আপডেট ভার্সনে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি!
আপডেট ভার্সনে শিগগিরই চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি (জেনারেল ডায়রি)।পাইলট প্রকল্প হিসেবে নতুন সার্ভারে একটি অথবা দুটি থানায় এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। ইতিবাচক ফল (ফিডব্যাক) পাওয়া গেলে দেশের সব থানা (৬৪৩টি) অনলাইন জিডি কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের আওতায় এটি চালু করা হচ্ছে। এদিকে, চলমান অনলাইন জিডি কার্যক্রমের সার্ভারে প্রবেশাধিকার নেই পুলিশের। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার কারণে এর আইডি ব্লক হয়ে গেছে। এ কারণে আগের সার্ভার চালু করা যাচ্ছে না। প্রায় ছয় বছর ধরে অকার্যকর থাকায় পুলিশের অনলাইন জিডি কার্যকম স্থবির হয়ে পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে অনলাইন জিডির জন্য আপডেট ভার্সন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর এবং ডিএমপি সদর দফতর সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর দেশে ফেরার পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক হবে। বৈঠকে আপডেট ভার্সনে অনলাইন জিডি কার্যক্রম উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।কোন থানায় অনলাইন জিডি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতর চাচ্ছে ডিএমপির যে কোনো থানা থেকে এর উদ্বোধন করা হোক। ময়মনসিংহ জেলার এসপি শাহ মো. আবিদ হোসেন চাচ্ছেন তার জেলার যে কোনো একটি থানা থেকে এর উদ্বোধন করা হোক। শাহ আবিদ হোসেন যখন কুমিল্লার এসপি ছিলেন তখন (২০১৬ সালের নভেম্বর) কুমিল্লা থেকে অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদন পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের অধীনে ২০১০ সালের ৩ মার্চ উত্তরা মডেল থানায় অনলাইন জিডির উদ্বোধন করা হয়। ওই বছরের এপ্রিলে ডিএমপির সব থানায় অনলাইন জিডির সেবা চালু করা হয়। সাধারণ বিষয়ে থানায় গিয়ে সময় নষ্ট বা হয়রানির শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে থানায় থানায় এ সেবা চালু করা হয়। চালুর পরবর্তী তিন বছরে লক্ষাধিক জিডি হয় অনলাইনে। সার্ভার ব্লক থাকায় অনলাইন জিডির সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
অনলাইন জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ডিআইজি (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অনলাইন জিডি খুবই ভালো চলেছে। ২০১৩ সালেও এত সমস্যা ছিল না। কিন্তু ২০১৩ সালের পর বেশি সমস্যা তৈরি হলে আমরা সার্ভারে গতি কমিয়ে দিই। পাশাপাশি মডিফিকেশনের কাজ ভালোভাবে শুরু করি। এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মডিফিকেশন এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ কার্যক্রমের ওপর একটি প্রতিবেদন পুলিশের কাছে এসেছে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ডিআইজি হাবিবুর রহমান জানান, নতুন সিস্টেমে অনলাইন জিডি করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে অনলাইনে কিছু বাধ্যতামূলক তথ্য চাওয়া হবে। প্রথমেই এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নম্বর চাওয়া হবে। এনআইডি নম্বর সঠিক হলে নাম ঠিকানা চাওয়া হবে। সঠিক নাম-ঠিকানা পুলিশের হাতে আসার পরই জিডির বিষয়বস্তু লিখে মেইল পাঠাতে পারবেন ওই ব্যক্তি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট শারমিন আফরোজ বলেন, অনলাইন জিডি চালুর পর প্রথম অবস্থায় আমরা ব্যাপক সাড়া পাই। কিছুদিন যেতে না যেতেই নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মেইল পাঠায়। অপ্রয়োজনীয় মেইল পাঠায়।
দুষ্টামি করে মেইল পাঠায়। উল্টা-পাল্টা মেইল আসার কারণে পুলিশ অনলাইন জিডির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। দেখা যায়, ২০টি মেইল চেক করলে একটি ভালো মেইলও পাওয়া যায় না। প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে জিডি করার জন্য মেইল আসা একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে বাজে মেইল আসতেই থাকে।
এতে গোটা প্রক্রিয়াটি হযবরল অবস্থায় চলে যায়। তখন পুলিশ সদর দফতরকে বলি, এভাবে অনলাইন জিডি চালানো যাবে না।এ কারণে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সদর দফতর নতুন করে ভাবতে থাকে। নতুন ভাবনার অংশ হিসেবেই অনলাইন জিডির আপডেট ভার্সন চালু হচ্ছে। এ বিষয়ে ১৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। এ প্রক্রিয়ায় ডিএমপি পুরোপুরি প্রস্তুত। পুলিশ সদর দফতর যেদিন এটা উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করবে সেদিন থেকেই আপডেট ভার্সনে অনলাইন জিডির কার্যক্রম চালু করতে পারব।
শারমিন আফরোজ আরও বলেন, খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কারও নামে ৫-৭টি মেইল পাঠানো হলে লোকটি সম্পর্কে পুলিশের নেতিবাচক ধারণা জন্মায়। তখন পুলিশ ওই লোকের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করে। পরে দেখা যায় লোকটি অহেতুক হয়রানির শিকার হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যমান ব্যবস্থায় যে প্রক্রিয়ায় অনলাইন জিডির সিস্টেম রয়েছে তাতে পুলিশের পক্ষে জিডিকারীর নাম পরিচয় জানার সুযোগ থাকে না।
কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যের বিরুদ্ধে জিডি করার সুযোগ পায়। এ কারণে আমরা পুলিশ সদর দফতরকে বলেছি, এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হল জিডিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংযুক্ত করা।যেসব জিডিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য থাকবে ওইসব জিডি নিয়ে আমরা কাজ করতে পারব। এরপর পুলিশ সদর দফতর বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকে। আপডেট ভার্সনে কেউ জিডি করতে চাইলে প্রথমেই আমাদের সামনে জিডিকারীর নাম-পরিচয় (জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য) ভেসে আসবে।
পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি মনিবুর রহমান বলেন, এবারের অনলাইন জিডির প্রক্রিয়াটি খুবই ভালো। আশা করা যাচ্ছে, নতুন পদ্ধতিতে অনলাইন জিডি চালু করা হলে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। টুকটাক সমস্যা দেখা দিলে সেসব সমাধান করা যাবে। কাজ শুরু করার আগে তো আমরা সমস্যা বুঝতে পারব না। ২০১০ সালে কাজ শুরু করতে না পারলে আজকে এ আপডেট হতো না। তিনি বলেন, অনলাইন জিডি কার্যক্রম বেশ কিছুদিন ধরে স্থগিত আছে। তাই নতুন ভার্সনে অনলাইন জিডি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। নতুন ভার্সনের জিডিতে এনআইডির লিংক থাকায় কেউ হয়রানিমূলক জিডি করতে সাহস পাবে না।
পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র, ব্যাংকের চেকবই, সার্টিফিকেট বা অন্য যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দলিল হারালে এবং গৃহকর্মী, দারোয়ান, কেয়ারটেকার, নৈশপ্রহরীর অ-আমলযোগ্য অপরাধের বিষয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুলিশ সহজে সেবা দিতে পারত।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.