শেল্টার হাউসের সিঁড়িতে এখনও পোড়া দাগ
নুসরাত জাহান রাফিকে মাদ্রাসার যে শেল্টার হাউসের ছাদে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল, সে হাউসের সিঁড়িতে এখনও রয়েছে নৃশংসতার দাগ। দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়ার পরপরই সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করেছিল রাফি।শুক্রবার দুপুরে ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা শেল্টার হাউসের পুরো সিঁড়িতেই রাফির জামার পোড়া অংশ লেগে আছে। নিচতলায় নামাজের বিছানায়ও পোড়া দাগ লেগে রয়েছে। দাগগুলো এখনও নির্মমতার সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
এদিন দুপুরের পর সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরদান্দিয়া গ্রামের ছোট মৌলভী বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রাফির রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো হাতড়ে বারবার বিলাপ করছেন মা শিরিন আক্তার। রাফির ঘরে ঢুকতেই দেখা যায়, পূর্বপাশে একটি ছোট্ট গোছানো টেবিল। সেখানে গুছিয়ে রাখা আছে রাফির বই আর খাতা। এগুলো একবার হাতে নিচ্ছেন, আবার বুকে তুলে নিচ্ছেন। রাফির প্রসঙ্গ তুলতেই শিরিন আক্তার জানান, মাকে ভালোবেসে রাফি কবিতা লিখেছিল। সেই কবিতা সবাইকে দেখান তিনি। রাফির মতো যেন কারো এমন পরিণতি না হয়।তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে সাহসী নারীর প্রতীক। নারীরা দুর্বল নয়। সারা দেশে যারা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন তাদের রাফির মতো প্রতিবাদী হতে হবে।’
ঘরের বাইরে বসেছিলেন রাফির বাবা একেএম মুসা মানিক। তিনি বলেন, ‘আশা ছিল মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। কিন্তু সব কেড়ে নিল ওই লম্পট অধ্যক্ষ।’ এ সময় তিনি রাফির ওপর যৌন নিপীড়নকারী অধ্যক্ষ ও তার দোসর সন্ত্রাসীদের ফাঁসি দাবি করেন।রাফির বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘আমার বোনকে নিয়ে আমরা গর্বিত। এমন প্রতিবাদী বোনই আমরা চেয়েছিলাম। সে হয়তো আজ নেই, কিন্তু কীভাবে নিপীড়কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হয় তা সে দেখিয়ে গেছে।’
নুসরাতের মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি শোকাহত হয়েছে ছোটভাই রায়হান। মাত্র দুই বছরের বড় নুসরাতের সঙ্গে মাদ্রাসায় যাওয়া আসা করত সে। ভাই-বোনের মধ্যে সবসময় খুনসুটি লেগেই থাকত। তাই চোখের সামনে বোনের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে সে। রায়হানও সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র। জুমার নামাজের পর রাফির কবরের পাশে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায় রায়হানকে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.