রাশিয়ার এস- ৪০০ না মার্কিন এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণ কে সর্বাধুনিক?
বিশ্বে সবচাইতে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন বিমান বিধ্বংসী ও ক্ষেপনাস্ত্র বিধ্বংসী সিস্টেম এস-৪০০ । শত্রুপক্ষের জন্য মহা অাতঙ্ক ক্ষেপনাস্ত্রটি দুনিয়াব্যাপী সাড়া জাগিয়েছে। রাশিয়ার তৈরী অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ কে বর্তমান বিশ্বে একমাত্র কর্যকর ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থা বিবেচনা করা হয় । উল্লেখ্য, রাশিয়ার এস-৩০০ আপগ্রেড ভার্সন এস-৪০০ । এই ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে ড্রোন, বোমারু বিমান, স্টেলথ, সেমি স্টেলথ, ক্রুজ মিসাইল দ্রুত গতির রকেট জেট ধ্বংশ করা যাবে । এস-৪০০টি ৪’শ কিলোমিটার দূরের বিমান, ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র আকাশে থাকা অবস্থান ধ্বংশ করতে সক্ষম । মার্কিন এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপনাস্ত্রের থেকে আড়াইগুন বেশী দূরত্বে আঘাত হানা যায় ।
১৯৯০ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্প এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০ নির্মাণ করে । ২০০৭ সালে ১ জুলাই রাশিয়ান আর্মড ফোর্স ইলেকট্রোস্টাল শহরে সর্ব প্রথম এস-৪০০ স্থাপন করা হয় । এস-৪০০ তিন ধরনের ক্ষেপনাস্ত্রে অাঘাত হানতে সক্ষম । একটি ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থায় ৮টি স্তর রয়েছে । এই সিস্টেম ৭২টি লাঞ্চারকে একসঙ্গে নিয়ন্ত্রন করে । ৩৮৪টি মিসাইল একসঙ্গে নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা রয়েছে । বহুদিক থেকে আক্রমন ছুটে এলেও এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রুখে দিতে পারবে । ৩’শটি টার্গেটের উপর নজরদারি চালাতে সক্ষম এবং স্বয়ংক্রিয় মিসাইল ব্যাটারী একসঙ্গে ৩৬টি ক্ষেপনাস্ত্র ছুঁড়তে পারে । ৪০০কিলোমিটার পাল্লার মধ্যে ক্ষেপনাস্ত্র নিখুঁত ও কার্যকর । স্টিলথ ফাইটার বিমান নিজের অস্তিত্বকে এতটাই লুকিয়ে রাখতে সক্ষম যে, সাধারন রাডারে ধরা পড়েনা । সে ক্ষেত্রে এস-৪০০ ক্ষেপনাস্ত্র সিস্টেমে এমন এক শক্তিশালী রাডার সুস্টেম – যার মাধ্যমে স্টিলথ বিমানও ধরা পড়বে ।
রাশিয়া পঞ্চম প্রজন্মের জন্য এস-৫০০ তৈরী করেছে । এস-৫০০ খুবই শক্তিশালী এবং ৮/৯’শত কিলোমিটার দূরের বস্তুকে টার্গেট করা যায় । এই সিস্টেম এতই শক্তিশালী ও কার্যকর যে, সবকিছুকে ধ্বংশ করতে সক্ষম । এরমধ্যে আন্তমহাদেশীয় রকেটের যুদ্ধাস্ত্র এমনকি পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহও । রাশিয়া তার বিস্বস্থ মিত্র চীনে এস-৪০০ রফতানি করেছে । এছাড়া তুরস্কের সাথে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে । চলতি বছরের মার্চ মাসে তুরস্ক এস-৪০০ চালান গ্রহন করেছে । এদিকে এস – ৪০০ ক্রয়কে কেন্দ্র করে তুরস্ক – আমেরিকা কুটনৈতিক লড়াই চলছে । যেহেতু তুরস্ক ন্যাটো সামরিক জোটের প্রভাবশালী সদস্য । ন্যাটো সনদে সদস্যদেশ ব্যতীত অন্য কোন দেশ থেকে অস্ত্র ক্রয়ের নিয়ম না থাকলেও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরাদোগান ন্যাটোর উপর নির্ভরশীল না থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়ে রাশিয়া ও চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ন্যাটাে ভুক্ত দেশ হিসেবে তুরস্ক নয় গ্রীস সর্বপ্রথম এস-৪০০ রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করেছে। তাই তুরস্ক বলছে গ্রীস পারলে তারাও এস-৪০০ ক্রয় করার অধীকার রাখে। অপরদিকে চলতি বছরের শেষদিকে এস-৪০০ সরবরাহে রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে চুক্তি হবার কথা রয়েছে ।
পাকিস্তান এস-৪০০ ক্রয়ে রাশিয়ার দারস্থ হয়েছে । চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর দুলিয়াতিতে সমঝোতা চলছে । অপরদিকে কাতার রুশ এস-৪০০ ক্রয়ের ঘোষনা দিয়েছে । মূলত: সৌদী আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর ও ইসরাইলের বিষয় মাথায় রেখে কাতার এস-৪০০ক্রয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । একাজে তুর্কী প্রেসিডেন্টকে ব্যবহার করছে কাতার। ইরান চলতি বছর এস-৩০০ চালান গ্রহন করেছে । ইরানী আকাশসীমায় এখন শত্রু বিমান কিংবা ক্ষেপনাস্ত্র আঘাত হানার পূর্বে অন্তত দশবার ভাবতে হবে । রাশিয়ার এস-৩০০, এস-৪০০ ও এস-৫০০ ক্ষেপনাস্ত্র কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন । শক্তিশালী ক্ষেপনাস্ত্র সিস্টেম মার্কিন বিরোধী দেশের হাতে থাকলে ওয়াশিংটনের মোড়লগিরি বহুলাংশে হ্রাস পাবে । আর তাই তুরস্ক, পকিস্তান ও কাতার যাতে রুশ ক্ষেপনাস্ত্র সংগ্রহ করতে না পারে – সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র হুমিক ধমকি অব্যাহত রেখেছে । রাশিয়া তার বিস্বস্থ মিত্র, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের নিকট ক্ষেপনাস্ত্র বিক্রির পথ খোলা রেখেছে । অপরদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিন এমন এক ব্যক্তি – সৌভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার করুণ দৃশ্য বার বার তাকে আঘাত করছে ।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.