লামায় জুমের আগুনে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি
বান্দরবানের লামায় পার্শ্ববর্তী জুমে লাগানো আগুন এসে শহীদুল ইসলাম নামে এক বাগান মালিকের ১৬০ একর মিশ্র ফলের সৃজিত বাগান পুড়ে ধ্বংস হয়েছে। এতে করে বাগান মালিকের প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।বুধবার ও বৃহস্পতিবার টানা দুইদিনের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাগানটি লামা উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ছোট কলারঝিরি নামক স্থানে অবস্থিত। একই সময় আগুনে আরো ৫ জন নৃগোষ্ঠী ও ৩ জন বাঙ্গালীর সৃজিত ৭৭ একর বাগান ও জুম পুড়ে তাদের ১৯ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থরা প্রতিবেদককে জানান। অন্য ক্ষতিগ্রস্থরা হলেন, মো. সালাম এর ২০ একর, কাইংওয়াই ম্রো এর ১০ একর, মো. জহিরের ৫ একর, রেজাউল এর ২ একর, মেনলং ম্রো এর ১০ একর, রিংচং ম্রো এর ১০ একর, চুংপং ম্রো এর ১০ একর ও রেংওয়াই ম্রো এর ১০ একর বাগান এবং জুম পুড়ে যায়।
শহীদুল ইসলাম বলেন, নিজের পরিবারের সকল সদস্যদের ও ক্রয়কৃত মোট ২৪২ একর পাহাড়ি জায়গায় বিগত ৫ বছর যাবৎ নিজের সর্বস্ব দিয়ে তিলে তিলে ফলদ ও বনজ বাগানটি গড়ে তুলি। এবছর বাগানের আম, লিচু, কমলা, মালটা, জলপাই ও জাম্বুরা গাছে ফুল আসে। গত চার বছর যাবৎ এই বাগান থেকে আমি কলার ফলন পেয়ে আসছি। অন্যান্য ফল গাছে ফলন দেয়ার সময়ে বুধবার সকাল ১০টায় পার্শ্ববর্তী নওশাদ আলীর ছেলে বাছেদ হোসেন, তার স্ত্রী রেহানা বেগম ও ছেলে মো. রাজু তাদের পাহাড়ে আগুন দিলে সেই আগুন এসে আমার বাগান পুড়ে যায়। তারা পাহাড়ে আগুন দেয়ার বিষয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো বাগান মালিক ও আমাদের অবহিত করেনি এবং দুই বাগানের মাঝে আগুন না ছড়িয়ে পড়তে যে ফায়ার রোড় (ফাইল) করতে হয় তাও করেনি। ফলে মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
বুধবার বেলা ১২টায় আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে আমার বাগান শ্রমিকরা খেয়াল করে। ততক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। টানা ২ দিন আগুনে পুড়ে আমি সহ আরো ৮ জনের বাগান ও জুম ধ্বংস হয়ে গেছে।
এই বিষয়ে বাছেদ হোসেনের বাড়িতে গেলে তারা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
শহীদুল ইসলাম আরো জানান, ১৯ হাজার দেশীয় কলাগাছ, ১ হাজার সাগর কলা, ৪টি প্রজাতির ৬ হাজার ৫শত আম গাছ, ৫শত চায়না থ্রি লিচু গাছ, ১ হাজার জাম্বুরা, ৪শত কমলা গাছ, ৪শত মালটা, ৪শত জলপাই, ৪শত আমড়া, ৪শত কাজী পেয়ারা, ২ হাজার হাইব্রিট আমলকী, ২টি জাতের ৪ হাজার ফার্মের লেবু, ৫শত কাঁঠাল/তেঁতুল/সফেদা ফলদ গাছ পুড়ে যায়। এছাড়া ৪০ হাজার সেগুন গাছের মধ্যে ২৫ হাজার সেগুন গাছ, ২০ হাজার গামারী, ২ হাজার শিমুল, ১ হাজার গর্জন, ১ হাজার বেলজিয়াম, ১ হাজার নিম ও ১ হাজার একাশি গাছের চারা একেবারে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে। সর্বমোট আমার ৭০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। আমি এখন রাস্তার ফকির হয়ে গেলাম। এত দায়দেনা কিভাবে শোধ করব তা বুঝতে পারছি না।
শহীদুল ইসলামের বাগানের শ্রমিক নূরনবী (৫৫), আনোয়ার হোসেন (২৮), মো. ছগীর (৩৬) বলেন, ২৪২ একর বাগানের মধ্যে আবাদকৃত ১৬০ একর জায়গার বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ পুড়ে আমামের মালিকের ৭০ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়। বাগানের ৩০ জন শ্রমিক ২ দিন চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি এবং এসময় ২ জন বাগান শ্রমিক আহত হয়েছে। যারা আগুন দিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। পার্শ্ববর্তী বাগান মালিক কাইং ওয়াই ম্রো কান্না করে বলেন, আমার ১০ একর বাগান ও জুম আগুনে পুড়েছে। সারা বছর কিভাবে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার চালাব?
বাগান পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আব্দুল মন্নান বলেন, রুপসীপাড়া ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় ফলদ ও বনজ বাগান ছিল শহীদুল ইসলামের বাগানটি। এতক্ষতি সে কিভাবে পুশিয়ে উঠবে আরা জানি না। ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, শহীদুল ইসলাম একবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। চৈত্রের খরা রোদ ও পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। শহীদুলের একক ক্ষতি প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার মত। এছাড়া আরো ৮ জনের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টাকা। তিনি সবাইকে পাহাড়ে আগুন দেয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন।
লামা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোজাম্মেল হক বলেন, সড়ক যোগাযোগ না থাকায় আমরা কোনো সহায়তা করতে পারিনি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, ভিন্ন মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এবং সড়ক যোগাযাগ ব্যবস্থা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট কোনো সহায়তা করতে পারেনি। ক্ষয়-ক্ষতি উল্লেখ করে কেউ এখনো কোনো অভিযোগ করেনি।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.