চাঞ্চল্যকর তথ্য, সমুদ্রে প্লাস্টিকের আয়তন ফ্রান্সের তুলনায় তিনগুণ!
বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অধিকাংশই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ছাড়া এখন জীবন কল্পনাই করা যায় না।প্লাস্টিকের ব্যবহার এতটাই বেড়েছে যে, একুশ শতকের সভ্য সমাজের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি! হাজার চেষ্টা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না এই মারণ জিনিসের ব্যবহার। মানবজাতির মধ্যে সচেতনতা বাড়ার বদলে বরং দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। আর সেটা এতটাই মাত্রা ছাড়া যে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’।
গবেষণা বলছে, প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক জমা হয় বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রে। নদীর জলের সঙ্গে ভেসে আসে এই সমস্ত প্লাস্টিক। আর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক জমা হয়েছে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মাঝের বিস্তৃত অংশে। এই প্লাস্টিকের স্তূপের নামই বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’। যা আয়তনে টেক্সাসের দ্বিগুণ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকার তিনটি বৃহত্তম শহরের মধ্যে অন্যতম হলো টেক্সাস। তবে এখানেই শেষ নয়। ফ্রান্সের তুলনায় এই গারবেজ প্যাচ আয়তন তিনগুণ বড়। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই আঁতকে উঠছেন বিশ্ববাসী।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর নদী থেকে সাগরে এসে জমা হয় ১.১৫ থেকে ২.৪১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ প্লাস্টিকের ঘনত্ব জলের তুলনায় বেশি। ফলে সমুদ্রের বুকে জমা হলেও তা ডোবে না। গবেষকরা জানাচ্ছেন, যেহেতু এ জাতীয় প্লাস্টিক জলে ডুবে বা মিশে যায় না, ফলে খোলা জায়গায় সূর্যের তাপে নানা বিক্রিয়ার মাধ্যমে এরা মাইক্রোপ্লাস্টিক জাতীয় জিনিসে ভেঙে যায়। আর প্লাস্টিকে থাকা অণু-পরমাণু একবার ভাঙতে শুরু করলে পরিবেশের জন্য তা হয়ে দাঁড়ায় আরও ক্ষতিকর। সমগ্র সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের জন্য ত্রাস হয়ে যায় এই মাইক্রোপ্লাস্টিক।
সম্প্রতি একটি রিপোর্টে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচের উপর যত প্লাস্টিক ভেসে থাকে তার পরিমাণ প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন। ওজনে এই বর্জ্য প্রায় ৮০ হাজার টন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ওজন প্রায় ৫০০টি জাম্বো জেটের সমান। আর দিনদিন এই নন-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের পরিমাণ প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচে বেড়েই চলেছে।সামুদ্রিক জীবনেও এর প্রভাব মারাত্মক। বিভিন্ন জলজ প্রাণী এবং মাছেরা হামেশাই এইসব প্লাস্টিককে নিজেদের খাবার ভেবে ভুল করে। আর দিনের পর দিন খাবার ভেবে প্লাস্টিক খাওয়ার ফলে কার্যত মড়ক লাগে জলজীবনে। কারণ জমা জঞ্জালের মধ্যে প্রায় ৮৪ শতাংশ আবর্জনাই থাকে মারাত্মক বিষাক্ত। আর এই বিষ শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু অবধারিত। ফলে বেঘোরে মারা যায় বহু মাছ এবং সামুদ্রিক প্রাণী। এমনকী এই প্লাস্টিকের দৌলতেই বিলুপ্তির পথেও পৌঁছে যায় সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের বেশ কিছু প্রাণী। বহু বছর ধরে চলা অসংখ্য গবেষণার ফলে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৭০০ ধরণের সামুদ্রিক প্রজাতি প্রতিনিয়ত মেরিন ডেবরিস (সামুদ্রিক ধ্বংসাবশেষ)-এর সংস্পর্শে আসে। যার মধ্যে ৯২ শতাংশ প্রাণীই এই ক্ষতিকর প্লাস্টিকের সংস্পর্শেই থাকে।
ভয়ঙ্কর দাবানল যেমন যত দিন যায় ততই বাড়তে থাকে। ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গলের ভিতর। পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় অরণ্যের জীবন। ঠিক ততটাই মর্মান্তিক পরিণতি ঘটাবে এই ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’। তেমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: দ্য ওয়াল
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.