বেশ্যাবৃত্তি ও অামাদের সমাজ ব্যবস্থা
পতিতাঃ পতিতা অর্থাৎ বেশ্যারা হলো সেই সকল নারী যারা পুরুষকে যৌন সুখ ভোগ করতে নিজেদের দেহ দিয়ে আপন জীবিকা উপার্জন করে । বেশ্যারা প্রয়োজনমত নিজেকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও অলঙ্কারে ভূষিতা রাখে । যেন এক প্রকার পণ্য দ্রব্য । তারা সব সময় মনে করে সৌন্দর্য্য দিয়ে পুরুষকে জয় করতে পারলেই মিলবে তার যাচিত অর্থ । বেশ্যাদেরও ঘটক বা দূত থাকে । তারা অন্য লোককে তার গুণ পণ্য বলে তাকে আকর্ষন করে নিয়ে আসে ।পতিতাদের অসংখ্য নামে ডাকা হতো ইতিহাসের আদিকাল থেকেই ॥ যেমন – দেহপসারিণী, বেশ্যা, রক্ষিতা, খানকি, উপপত্নী, জারিণী, পুংশ্চলী,অতীত্বরী, বিজর্জরা, অসোগু,গণিকা ইত্যাদি।
বেশ্যার প্রকার ভেদ। বেশ্যা বা প্রতিতারা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে-
১. পথ গণিকা বা ফ্লাইং প্রােষ্টিটিউট (Street Prostitute বা Flying Prostitute)
২. বার গালস্ বা শুঁড়িখানার বেশ্যা (Bar Girls বা Casino Girls)
৩. পতিতালয়ের বেশ্যা (Brothel's Prostitutes)
৪. কল গালস্ (Call Girls)
৫. বিনোদনের গণিকা (Escorts Services / Call houses)
৬. ভ্রমনে সঙ্গী বেশ্যা (Circuit Traveler Prostitutes)
৭. সাইবার বা ভাস্চুয়াল বেশ্যা (Cyber or Virtual Prostitute)

যৌনকর্মীঃ যৌনকর্মী বা sex worker, দেহব্যবসার সাথে যে সকল ব্যক্তি জড়িত তাদেরকে যৌনকর্মী বলে।দেহব্যবসা বিরোধী, গণিকা বিরোধী নারীবাদী, গণিকা নিষিদ্ধকরণের সমর্থক এবং সামাজিক রক্ষণশীলদের কাছে শব্দটি অগ্রহনযোগ্য। এরা দেহব্যবসাকে নিপীড়ন অথবা অপরাধ হিসাবে দেখে।
পতিতালয়ঃ পতিতালয় এমন একটি জায়গা যেখানে মানুষ কোনো পতিতার সাথে যৌন সঙ্গমের উদ্দেশ্যে আসে। সাধারণত যে স্থানে পতিতাদের অবস্থান সে স্থানকেই পতিতালয় বলা হয়, কিন্তু যেখানে পতিতাবৃত্তি বা পতিতালয় নিষিদ্ধ সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা যেমন ম্যাসেজ পার্লার, বার ইত্যাদির আড়ালে পতিতালয় বা পতিতাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। অনেক আইনে পতিতালয় বৈধ আবার অনেক আইনে এটি অবৈধ অথবা নিয়ন্ত্রিত।
অনেক যৌনকর্মী অাছেন যারা টাকার বিনিময়ে টিভিতে সরাসরি যৌন অনুষ্ঠান, অথবা ওয়েবক্যামে যৌন কর্মক্ষমতা প্রদর্শন কিংবা আবেদনময়ী নাচ করেন, এছাড়াও তারা আরো অনেক ধরনের যৌন-ভিত্তিক অনুষ্ঠানে যান । উদাহরণস্বরূপ: striptease, Go-Go dancing, lap dancing, Neo-burlesque, এবং peep shows ইত্যাদি। অনেক সময় যৌন চিকিৎসক যৌনকর্মীর মাধ্যমে যৌনরোগীদের এক ধরনের থেরাপি দিয়ে থাকেন যাতে যৌন দুর্বল ব্যক্তিরা অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে, অনেকসময় যৌনসঙ্গমের সময় যারা দূর্বলতায ভোগেন ডাক্টাররা তাদের বিভন্ন রকমের পর্ন ভিডিও দেখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন । আমাদের সমাজসহ সারা বিশ্বেই যৌন কর্মীদের অবহেলা ও খারাপ চোখে দেখা হয়ে থাকে , কিন্তু যৌনরোগীদের থেরাপিতে কাজসহ যৌনকর্মীদের নানা ধরনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখপূর্বক অনেকেই গণিকাদের কলঙ্ক দেওয়ার পক্ষপাতি নয়, অনেক সময় যৌনকর্মীদের কলঙ্ক না দেওয়ার জন্য তারা আহ্বান করে থাকেন।

দারিদ্র্য থেকেই পতিতাবৃত্তিঃ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যৌন বাজারে শিশু, যুবতী মেয়ে ও মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিশাল সংখ্যক নারী পতিতাবৃত্তিতে আসার সবচেয়ে বড় কারণ হলো দারিদ্র্য এবং আর্থিক দৈন্যদশা। এর সাথে জড়িত অন্যান্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় পারিবারিক কলহ, শিক্ষার অভাব, কর্মসংস্থানের অভাব, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণ। এছাড়া গ্রামের মেয়েরা বিভিন্ন সময় কাজের সন্ধানে শহরে এসে দালাল চক্রের শিকার হয়ে শেষ পরিণতি হিসেবে পতিতাবৃত্তিকেই বেছে নেয়। এরপর থেকেই তাদের জীবনে নেমে আসে অমাবস্যার অন্ধকার। জীবনের চিরসবুজ স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে তখন। অর্থনৈতিক দৈন্যদশা ও দারিদ্র্যের কারণে নারী ও অল্প বয়স্ক মেয়েরা পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত হতে বাধ্য হয়। নিজের ইচ্ছাটাকে বিসর্জন দিয়ে নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাদের কোনোরকমে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার তাগিদে। বিভিন্ন এনজিও তাদের সুবিধার্থে কাজ করে গেলেও এদের পুনর্বাসন এবং অন্ধকার জীবন থেকে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে সরকারের জোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মতামত দেন বিশেষজ্ঞরা। এ গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আল-আমিন রাব্বী বলেন, দারিদ্র্য এবং আর্থিক দৈন্যতাসহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কারণে নারীরা এ পেশার সাথে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় জড়িয়ে পড়ে। এ পেশার সাথে জড়িতের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে। তাই এ ব্যাপারে সরকারের অবিলম্বে দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে জানান তিনি।
Bangladeshi Taka Converter
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.