দাম কম হওয়ার ধান ক্ষেতে কৃষকের আগুন!
টাঙ্গাইলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ টাকায়। আর একজন শ্রমিকের দিন মজুরি ৮৫০ টাকা। এতে প্রতি মণ ধানে কৃষককে গুনতে হচ্ছে লোকসান। ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া গ্রামের আবদুল মালেক সিকদার নামের এক কৃষক নিজের পাকা ধানে আগুন দিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন।রোববার দুপুরে উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা এলাকায় তিনি তার নিজস্ব ধান ক্ষেত্রে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। মালেক সিকদারের এই প্রতিবাদে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এলাকার অধিকাংশ কৃষক। পাকা ধানে আগুন দেখে অনেকেই ছুটে আসেন।
এ বিষয়ে মালেক সিকদার জানান, প্রতি মণ ধানের দাম থেকে প্রতি শ্রমিকের মজুরির দাম দ্বিগুণ। এবার ধান আবাদ করে আমরা মাঠে মারা পড়েছি। তাই মনের দু:খে পাকা ধানে আগুন দিয়েছি।এদিকে কালিহাতীর আউলটিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান মজনু নামের আরেক কৃষক তার ক্ষেত্রের পাকা ধান এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। এলাকাবাসী ধান কেটে অর্ধেক অংশ নিজে এবং বাকি অর্ধেক অংশ ক্ষেত মালিককে দিয়ে দিচ্ছেন।
জেলার মির্জাপুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। শ্রমিকের দিনমজুরীর ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।রকিবুল ইসলাম নামের এক চাষী জানান, বীজতলা থেকে শুরু করে প্রতি মণ ধান ঘরে তুলতে হাজার টাকার উপরে খরচ হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করছি তার অর্ধেক দামে। এবার আমরা পথে বসে গেছি।এছাড়া আরো কয়েকজন কৃষক আক্ষেপ করে জানান, কৃষককে ধানের ন্যায্য দাম দিয়ে বাঁচাতে হলে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
কৃষি নিয়ে কাজ করা এক এনজিও কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বর্তমানে কৃষকদের অবস্থায় খুবই শোচনীয়। লাভতো দূরের কথা ধান চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে বিপুল পরিমান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বিষয়টি সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন পাকা ধান ক্ষেতে আগুন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য দেয়া উচিত। কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএম শহীদুল ইসলাম জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর ধানের বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি বিঘায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কৃষকের লোকসান হচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারকে কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণ ও ভর্তুকির পরিমান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবেই কৃষক উপকৃত হবে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.