রীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা সোনাগাজীর ওসি প্রত্যাহার, মামলা পিবিআইয়ে
ফেনীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সোনাগাজী থানার ওসি (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর মামলা স্থানান্তর করা হয়েছে পুলিশ ইনভেস্টিগেটিভ ব্যুরোতে (পিবিআই)।পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে বুধবার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফেনী জেলা পুলিশ সুপার এএসএম জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি জানান, এখন থেকে স্পর্শকাতর এ মামলাটি তদন্ত করবে পিবিআই। ফেনীর পিবিআইপ্রধান এএসপি মনিরুজ্জামানকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।এদিকে এ ঘটনায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিকে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার এজহারভুক্ত আসামি জোবায়ের আহমেদকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতার জোবায়ের সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতলি এলাকার আবুল বাশারের ছেলে। আর পপি অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর সহপাঠী।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক কামাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তারা জোবায়েরকে গ্রেফতার করেন। পরে রাতেই সোনাগাজী পৌর এলাকার চনচান্দিয়ার বাসা থেকে পপিকে আটক করা হয়।
এ নিয়ে মামলায় এজাহারভুক্ত তিনজনসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হলো; যাদের মধ্যে সাতজন কারাগারে এবং বাকিদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ওই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে সোনাগাজী থানায় সোমবার দুপুরের পর মামলা করেন তার ভাই। ওই দিন রাতেই মামলার এজাহারে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ আটজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে পুলিশ। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও চারজনকে।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা পরিদর্শনের পর চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খোন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, মাদ্রাসাছাত্রী অগ্নিদগ্ধের ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারাই জড়িত থাকুক কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এ ঘটনার তদন্তে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
প্রসঙ্গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।তাকে লাইফসাপোর্ট দেয়া হয়েছে। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে মঙ্গলবার তার অস্ত্রোপচারও হয়।অস্ত্রোপচারের পরও তাকে নিয়ে শঙ্কা কাটেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে।
সূত্র- যুগান্তর
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.