারকাজ ঝুলে আছে। গড়ে হিসাব করে দেখা যায় যে, বছরে নিষ্পত্তি হচ্ছে মাত্র ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ ধর্ষণ মামলা। আর সমাজের এই পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, পুলিশকে এ ধরনের ঘটনায় অপরাধীদের শনাক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনি কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এ ছাড়া স্কুল পর্যায়ে এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বসে আলোচনার ভিত্তিতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১২ মাসে বাংলাদেশে মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৭১টি। এর মধ্যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৪টি। প্রতিবন্ধী ২৮টি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয় ৯৬ জন। ৬০ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আর ধর্ষণের শিকার ছয়জন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ ছাড়া মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সে বছর যৌন নির্যাতনের শিকার হন মোট ১৫৭ জন। এর মধ্যে ৯ জন আত্মহত্যা করেন। দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ৩৩ জন। লাঞ্ছিত হয় ২৭ জন।

    আর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যে, চলতি বছরের প্রথম মাসেই ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২৯৮টি। আর ২০১৮ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে মোট তিন হাজার ৯১৮টি। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জবাবদিহিতা না থাকায় সমাজে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের অপরাধকে আরও উসকে দিচ্ছে। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন থাকলেও এ সংক্রান্ত নীতিমালা নেই। আবার অপরাধিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শাস্তি কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। পুলিশকে এ ঘটনায় অপরাধীদের শনাক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করতে হবে। উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাস্তাঘাটে কোনো নারী ও শিশু যদি যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তবে সেটি দেখার দায়িত্ব পুলিশের কিন্তু হোটেল বা বাড়িতে ঘটনা ঘটলে তা পুলিশের আয়ত্তের বাইরে। তবে আমরা স্কুল পর্যায়ে এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বসে আলোচনার ভিত্তিতে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. হেদায়াতুল ইসলাম বলেন, পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার থেকেই মানুষ ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করে। মূলত এ ধরনের মানুষ সমাজে কারও সঙ্গে সঠিকভাবে মিশতে না পারায় একাকিত্বে ভোগেন। নিজেদের মনের ভাবের বহিঃপ্রকাশ সুস্থভাবে করতে না পারায় তারা বিচ্ছিন্ন থাকে। ফলে এ ধরনের কিছু মানুষ দুর্বলের ওপর আঘাত করে। বিশেষ করে কন্যাশিশুরা পাল্টা আক্রমণ না করায় তাদের ওপর বেশি আক্রমণ হয়। তিনি বলেন, ধর্ষকের মনোভাবকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় পার্সোনাল সাইকোপ্যাথি টেনডেন্সি বলা হয়। তাই তাদের মধ্যে কোনো ধরনের সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি হয় না। ফলে শিশুদের ওপর নিজেদের যৌন প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। তাদের আক্রমণ থেকে বাদ যায় না প্রতিবন্ধীরাও।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !