তিনবার ফাঁসি থেকে বাঁচা কে সেই ব্যক্তি?
মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি কেবলই মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকেন। এই বুঝি জল্লাদের সামনে ডাক পড়ল! তবে অবাক করা বিষয় হল, এমন পরিস্থিতিতেও তিনবার মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন বাইসন কাউলা। তিনি ঠাট্টা করে বলেন, ‘আসলে জল্লাদ আমাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য অত্যন্ত ক্লান্ত ছিলেন।’এ ঘটনাটি ঘটেছে আফ্রিকার মালাউইতে। দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের আইন বন্ধ হওয়ার আগে বাইসন তিনবার ফাঁসি থেকে বেঁচে গেছেন। প্রত্যেকবারই তার নাম আসার আগেই জল্লাদ কোনো না কোনো কারণে তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ হলে তিনি নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে যান।
১৯৯২ সালের ঘটনা। দক্ষিণ মালাউইতে বেড়ে ওঠা বাইসন জোহানসবার্গের গ্যাস কোম্পানিতে কাজ করে বেশ অর্থসম্পদের মালিক হন। চাকরি ছেড়ে নিজ এলাকায় জমি কিনে ফল, গম আর ভুট্টার চাষ শুরু করেন। পাঁচজনকে কাজও দেন। কিন্তু ঘরে ফেরাই কাল হল। একদিন এক প্রতিবেশী তার কর্মচারীকে গুরুতর আহত করে। ফলে ওই কর্মচারী ঠিকমতো হাঁটতেও পারতেন না। বাইসন সবসময় তাকে সাহায্য করতেন। একদিন বৃষ্টির মধ্যে শৌচাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে তাকেসহ পড়ে যান। গুরুত্বর আহত হন দুজনই। হাসপাতালে শ্রমিকটি মারা যান। হত্যার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তখন তার বয়স চল্লিশের কাছে। প্রতিবেশীরা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত।কারাগারে বাইসনকে প্রতি মুহূর্ত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হতো। সেই অপেক্ষা ছিল ‘ভয়ানক মৃত্যুযন্ত্রণা’। সেসময় মালাউইয়ের আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে মাত্র একজন জল্লাদ ছিলেন। যিনি বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতেন। ফলে যখন তিনি ২-৩ মাস পর মালাউইতে পৌঁছলেন, তখন অনেক আসামিই ধরে নিল তাদের সময় শেষ হতে চলেছে।একদিন বাইসনকে জানানো হয় তার নাম ২১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তালিকায় রয়েছে। একজন প্রহরী তাকে প্রার্থনা করতে বলেন। বেলা ১টা থেকে ফাঁসির কার্যক্রম শুরু হয়। সেদিন বেলা ৩টা পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চললেও সবগুলো কার্যকরের আগেই জল্লাদ কাজ বন্ধ করে দেন। এবারের যাত্রায় বাইসনসহ তিনজন বেঁচে যান। দ্বিতীয়বারেও বাইসনের সঙ্গে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। তালিকার সবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগেই জল্লাদ থেমে যান। তৃতীয়বার বাইসন ছাড়া সবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে তার সময় এসে জল্লাদ আবারও কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। যদিও তিনি খুবই ভাগ্যবান। কিন্তু বারবার মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়েও ফিরে আসার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে দু’বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। সেখানেও ব্যর্থ হন তিনি।
১৯৯৪ সালে মালাউইতে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়। ২০০৭ সালে এক ঐতিহাসিক মামলা সব পাল্টে দেয়। সৎছেলেকে হত্যার দায়ে এক মাদক ব্যবহারকারীর মৃত্যুদণ্ড হয়। এ রায়কে কোর্টে চ্যালেঞ্জ করে অভিযোগ করেন, তিনি সাময়িকভাবে উন্মাদ ছিলেন। তার দাবি, ন্যায্য বিচার ও সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যা মালাউইয়ের সংবিধান তাকে প্রদান করে। ফলে ১৭০ আসামিকে পুনরায় বিচারের আওতায় আনা হয়। তাদের মধ্যে ১৩৯ জন মুক্তি পান। বাইসনও তাদের একজন।অবশেষে ২৩ বছর কারাভোগের পর ৬০ বছর বয়সে বাইসন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পান। কারাগারে থাকার সময়ই তার স্ত্রী মারা যান। ছয় ছেলেমেয়ে বড় হয়ে অন্য জায়গায় বসবাস করছে। বাইসন বর্তমানে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মায়ের পাশে থেকে সেবা করেন। তার পরবর্তী ইচ্ছে, মায়ের জন্য একটা ইটের বাড়ি তৈরি করে দেবেন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.