চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর নার্সকে হত্যা

কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে এক নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বাসের চালক ও হেলপারসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৩) কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের নার্স ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার দিকে ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তানিয়া স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পর্যন্ত বাসটিতে ১৯ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে ১৬ জন যাত্রী নেমে যান। তখন বাসটিতে তানিয়া ছাড়াও দুজন পুরুষ যাত্রী ছিলেন। বাসটি কটিয়াদী থেকে ছাড়ার পর অন্য দুটি স্টেশনে দুজন পুরুষ যাত্রীও নেমে যান। এরপরই ঘটনাটি ঘটে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাকে ধর্ষণের পর শরীরে আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তানিয়ার ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র স্টাফ নার্স কফিল উদ্দিন অভিযোগ করেন, তানিয়াকে বাসে একা পেয়ে বাসের চালক ও হেলপার ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়। তানিয়ার চাচা নাসির উদ্দিন জানান, বাসটি কটিয়াদী আসার পথে একাধিকবার তার বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন তানিয়া। কটিয়াদী আসার পর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে তানিয়ার মা মারা যান। তানিয়া বেতনের টাকা নিয়ে বাবার সঙ্গে প্রথম রোজা পালনের জন্য বাড়িতে ফিরছিলেন বলে তিনি জানান। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, বাসের চালক নূরুজ্জামান ও হেলপার লালনসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। চালক ও হেলপার পুলিশকে জানিয়েছে, তানিয়ার কানে এয়ারফোন লাগানো ছিল। সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর তানিয়া নিজেকে একা দেখে চলন্ত বাস থেকে দৌড়ে নেমে যাচ্ছিলেন। এ সময় হেলপার বাধা দিলে তিনি বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে রক্তাক্ত জখম হন। পরে তাকে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে নিয়ে যান তারা। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ওই বাসে করেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কটিয়াদী হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তানিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। তার গোপনাঙ্গে রক্ত ঝরছিল বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। আটক ব্যক্তিদের কথাবার্তা সন্দেহজনক উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনাটি বাজিতপুরের সীমানায় হওয়ায় বাজিতপুর থানায় মামলা হবে বলেও তিনি জানান। পুলিশ রাতেই বাসটি জব্দ এবং বাসটির স্থানীয় দুই কর্মীসহ তিনজনকে আটক করেছে। পরে তাদের সহায়তায় বাসের চালক নূরুজ্জামান ও হেলপার লালনকে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে আটক করা হয়। পুলিশ সুপার জানান, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত: কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তে এমনটিই আলামত মিলেছে বলে চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. রমজান মাহমুদ এ তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল কিশোরগঞ্জ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তানিয়ার মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.