মার্কিন সিটিজেনশিপের আবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফেঁসে গেলেন ভারতীয় নাগরিক
সত্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে এসাইলাম লাভের প্রক্রিয়ায় সিটিজেনশিপের আবেদন করে ফেঁসে গেলেন ভারতীয় পাল সিং ওরফে সুরিন্দর সিং ওরফে হারপাল সিং (৬৭)। নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের ইউএস এটর্নী ক্রেইগ কারপেনিটো ১২ এপ্রিল জানিয়েছেন এ তথ্য। ৯ এপ্রিল নিউজার্সির ফেডারেল কোর্টে বিচারপতি ইসথার সালাসের এজলাসে তাকে হাজির করা হলে প্রতারণা মূলকভাবে গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর সিটিজেনশিপ গ্রহণের আবেদন করার কথা স্বীকার করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯২ সালের মার্চে লসএঞ্জেলেস এয়ারপোর্টে অবতরণের পর তিনি ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করেন। সে সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন যে, বহনকৃত ভারতীয় পাসপোর্টে ভিসার যে সিল রয়েছে সেটি জাল। তার আবেদন নাকচ করে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় তিনি এসাইলাম প্রার্থনা করেন। এসাইলামের আবেদন বিবেচনাধীন থাকায় তাকে বন্ডে মুক্তি দেয়া হয়। পরের বছরের জুন মাসে নিউইয়র্কে একজন ইমিগ্রেশন জজ তার এসাইলামের আবেদন নাকচ করেন। একইসাথে তাকে আইসের কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয় যাতে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া যায়। মামলার বিবরণে আরও জানা যায়, ১৯৯৫ সালের আগস্টে এই ব্যক্তি নাম পাল্টিয়ে হারপাল সিং নাম ধারণ করে এসাইলামের আবেদন করেন। সে আবেদনে উল্লেখ করেন যে, ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন। সে সময় তিনি আগে প্রকৃত নামে করা এসাইলাম নাকচ তথ্য উল্লেখ করেননি। ১৯৯৬ সালের মার্চে আরেকজন ইমিগ্রেশন জজ তার আবেদন নাকচ করেন এবং পূর্বের মত তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয় যাতে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু তিনি সে নির্দেশ অমান্য করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের মে মাসে সুরিন্দর সিং নাম ধারণ করে আবারো এসাইলামের আবেদন করেন এই ব্যক্তি। এ সময় তিনি দাবি করেন যে, ১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন। সে সময়েও তিনি আগে দু’বার ভিন্ন নামে এসাইলাম প্রার্থনা এবং তা নাকচ হয়ে যাবার তথ্য প্রকাশ করেননি। সর্বশেষ আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, ১৯৯৪ সালে তাকে ভারতীয় বাহিনীর বর্বরোচিত আচরণের শিকার হতে হয়। অথচ সে সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই বাস করছিলেন অথবা ভারতে ছিলেন না। ১৯৯৬ সালের জুনে ইমিগ্রেশন এ্যান্ড ন্যাচারালাইজেশন সার্ভিস তার এ আবেদন মঞ্জুর করে। অর্থাৎ মিথ্যা তথ্যকে সত্য প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন ভুয়া নাম ব্যবহারকারি পল সিং। এর ১৯ বছর পর ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সিটিজেনশিপের আবেদন করেন তিনি। সেটি ছিল সুরিন্দর সিং নামে। এ আবেদনের সময় তিনি আগেকার আবেদন নাকচ এবং ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহারের সকল তথ্যই অস্বীকার করেন।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য নিউজার্সির নিউয়ার্কে ডাকা হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। এটি অনুষ্ঠিত হয় শপথ গ্রহণের পর অন রেকর্ডে। সাথে ছিলেন একজন পাঞ্জাবী অনুবাদক ও আইনজীবী। প্রশ্নের উত্তর দানে সরিন্দর সিং আগে নাকচ হওয়া আবেদন, বহিষ্কারের নির্দেশ লংঘন এবং একাধিক নাম ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন। উল্লেখ্য যে, এসাইলামের আবেদন, লসএঞ্জেলেস এয়ারপোর্টে অবতরণের পর নেয়া টিপ সই পরীক্ষার পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের বায়ো মেট্রিক সাপোর্ট সেন্টারের কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন যে, পল সিং, হারপাল সিং এবং সরিন্দর সিং পৃথক কোন ব্যক্তি নন, একই ব্যক্তি। সে সময় আরো উদঘাটিত হয় যে, ১৯৯২ সালের মার্চেও পাল সিং নামে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার চেষ্টা করেছিলেন।
হারপাল সিংকে গ্রেফতার করে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। ইউএস এটর্নী জানিয়েছেন, সিটিজেনশিপ গ্রহণের জন্যে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার এ মামলায় তার সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তার বিরুদ্ধে সাজার মেয়াদ ঘোষণা করা হবে ৫ আগস্ট। এদিকে, ইমিগ্রেশন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, টেক্সাসের রাস্ক কাউন্টিতে ২০০২ সাল থেকে বসবাস করছেন মেক্সিকোর নাগরিক বালটেজার এরিয়েটা-লারা (৫২)। যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের কোন কাগজই তার নেই। এমনি অবস্থায় প্রতারণামূলকভাবে একজন ইউএস সিটিজেনের বিস্তারিত তথ্য চুরি করে স্টেট আইডি সংগ্রহ করেন। এরপর সেই আইডি দিয়ে ইউএস পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন ২০০৭ সালে। এই পাসপোর্টে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বেশ ক’বার মেক্সিকোতে যাতায়াত করেছেন। এরপর তিনি তার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেন। সে সময়ে সংশ্লিষ্টরা অনুধাবনে সক্ষম হন যে, এটি প্রতারণামূলকভাবে ইস্যু হয়েছিল। তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়ার পর দোষ স্বীকার করেছেন বলে টেক্সাস ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট ইউএস এটর্নী যোসেফ ডি ব্রো ২ এপ্রিল জানিয়েছেন। এই মামলায় তার সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা হতে পারে বলে এই এটর্নী উল্লেখ করেন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.