ভারতের লোকসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে নারীরা!

ভারতীয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় বরাবরই কম। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে যেটা কোনমতেই গর্বের বিষয় নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই নারীরা কি ২০১৯ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে? উত্তর হল ‘অবশ্যই’।প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনে নারী ভোটারদের এই উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই প্রমাণ করে যে আসন্ন নির্বাচনে তারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নারী ভোটারদের শতকরা হার একধাপে অনেকটাই বৃদ্ধি পায়-যেটা কয়েক দশক ধরে চলমান পুরুষ ও নারী ভোটারদের মধ্যে পার্থক্য ঘুচিয়ে দেয়। তাছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয় রাজনীতির গতিশীলতা যেভাবে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন রেখেছে-তাতে মনে করা হচ্ছে নারী ভোটাররা এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পুরুষ ভোটারদের শতকরা হার ছিল ৬৭.০৯ শতাংশ-যা নারী ভোটারদের থেকে মাত্র ১.৭৯ শতাংশ বেশি। এই সময়কালে নারী ভোটার ছিল ৬৫.৩০ শতাংশ। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর দেশজুড়ে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫২ সালে। কিন্তু সেসময় লিঙ্গ ভেদে পুরুষ-নারী ভোটারের শতাংশের হারের কোন পরিসংখ্যান ছিল না। কিন্তু ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পুরুষ ও নারী ভোটারের সংখ্যা আলাদা করে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশন। আর সেই থেকে গত লোকসভার নির্বাচন পর্যন্ত পুরুষ ও নারী ভোটারের মধ্যে পার্থক্যটা সর্বোচ্চ কমেছে। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে পুরুষ ভোটার ছিল ৬৬.৭৩ শতাংশ এবং নারী ভোটার ছিল ৫৫.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ পুরুষদের থেকে নারী ভোটার কম ছিল শতকরা ১১.২৫ শতাংশ। শেষ তিন বছরের মধ্যে ২০০৪ সালে পুরুষ ও নারী ভোটারের মধ্যে পার্থক্য ছিল ৮.৩৬ শতাংশ। ২০০৯ সালে পার্থক্য কমে হয় ৪.৩২ শতাংশ। আগামী কয়েকদিন পরেই শুরু হতে চলেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। নারী ভোটারদের বৃদ্ধির হার দেখে মনে করা হচ্ছে এই নির্বাচনে পুরুষ ভোটারের সংখ্যাকে ছাপিয়ে যেতে পারে নারী ভোটারের সংখ্যা।
তবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ১৫টি রাজ্য আছে যেখানে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। যার মধ্যে লাক্ষাদ্বীপ, দাদরা ও নগর হাভেলি, পডুচেরি, দমন দিউ, মনিপুর, গোয়া অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িষ্যা, চন্ডিগড়, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, মেঘালয়, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, বিহার অন্যতম। এই আট রাজ্য মিলিয়ে রয়েছে রয়েছে ১৩৫টি লোকসভার আসন (২৫ শতাংশ)।আবার ৮টির বেশি রাজ্য আছে যেখানে পুরুষদের তুলনায় নারী ভোট বেশি পড়েছিল বা সমান-সমান ছিল। এরমধ্যে রয়েছে পডুচেরি, কেরল, গোয়া, মনিপুর, দমন ও দিউ, মেঘালয়, লাক্ষাদ্বীপ এবং তামিলনাড়ু। ৮ রাজ্য মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ৬৮টি, যা সংসদের মোট আসনের ১২.৫ শতাংশ।
প্রতি বছর নারী ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধিতে একটা বিষয় পরিষ্কার যে আগামী দিনে বিশেষ করে দেশের রাজনীতিতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে নারী সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, তাদের কর্মসংস্থান বা নারীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত কোন অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার মতো বিষয়গুলিও দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ফলে দেশে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নারীদেরও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে আরও বেশি সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত।আর ভোটের বাজারে সেই বিপুল নারীশক্তিকে উপেক্ষা করার ঝুঁকি নিচ্ছে না কোনও রাজনৈতিক দলই। নারী ভোটারদের কথা মাথায় রেখে শীর্ষ রাজনীতিক দলগুলির পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলিও এবারের নির্বাচনে একাধিক নারীকে প্রার্থী করেছে। যার মধ্যে সবার উপরে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ৪২ আসনের মধ্যে ১৭ নারী প্রার্থী দিয়েছে (৪০.৫ শতাংশ), বিজেডি ৭/১৯ (৩৬.৮ শতাংশ), সপা ৫/২৯ (১৭.২ শতাংশ), কংগ্রেস ৪৭/৩৪৪ (১৩.৭ শতাংশ) বিজেপি ৪৫/৩৭৪ (১২ শতাংশ)।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.