সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    সাভারে পানির জন্য হাহাকার

    পানি

    ঢাকা ওয়াসার পাম্প স্থাপন করে পানি উত্তোলন শুরু করায় সাভার এবং কেরানীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে ওই এলাকার গভীর-অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না।দিনে ১৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের টার্গেট নিয়ে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের শ্যামপুর, ঝাউচর এবং ভাকুর্তা ইউনিয়নের সোলাই মার্কেট, ভাকুর্তা, ঈদগাহ মাঠ, রাজা মার্কেট, হিন্দু ভাকুর্তা, বটতলা এবং কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের বেউতা, বটতলী, বাহেরচর, বড়িকান্দি এলাকায় ৪৬টি পাম্প স্থাপন করা হয়।

    এর মধ্যে ১৫টি সচল করে দিনে ৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের পরই এসব এলাকার গভীর-অগভীর নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। পাম্প বসানোর আগে ১৭০ থেকে ২০০ ফুট গভীর নলকূপেই যেখানে ভরপুর পানি উঠত, সেখানে এখন ৩০০ ফুট গভীর নলকূপেও পানি মিলছে না। ফলে প্রায় ১৫ লাখ লোক অধ্যুষিত ওই এলাকায় পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা ওয়াসা ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সাভার ও কেরানীগঞ্জে ৪৬টি পাম্প স্থাপন করে। এসব পাম্পের পানি শোধনে দুটি আয়রন অপসারণ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া একটি ভূ-উপরিস্থ জলাধার, একটি অফিস ভবন এবং ৪২ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হয়েছে।

    সূত্র বলছে, বৃহত্তর মিরপুরে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের পানি সংকট সমাধানে ২০১২ সালের জুনে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ও ভাকুর্তায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা ওয়াসা। মিরপুর এলাকায় পানির স্তর ৩ মিটার নিচে নেমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে ওই এলাকায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিচ্ছিল। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফা সময় বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। আংশিক শেষে পানি উত্তোলন শুরু হতে না হতেই নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় পানির জন্য মিরপুরেও চলছে হাহাকার। প্রতিদিনই মিরপুরে বিক্ষোভ ও অসন্তোষ চলছে।

    সাভার ও কেরানীগঞ্জের লোকজন বলছেন, নলকূপের পানি ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ চালানোর পাশাপাশি গরু পালন, শাকসবজি ফলানো এবং কৃষিকাজ চালানো হচ্ছিল। ঢাকা ওয়াসার এ প্রকল্পের পানি উত্তোলন শুরুর পর আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার তেঁতুলঝোড়া-ভাকুর্তা ওয়েল ফিল্ড নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘সাভারের ভাকুর্তা, তেঁতুলঝোড়া এলাকার পাম্প থেকে পানি উত্তোলন শুরু হওয়ায় ওই এলাকার অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে, এটা আমরাও শুনেছি। ওই এলাকার পানির সংকট মোকাবেলায় কী করা যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

    তিনি বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে ওই এলাকায় আগেও পানির সংকট হতো। ওয়াসার পাম্প চালু হওয়ায় কিছুটা বেড়েছে। পুরোদমে চালু হলে কী অবস্থা দাঁড়াবে- সেটা নিয়েও আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি, ওই এলাকায় কিছু টিউবওয়েল করে দেব অথবা পাম্প থেকে এলাকাবাসীর পানি উত্তোলনের সুযোগ করে দেব। এছাড়া ওই এলাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নানা দিক নিয়ে ভাবা হচ্ছে। এলাকাবাসীর ভোগান্তি দূর করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।’

    রোববার বেলা ১১টায় সাভারের ভাকুর্তা বাজারে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। ভাকুর্তার রাজা মার্কেট এলাকার মো. আলামিন বলছিলেন- ‘ওয়াসার পাম্প থেকে পানি উঠানো শুরু হলে আমাদের টিউবওয়েলে আর পানি উঠছে না। অথচ আমাদের টিউবওয়েলের গভীরতা প্রায় ৩০০ ফুট। এখন চাচাদের ৪০০ ফুট গভীর নলকূপ (বিদ্যুৎ চালিত) থেকে পানি নিয়ে প্রয়োজন মেটাচ্ছি।’ ভাকুর্তা বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের নলকূপের গভীরতা ৩০০ ফুট। চেপে পানি উঠানো যায় না। তবে মোটরে পানি উঠছে। ৫০০ লিটারের ট্যাঙ্কি ভরতে সময় লাগছে ১ ঘণ্টা, অথচ আগে ১০ মিনিটে ট্যাঙ্কি ভরা যেত।’

    ভাকুর্তা বটতলা বাজারে কথা হয় তেঁতুলঝোড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা মো. নাজমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে ২৪০ ফুটের দুটি টিউবওয়েল রয়েছে, ওয়াসা পানি উত্তোলন শুরু করায় এখন ওই দুটি টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বাসায় ভাড়াটিয়া থাকায় মোটরচালিত ৪০০ ফুট গভীর করে নতুন টিউবওয়েল বসানো হয়েছে।’

    গৃহবধূর চোখে জল : পানি না উঠায় গৃহবধূরা আছেন বেশি কষ্টে। টিউবওয়েল চেপে পানি তোলা বা দূর থেকে পানি সংগ্রহের কাজটা মূলত তারাই করছেন। ভাকুর্তায় গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই আশপাশ থেকে ছুটে এলেন তারা। গৃহবধূ ছিনু রানী দাস বলেন, ‘দাদা আমরা খুবই কষ্টে আছি। কত কষ্টে পানি সংগ্রহ করছি, তা বলে বোঝাতে পারব না। এ বাসা ও বাসা থেকে বালতি ভরে পানি টানতে টানতে হাত ও মাজায় ঠোসা পড়ে গেছে। এভাবে কি চলা যায়? প্রতিদিন অনেক পানি লাগে। রান্নাবান্না, গরুর খাবার তৈরি এবং আঙিনার শাকসবজি বাগানেও পানি দিতে হচ্ছে।’ আরেক বাসিন্দা ঝুনু দাস বলেন, ‘দাদা আমাদের কষ্ট কেউ দেখছে না। আমাদের এলাকা তো ভালোই ছিল। কখনও পানির কষ্ট করিনি। সরকার এখানে ওয়াসার পাম্প বসিয়ে আমাদের এত কষ্টে ফেলেছেন।’ দুই হাতের ঠোসা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে পানি টেনে সংসার চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে তো জীবন চলছে না।’ এ সময় তার চোখ বেয়ে পানি নেমে আসে। সুমা দাস বলেন, ‘৩০০ ফুট গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। আগে অল্প সময়েই এই টিউবওয়েলের পানিতে প্রয়োজনীয় কাজ সারতাম। আর এখন ১২০ চাপে একটি ছোট বালতি ভরলাম। আর পারছি না, আমাদের কথা সরকারকে বলুন, নইলে আমরা কিভাবে বাঁচব।’

    পানির খনি অথচ পানি সংকট! : ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে- সাভারের ভাকুর্তায় ‘একুইফার’ বা ভূগর্ভস্থ পানির ভাণ্ডার রয়েছে। এর উৎস হচ্ছে হিমালয় পর্বতমালার একটি হিমবাহ। এটা নিয়ে এলাকাবাসীর প্রশ্ন- তাহলে পানি সংকট হচ্ছে কেন? এর সঠিক জবাবও মিলছে না। ঢাকা ওয়াসার দাবি, ওই পানির ভাণ্ডার থেকে দিনে ১৫ থেকে ২০ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করলে ওই ভূগর্ভস্থ পানি ৪০ বছর ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া ওই এলাকার পানি এখনও ‘পুনর্ভরণ’ হচ্ছে- তাই ওই দুটো খনির পানি কখনই ফুরাবে না।

    ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধানে ২০০৯ সালে ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) সাভারের তেঁতুলঝোড়া ও ভাকুর্তা এলাকায় পানির খনির সন্ধান পায়। এছাড়াও মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ‘একুইফার’ বা ভূগর্ভস্থ পানির ভাণ্ডারের সন্ধান পাওয়া যায়। এসব একুইফারে ৬০০ ফুট নিচে পানি রয়েছে এবং এর বিস্তৃতি অনেক।

    সূত্র-যুগান্তর 

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !