Tuesday, March 18.

সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    প্লাস্টিক যখন পরিবেশবান্ধব

    নাইরোবিতে লর্না রুটোর প্লাস্টিকের কারখানা ভূমিকা রাখছে বনভূমি রক্ষায়

    প্লাস্টিকের গয়না তৈরির পুরোনো শখটিকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে ব্যাংকের ভালো বেতনের চাকরিটা ছেড়েই দিলেন লর্না রুটো। মেয়েটির মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলে ধরে নিলেন অনেকেই। ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের প্রায় ছয় হাজার মার্কিন ডলার তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেন। প্রতিষ্ঠা করলেন প্লাস্টিক থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরির এক ছোট কারখানা।
    ২০১০ সালের মার্চে ইকোপোস্ট লিমিটেড নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রারম্ভিক যাত্রায় যুক্ত হলেন রুটো। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে দীর্ঘ একধরনের দণ্ড তৈরি শুরু করে ইকোপোস্ট। বেড়া দেওয়া, রাস্তার সংকেত আর কুকুর বা মুরগির বাসা তৈরির কাজে এসব দণ্ড ব্যবহৃত হয়।
    কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে রুটোর ওই কারখানার অবস্থান। সফল এই উদ্যোক্তা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভালো চাকরি ছাড়ার সময় অনেকেই আমাকে স্বাগত জানাননি। বিশেষ করে আমার বাবা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনেরা। স্কুলে পড়ার সময় আমি প্লাস্টিক গলিয়ে বিভিন্ন আকৃতির পাত্রে রেখে নানা রকম জিনিস তৈরি করতাম। এভাবে কিছু গয়না বানিয়ে বন্ধুদের কাছে বিক্রিও করতাম।’
    নাইরোবির আফ্রিকা নাজারেন ইউনিভার্সিটি থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক রুটো। প্লাস্টিক গলিয়ে আবার ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার মাধ্যমে তিনি একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছেন: প্লাস্টিকও পরিবেশের জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ, প্লাস্টিক বর্জ্যকে সব সময় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কেনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল রক্ষায় সেই বর্জ্যই এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ৩০ বছর বয়সী তরুণী রুটো বলেন, রূপান্তরিত প্লাস্টিক থেকে একধরনের বিকল্প কাঠ তৈরি হচ্ছে। এতে আবার কমে আসছে কাঠ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গাছ কাটার হার। ফলে রক্ষা পাচ্ছে অরণ্যের সবুজ।

    বনভূমি সংরক্ষণের বিষয়টি কেনিয়ার জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ দেশটিতে বনাঞ্চলের পরিমাণ মোট ভূমির ১০ শতাংশেরও কম। ইকোপোস্ট প্রতিদিন ৭৬৯ দশমিক ২ কিলোগ্রাম পরিমাণ প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য রূপান্তরের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। তারা মাসে ২০ টন বর্জ্য রূপান্তর করে এবং প্রতিদিন ১০০টি প্লাস্টিক দণ্ড তৈরি করে। এতে দিনে গড়ে ১০টি পূর্ণবয়স্ক গাছ রক্ষা পায়। রুটোর সেই প্লাস্টিক দণ্ডের ব্যবহার নানাবিধ ঘরবাড়ি তৈরির খুঁটির সহায়ক থেকে শুরু করে গোয়ালঘরের ছাউনি ও গ্যারেজ পর্যন্ত।
    কেনিয়া ফরেস্ট সার্ভিসের (কেএফএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে ঘন বনাঞ্চলের পরিমাণ মোট ভূমির মাত্র আড়াই শতাংশ, যা জাতিসংঘ-নির্ধারিত প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। ইকোপোস্টের কার্যক্রমের প্রভাবে দেশটিতে ৩৫০ একর জঙ্গল রক্ষা পেয়েছে। অটোয়াভিত্তিক পরিবেশ সংরক্ষণবাদী সংস্থা কানাডিয়ান ফরেস্ট অ্যাসোসিয়েশন এই হিসাব দিয়েছে। তাদের মতে, এক একর নতুন বনভূমি প্রতিবছর গড়ে আড়াই টন কার্বন নির্গমন প্রতিরোধ করতে পারে।
    চমকপ্রদ এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্লাস্টিক আসলে বনভূমি রক্ষার লড়াইয়ে একধরনের যোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। রুটো বলেন, ইকোপোস্ট কাঠের বিকল্প তৈরির মাধ্যমে শক্ত ও নরম কাঠসমৃদ্ধ বৃক্ষনিধনের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সমর্থ হয়েছে। আর তাঁদের পণ্যটি পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন মানসিকতা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।
    পরিবেশ থেকে প্রতিবছর ২৪০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ এবং তা থেকে একটি ব্যবহারোপযোগী জিনিস উৎপাদনের মাধ্যমে ইকোপোস্টের কারখানাটি তৈরি করছে কাঠের বিকল্প উপাদান, যা বেড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যাত্রা শুরুর পর থেকে কেনিয়ার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও আবর্জনার স্তূপ থেকে প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ১৫ লাখ টন প্লাস্টিক আবর্জনা সরিয়েছে।
    রুটো বলেন, নাইরোবিতে প্লাস্টিক গলিয়ে আবার ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার ব্যবসায় তাঁকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন: বিদ্যুৎবিভ্রাট, নিরাপত্তাহীনতা ও পুরুষনিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক পরিমণ্ডল। তার পরও প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে এক লাখ ৬৫ হাজার ডলারের ব্যবসা করেছে। তাঁদের তৈরি প্লাস্টিক দণ্ড ব্যবহারে খরচ অনেক কমে আসে। কারণ, এগুলো রাসায়নিক দূষণমুক্ত, টেকসই এবং রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগের প্রয়োজন পড়ে না বললেই চলে। এসব দণ্ড রাস্তা থেকে চুরি করে নিয়ে কেউ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে না।
    পরিবেশবান্ধব ব্যবসার পাশাপাশি কেনিয়ার দরিদ্র ও প্রান্তিক লোকজনের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছে ইকোপোস্ট। নাইরোবির রুয়ারাকা জেলার বাবা ডোগো সড়কে প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় বর্তমানে ৪০ জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন। আরও প্রায় ৫০০ জন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে জীবিকার সংস্থান করছেন। মানুষের অব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, নানা রকমের পাত্র, পলিথিনের ব্যাগ ইত্যাদি বর্জ্য কিনে নেয় ইকোপোস্ট। এতে করে সংশ্লিষ্ট বর্জ্য সংগ্রাহক ও বিক্রেতারও উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !