৩৭টি ডিম দিয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকা

গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে বিলুপ্তপ্রায় ‘বাটাগুর বাসকা’ প্রজাতির কচ্ছপ ডিম পেড়েছে। উদ্যানের অভ্যন্তরে নিবিড় পরিবেশে গতকাল সোমবার দুটি বাসা থেকে ৩৭টি ডিম পাওয়া গেছে। বিলুপ্তপ্রায় এই জলজ প্রাণী প্রকৃতিতে ফেরাতে চলছে নিরন্তর গবেষণা।বাটাগুর বাসকার প্রকল্প গবেষক ও স্টেশন ব্যবস্থাপক এ জি জে মোরশেদ জানান, প্রাণীগুলোকে প্রকৃতিতে ফেরাতে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হিসেবে ‘প্রজেক্ট বাটাগুর’ ২০১০ সাল থেকে কাজ করছে। এই জলজ প্রাণী নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই এ ধরনের গবেষণা হচ্ছে।গতকাল প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভেতরে পুকুরপাড়ে বালু দিয়ে তৈরি বিশেষ একটি স্থানে ক্যামেরা ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা। সতর্কতার সঙ্গে বালু সরিয়ে ডিম খুঁজতে ব্যস্ত স্টেশন ব্যবস্থাপক এ জি জে মোরশেদ ও তাঁর সহকারী হাসান। গত রোববার রাতে বৃষ্টি হওয়ায় বাটাগুর বাসকার পায়ের ছাপ মুছে গেছে। তাই বিশেষ নাইট ভিশন ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ডিম পাড়ার সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করে সেখানে অনুসন্ধান চালান তাঁরা। পরে দুটি স্থানে ডিমের অস্তিত্ব মেলে। একে একে বালুর ভেতর থেকে বের করে আনা হয় ৩৭টি ডিম। পরে এগুলো অন্য একটি পুকুরপাড়ে নিয়ে বিশেষ ‘অ্যান্টি অ্যান্ট’ বাক্সে ভরে আবার মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। বাক্সে দেওয়া হয় তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের সংযোগ ও ডাটা লগার।
উদ্যানে চলা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছে বাংলাদেশের বন বিভাগ এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত জু ভিয়ানার অর্থায়নে, যুক্তরাষ্ট্রের টার্টল সারভাইভাল অ্যালায়েন্সের প্রযুক্তিগত সহায়তায় নিরন্তর গবেষণাকাজ চলে এখানে—জানালেন স্টেশন ব্যবস্থাপক।প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, পৃথিবীতে কেবল উপকূলীয় অঞ্চল বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারেই বসতি ছিল বাটাগুর বাসকার। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয় ও নানামুখী কারণে এরা প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তপ্রায়। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন (আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ) এদের মহাসংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় স্থান দিয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, এই প্রজাতির নারী কচ্ছপ পৃথিবীতে আছে মাত্র ১৬টি। এর মধ্যে বাংলাদেশে আছে ৮টি। ২টি আছে ভারতে, ৫টি আছে দেশের সুন্দরবন এলাকায়। এ ছাড়া অস্ট্রিয়ার গ্রাদে আছে ১টি। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রকল্পে মোট ৪টি নারী ও ৩টি পুরুষ বাটাগুর বাসকা বা কাইট্যা কচ্ছপ আছে। গতকাল এখানে দুটি বাসার একটিতে ১৫টি ও অপরটিতে ২২টি ডিম পাওয়া যায়। ডিমগুলো অন্য একটি স্থানে বালুর নিচে বিশেষভাবে ৬০ দিন রাখা হবে। পরিবেশগত কারণে ডিমগুলো থেকে ৬০ দিনের আগে-পরে বাচ্চা পাওয়া যায়। জাতীয় উদ্যানের এই প্রকল্প থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৩০টি বাটাগুর বাসকার বাচ্চার জন্ম হয়েছে।
বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির বলেন, ‘বাটাগুর বাসকা গবেষণায় আমরা ভালো ফল পাচ্ছি। প্রাপ্ত বাটাগুর বাসকাগুলোকে একসময় সুন্দরবন এলাকায় অবমুক্ত করা হবে। ওই অঞ্চলগুলোতে বাটাগুর বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। স্থানীয় লোকজন প্রাণীগুলোকে যাতে না ধরেন, সে বিষয়ে তাঁদের সচেতন হতে হবে।’
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.