রক্তপণে আপোসের কথা অস্বীকার করল খাশোগির সন্তানরা
তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক জামাল খাশোগির পরিবারের সঙ্গে সৌদি আরব আপসরফা কথা অস্বীকার করেছে তার সন্তানরা।গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন পোস্ট একটি প্রতিবেদনে জানায়, প্রয়াত সাংবাদিকের চার সন্তানের প্রত্যেককে লাখ লাখ ডলারের বাড়ি ও প্রতি মাসে তাদের ১০ হাজার ডলার করে দিয়েছে সৌদি সরকার। সেখানে খাশোগি কলাম লিখতেন।প্রয়াত সাংবাদিক জামাল খাশোগির বড় ছেলে সালাহ এক বিবৃতিতে বলেন, এই মামলাটি বিচারধীন রয়েছে।কোনো নিষ্পত্তি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। গত অক্টোবরে ইস্তানবুলে রিয়াদের ১৫ সদস্যের একটি আততায়ী দল তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিচ্ছিন্ন করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত তার মরদেহের হদিস পাওয়া যায়নি।
সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে নিবন্ধ লেখায় বহু আগে থেকেই তিনি দেশটির টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন।এর আগে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, খাশোগির দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে রক্তপণ হিসেবে আরও বিপুল অর্থ শোধ করা হবে। এ সাংবাদিকের পরিবারের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি আপসে পৌঁছাতে অপ্রকাশিত এ অর্থ দেয়া হয়েছে তাদের।খাশোগির সন্তানদের বাড়ি দেয়া হয়েছে বন্দরনগরী জেদ্দায়। যেগুলোর একেকটির মূল্য অন্তত ৪০ লাখ ডলারের সমান।
এমন একসময় তারা এ অর্থ পাচ্ছেন, যখন খাশোগির হত্যাকারীদের বিচার আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে।বাবার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা থেকে যাতে তারা সংযত থাকেন, সে জন্যই এ অর্থ দেয়া হচ্ছে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে।তাদের বাবাকে যে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে এ যাবত খাশোগির সন্তানরা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করা থেকে নিজেদের অনেকটা সংবরণ করে রেখেছেন।এমনকি যখন এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ, আলোড়ন এবং সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছিল, তখন তারা নিজেদের নিবৃত্ত রাখতে পেরেছেন।
বাড়ি হস্তান্তর ছাড়াও প্রতি মাসে তাদের প্রত্যেকে ১০ হাজার ডলার কিংবা তার চেয়েও বেশি অর্থ দেয়ার বিষয়টি গত বছরের শেষ দিকে সৌদি বাদশাহ অনুমোদন করেছেন।এভাবে সৌদি সরকার তাদের লাখো ডলার দিতে যাচ্ছে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে।এ তথ্য স্বীকার করে সৌদি আরবের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে বড় ধরনের অন্যায় হয়ে গেছে। এখন সেটি সংশোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে।সৌদি আরবের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশটিতে বহুকাল ধরে চলে আসা প্রথার সঙ্গে এই অর্থ পরিশোধ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কোনো ব্যক্তি কোনো সহিংস অপরাধ কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হলে তাদের পরিবারকে এভাবেই অর্থ দিয়ে সহায়তা করার চর্চা সৌদিতে রয়েছে।
দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের সংস্কৃতি ও রীতির অংশ হিসেবেই হতাহতদের পরিবারকে এভাবে সহায়তা দেয়া হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য এখানে নেই।খাশোগি পরিবারকে চুপ করিয়ে দিতে অর্থ দেয়া হচ্ছে বলে যে কথা উঠেছে, তা তিনি নাকচ করে দেন।কিন্তু এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে তোলপাড় শুরু হয়েছে, তা থেকে গা বাঁচাতে সম্পদের ওপরই নির্ভর করছে সৌদি রাজপরিবার।জামাল খাশোগিকে হত্যার নেপথ্যে সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত রয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দ সংস্থাগুলো দাবি করেছে। কিন্তু সৌদি আরবের দাবি, এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যুবরাজ আগে থেকে কিছু জানতেন না।একটি যৌথ কম্পাউন্ডের অংশ হিসেবে এ সম্পত্তির মূল অবকাঠামো খাশোগির বড় ছেলে সালেহের দখলে। জেদ্দায় একটি ব্যাংকে কর্মরত সালেহ হচ্ছেন খাশোগির একমাত্র সন্তান যিনি সৌদি আরবে স্থায়ী বসবাসের ইচ্ছা পোষণ করেন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা তার বাকি ভাই ও বোনেরা সরকারের দেয়া তাদের বাড়ি বিক্রি করে দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।সৌদি সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে মূল ভূমিকা রেখেছেন সালেহ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে অস্বীকার করেছেন তিনি।কিন্তু জেদ্দায় স্থায়ীভাবে তার বসবাসের ইচ্ছার কারণেই গত ছয় মাসে তার ভাইবোনরা এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি।অক্টোবরে মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সালেহের করমর্দনের একটি ছবি প্রকাশ করে সৌদি সরকার।ছবিতে সালেহকে সমবেদনা প্রকাশ করেন যুবরাজ। কিন্তু খাশোগির সন্তানদের ওপর কঠোর বলপ্রয়োগের আভাস হিসেবেই দেখা হচ্ছে এ ছবিকে।খাশোগির দুই মেয়ে নোহা ও রাজান গত বছর ওয়াশিংটন পোস্টে বাবাকে নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। সেখানে তারা বলেন, তাদের বাবা সৌদি আরবে একটি পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো ভিন্নমতাবলম্বী ছিলেন না।
এ নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা সৌদি কর্মকর্তা কিংবা যুবরাজকেও তারা দায়ী করেননি। খাশোগির দ্বিতীয় ছেলে আবদুল্লাহও এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
সূত্র- রয়টার্স
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.