যাকাত কি ও কিভাবে অাদায় করতে হয়?
যাকাত (আরবি: زكاة zakāt, "যা পরিশুদ্ধ করে", আরও আরবি: زكاة ألمال, "সম্পদের যাকাত") হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমাতিক্রমকারী সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা (১/৪০).অংশ বছর শেষে বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাতই শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। উল্লেখ্য, নিসাব পরিমাণ হলেই যাকাত কোনো ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হয় এবং তখন তার উপর 'যাকাত' নামক ফরয বর্তায়; অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরয। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার।কুরআনে নামাজের পরেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পূর্ন বিষয় হিসাবে উল্লেখ এই যাকাত।
যাকাত অাদায়ের উপকারীতাঃ
১. গরীবের প্রয়োজন পূর্ণ করা; অভিশপ্ত পুঁজিতন্ত্রের মূলোৎপাটন করা; সম্পদ কুক্ষিগত করার মানসিকতাকে শেষ করে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করা।
২. মুসলমানদের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করা; দারিদ্র বিমোচনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩. চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই সহ সবরকম অভাবজনিত অপরাধের মূলোৎপাটন করা। গরীব-ধনীর মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করা।
৪. সম্পদের বরকত ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি। নবীজী স. বলেন, مال ما نقصت صدقة من যাকাতের সম্পদ কমে না। [মুসলিম:৬৭৫৭, তিরমিযী:২০২৯] অর্থাৎ, হয়ত দৃশ্যতঃ সম্পদের পরিমাণ কমবে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা এই স্বল্প সম্পদের মাঝেই বেশি সম্পদের কার্যকারী ক্ষমতা দিয়ে দিবেন।
৫. সম্পদের পরিধি বৃদ্ধি করা। কেননা সম্পদ যখন যাকাতের মাধ্যমে অভাবীদের মাঝে বণ্টিত হয়, তখন এর উপকারিতার পরিধি বিস্তৃত হয়। আর যখন তা ধনীর পকেটে কুক্ষিগত থাকে, তখন এর উপকারিতার পরিধিও সঙ্কীর্ণ হয়।
৬. জাকাত প্রদানকারীর দান ও দয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়া; অন্তরে অভাবীর প্রতি মায়া-মমতা সৃষ্টি হওয়া।
৭. কৃপণতার ন্যায় অসৎ গুণ থেকে নিজেকে পবিত্র করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, تطهرهم وتزكيهم بها أموالهم صدقة خذ من তাদের সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করো; যেন তুমি সেগুলোকে এর মাধ্যমে পবিত্র ও বরকতময় করতে পার। [৯:১০৩]
৮. সর্বোপরি আল্লাহর বিধান পালন করার মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করা।
যাকাত অাদায়ের নিয়মঃ
১. স্বর্ণ ৮৫ গ্রাম (৭ ১/২ভরি) কিংবা রূপা ৫৯৫ গ্রাম (৫২ ১/২ তোলা) অথবা স্বর্ণ বা রূপা যে কোন একটির নিসাবের মূল্য পরিমাণ টাকা-পয়সা বা ব্যবসায়িক সামগ্রীকে যাকাতের নিসাব বলে। মনে রাখতে হবে, বৎসরের শুরু ও শেষে এ নিসাব বিদ্যমান থাকা জরুরী। বৎসরের মাঝখানে এ নিসাব পূর্ণ না থাকলেও যাকাত প্রদান করতে হবে। জমি, বাড়ি-ঘর, দোকান ঘর, কারখানা, অফিসের আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম, যানবাহন ইত্যাদির সম্পদের উপর যাকাত নেই।
২. শেয়ার হতে উপার্জিত মোট বার্ষিক আয় বা লভ্যাংশের উপর ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
৩. ঋণগ্রহীতার ঋণের টাকা মোট যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে।
৪. জমিতে বা বাগানে পরিশ্রম দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ২০ ভাগের ১ ভাগ।যেমন- ২০ মন ধান বা গম বা ভূট্টার ১ মন যাকাত দিতে হবে।
৫. অার জমিতে বা বাগানে বিনা পরিশ্রম দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ। যেমন- বাড়ির অাঙ্গিনার আম বা কাঠান গাছের বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত ১০ টি অাম বা কাঁঠালের বা ভূট্টার ১ মন যাকাত দিতে হবে।
মুসলমানদের জন্য যাকাত প্রদান খুবই জরুরী, যাকাত আদায় করলে আমাদের সম্পদ পবিত্র হয়, ফলে অন্যান্য এবাদত মহান আল্লাহর কাছে আরো বেশি গ্রহনযোগ্য হয়, আর জেনে-বুঝে যাকাত আদায় না করা কবীরা গুনাহ|
২. শেয়ার হতে উপার্জিত মোট বার্ষিক আয় বা লভ্যাংশের উপর ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
৩. ঋণগ্রহীতার ঋণের টাকা মোট যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে।
৪. জমিতে বা বাগানে পরিশ্রম দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ২০ ভাগের ১ ভাগ।যেমন- ২০ মন ধান বা গম বা ভূট্টার ১ মন যাকাত দিতে হবে।
৫. অার জমিতে বা বাগানে বিনা পরিশ্রম দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ। যেমন- বাড়ির অাঙ্গিনার আম বা কাঠান গাছের বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত ১০ টি অাম বা কাঁঠালের বা ভূট্টার ১ মন যাকাত দিতে হবে।
মুসলমানদের জন্য যাকাত প্রদান খুবই জরুরী, যাকাত আদায় করলে আমাদের সম্পদ পবিত্র হয়, ফলে অন্যান্য এবাদত মহান আল্লাহর কাছে আরো বেশি গ্রহনযোগ্য হয়, আর জেনে-বুঝে যাকাত আদায় না করা কবীরা গুনাহ|
যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ
পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাওবা যাকাত বন্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারন করেছেন। এই খাতগুলো সরাসরি কুরআন দ্বারা নির্দ্দিষ্ট, এবং যেহেতু তা আল্লাহ'র নির্দেশ, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে যাকাত, ইসলামী শরিয়তসম্মত হয় না।
- ফকির (যার কিছুই নেই)
- মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)
- যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই)
- (অমুসলিমদের) মন জয় করার জন্য
- ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)
- ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশী
- (স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি
- মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.