ড. আবেদ চৌধুরীর নতুন উদ্ভাবন 'রঙিন ভুট্টা'
সাধারণ ভুট্টার সাথে জিনগত পরিবর্তন করে বিভিন্ন রং তৈরি করে এর জেনিটিক্যালি মডিফাইড করে ‘রঙিন ভুট্টা’ উদ্ভাবন করেছেন জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। তিনি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
গতকাল রবিবার দুপুরে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপজেলার সফল কৃষক, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্মুখে তাঁর নতুন উদ্ভাবনী ‘রঙিন ভুট্টা’ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
এসময় বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমাণ খুবই বেশি। এটিকে নিউ নিউট্রেশন বলা যেতে পারে। ভুট্টায় কেরোটিন থাকার কারণে মূলত এর রং হলুদ হয়। তাই তিনি রঙিন ভুট্টার ক্লোন উদ্ভাবন করেন। একত্রে সবরঙের ভুট্টাসহ আলাদা আলাদা রঙের ভুট্টা উদ্ভাবন করেন।
শিশুদের কাছে এই ভুট্টা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তাছাড়া শিশুরা এই ভুট্টা খেলে তাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা অনায়াসেই পূরণ হবে।
ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত রঙিন ভুট্টা সারা বছরে ৪ বার চাষ করা যায়। আবার খরিফ -১ ও খরিফ -২ মৌসুমেও ভুট্টা চাষ করা যায়। হাইব্রিড ভুট্টা একটি পদ্ধতির মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে। বেরিয়ে আসা ভুট্টা ফলন হবে হাইব্রিডের সমান। ফলে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আরও উৎসাহী করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ড. আবেদ চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলার ভুট্টাচাষীসহ সফল কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ভুট্টার বীজ বিতরণ করেন। প্রত্যেকটি বাড়ির আশেপাশে এবং পতিত জায়গায় ভুট্টা চাষের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবা দিয়েছি। এবার সেই সেবা নিজের দেশকে তথা কুলাউড়াকে দিতে চাই। বিশেষ করে কুলাউড়ার কৃষি বিভাগকে এগিয়ে নিতে তিনি আলাদা সময় দেবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর সাথে বিভিন্ন ধরণের গবেষণামূলক কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন।
মতবিনিময় সভায় কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও কৃষি অফিসার জগলুল হায়দারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শিকাগোর অনারারি কনস্যুল জেনারেল মুনির চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিটি লিডার শামছুল ইসলাম, প্রবীণ সাংবাদিক সুশীল সেনগুপ্ত, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম, কুলাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, প্রেসক্লাব কুলাউড়ার সভাপতি আজিজুল ইসলাম, শ্রেষ্ঠ চাষী আব্দুল জব্বার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, আবেদ চৌধুরী একজন বাঙালি জিন বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানলেখক এবং কবি। তিনি বাংলাদেশ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হিসেবে ক্যানবেরা শহরে বসবাস করেন। তিনি ১৯৫৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আবেদ চৌধুরী পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে, যুক্তরাষ্ট্রের অরেগণ স্টেট ইনিস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়োলজি এবং ওয়াশিংটন স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে। ১৯৮৩ সালে পিএইচডি গবেষণাকালে তিনি রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন, যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়। তিনি অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে এই জিন বিশিষ্ট মিউটেন্ট নিষেক ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। তার এই আবিষ্কার এপোমিক্সিস এর সূচনা করেছে যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়। তিনি দেশীয় নতুন উদ্ভাবন হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম- এ চার জাতের ধানের উদ্ভাবন করে বেশি ফলন পেয়েছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট হেলথ, ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়রের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থায় একদল বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত গবেষকদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনেক পেশাদরী জার্নালে তাঁর লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি সহজবোধ্য ভাষায় বাংলা ও ইংরেজিতে অনেক নিবন্ধ লিখেছেন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.