সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    রেলের ৯ হাজার একর জমি বেদখলে

    Image result for রেলের পাশে বস্তি

    রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেদখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধারে দৃশ্যমান অভিযান চলছে। কিন্তু দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাত রেলওয়ের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে তেমন কোনো তৎপরতা নেই। যদিও রেলওয়ের প্রায় ৯ হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। এ জায়গায় অবৈধভাবে বহুতল ভবনসহ মার্কেট পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমান সরকার নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর রেল, নদী ও সড়কের দখল হওয়া জমি উদ্ধারে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। ফলে সড়ক ও নদীপথে প্রত্যাশিত জমি উদ্ধার হয়। কিন্তু রেলপথের কোনো জমিই উদ্ধার হয়নি। এ বিষয়ে খোদ রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন সংশ্লিষ্টদের ওপর অসন্তুষ্ট। তিনি বলেছেন, বেদখলে থাকা রেলের জায়গা যে কোনো মূল্যে উদ্ধার করা হবে।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর রেলের জমি বেদখলে রয়েছে। আর দিন দিন বেদখল জমির পরিমাণ বাড়ছে। এ বিষয়ে মাথাব্যথা নেই রেল সংশ্লিষ্টদের। রেলপথ মন্ত্রণালয় হওয়ার পর মন্ত্রীরা একাধিকবার ‘যে কোনো মূল্যে জমি উদ্ধার করা হবে’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। লোক দেখানো কিছু উদ্ধার অভিযান হলেও তা পুনরায় দখল হয়ে যায়।

    একদিকে রেললাইনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি যেমন বেড়েছে, তেমনি জমি থেকে প্রাপ্ত বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সচেতন নাগরিক ও নগরবিদরা বলছেন, নদীখেকো ও নদীতীর দখলকারীদের উচ্ছেদে সরকার অনেক সফলতা পেয়েছে। রেলের জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে ঠিক এ রকম একটি শক্তিশালী ও জোরালো অভিযান শুরু করলে দখল করা জমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

    রেলপথ মন্ত্রণালয় ও ভূসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রেলওয়েতে মোট ৮ হাজার ৭৮১ একর জমি বেদখলে রয়েছে। এ জমি উদ্ধারে রেলওয়ের নিজস্ব কোনো বুলডোজার কিংবা আধুনিক সরাঞ্জাম নেই। যখনই অভিযানের উদ্যোগ নেয়া হয়, তার আগে বুলডোজারসহ সরঞ্জাম ভাড়া করা হয়। এমনকি লোকবল না থাকায় দিনভিত্তিক শ্রমিক ভাড়া করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। একেকটি অভিযানে ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে ভূসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, কোনো অভিযানই সফল হয়নি। কিছু অভিযানে সামান্য জমি উদ্ধার হলেও পরোক্ষণেই তা বেদখলে চলে যায়। উদ্ধার করা জায়গায় দেয়াল কিংবা বেড়া না দেয়ার কারণেই তা বেদখলে চলে যায়। রেলের জমি উদ্ধারের এমন ভাঁওতাবাজি বছরের পর বছর চলে আসছে। রেললাইনঘেঁষা নয়, লাইনের বাইরে থাকা বেশির ভাগ জমিই বেদখলে। সবচেয়ে আশ্চর্য যে, রেললাইনের দু’পাশে ১০ ফুট জায়গা খালি রাখার নিয়ম রয়েছে। দু’পাশের ২ ফুট জায়গায় রেল আইন অনুযায়ী সবসময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। সরকারি নির্দেশনা ছাড়াও যে কোনো দুর্ঘটনা এড়ানো ও বাড়তি সতর্কতার জন্য এমন বিধান রয়েছে। অথচ রাজধানীর মতো দেশের জেলা শহরগুলোর কোথাও খালি জমি রাখার চিত্র দেখা যায়নি।

    রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেলপথের দু’পাশ বেদখলে রয়েছে। লাইন ঘেঁষে বস্তি, দোকান, বাজার, ছাপরা ঘর, রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নামে পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা রয়েছে। অনেক এলাকায় সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন ও বাস-ট্রাকের স্ট্যান্ড বানিয়ে জমি দখল করা হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশের বক্তব্য, জায়গা উদ্ধারের বিষয়টি ভূসম্পতি বিভাগের, দেখভাল করে রাখার বিষয়টিও তাদের। রেলওয়ে পুলিশের নয়।

    রেলওয়ের সূত্র বলছে, সারা দেশে রেলওয়ের মালিকানাধীন জমি রয়েছে ৬১ হাজার ৮৬০ দশমিক ২৮ একর। এর মধ্যে রেলওয়ে অপারেশন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৬৮ দশমিক ৫১ একর জমি। এছাড়া লাইসেন্সকৃত ও লিজকৃত জমি রয়েছে ১৩ হাজার ২৩ একর। দখলকৃত অব্যবহৃত জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৫৪৩ একর। রেলের জমি একেবারেই বেদখল হয়ে গেছে ৫ হাজার একরের মতো। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে রেলের দখলে অব্যবহৃত জমি রয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ১০৭ একর। এর মধ্যে কৃষিজমি ১০ হাজার ৭১৬ দশমিক ৮১ একর।

    স্বাধীনতার পর থেকেই রেলের জমি বেদখল হতে থাকলেও উদ্ধারে কার্যকর চেষ্টা চালায়নি কোনো সরকার। ২০১১ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠনের পর মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা চারজন মন্ত্রীই প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেন। প্রতিটি সভা-সামবেশে বেদখল জমি উদ্ধারে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার। কাজের কাজ কিছু হয়নি। বর্তমান সরকার বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার ও দখল ঠেকাতে উদ্যোগ নিয়েছে। ৭ বছরের জেল-জরিমানার বিধান রেখে ২ মে ‘রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন-২০১৬-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে রেলের বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধারে কঠোর হচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

    এদিকে রেলওয়ে ভূসম্পদ বিভাগ ও অপারেশন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রেলওয়েতে জায়গা উদ্ধার কিংবা জমি সংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের জন্য কোনো সরঞ্জাম নেই। যে কোনো ছোট কিংবা বড় অভিযান পরিচলনার জন্য ভাড়া করে বুলডোজার এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম আনতে হয়। একেকটি বুলডোজার (ছোট-বড় সাইজ) ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়। তাছাড়া শ্রমিকদের জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা করে দিতে হয়। এ নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ৩০ জন শ্রমিকের জায়গায় দেখানো হয় ৫০-৬০ জন শ্রমিক। একটি বুলডোজারের জায়গায় দেখানো হয় ২-৩টি বুলডোজার।

    খোদ ভূসম্পদ শাখার একটি সূত্র বলছে, ঢাকায় বেদখলে থাকা জমির এক শতাংশের মূল্য ৩০ লাখ টাকা আর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের এক শতাংশ জমির মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে বেদখলে থাকা জমির মূল্য প্রায় ১ লাখ হাজার কোটি টাকা। জমি উদ্ধারের নামে গত ৯ বছরে প্রায় ৭ কোটি টাকা খরচ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঢাকা ভূসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর আনন্দবাজার এলাকায় রেলওয়ের ২.৮৭ একর জায়গা দখলে নিয়ে ১ থেকে ৭ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করে মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। একযুগ ধরে এ জায়গা উদ্ধারে ভূসম্পদ শাখার সংশ্লিষ্টরা তৎপরতা চালিয়ে গেলেও শুধু রাজনৈতিক কারণ ও সংশ্লিষ্ট রেল মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থান না থাকায় তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ভাষ্য, মন্ত্রণালয় হওয়ার পর ৪ জন মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এ জায়গা উদ্ধারে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের আশা, বর্তমান মন্ত্রী এ জায়গা উদ্ধারে কঠোর হবেন।

    এ বিষয়ে রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, রেলওয়ের জায়গা বেদখলে থাকা আমাদের জন্য ব্যর্থতা। বেদখল জায়গা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। যতটুকু উদ্ধার করা যাচ্ছে, তা ধরে রাখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বেদখল জায়গা উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা হয়ে আসছে। কিন্তু উদ্ধার হওয়া জমিতে কোনো স্থাপনা কিংবা বেড়া না দিতে পারায় তা আবার বেদখল হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আইন কঠিন হয়েছে, এবার আমরা কঠোর হব। বেদখলে থাকা জমি উদ্ধারের পাশাপাশি যারা দখল করে রেখেছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    সূত্র-যুগান্তর 

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !