মালয়েশিয়ায় মসজিদে মসজিদে শরবত ও খিচুড়ি ফ্রি
পবিত্র মাহে রমজানকে ঘিরে প্রতি বছর মালয়েশিয়ায় বিশেষ আয়োজন করা হয়। দেশটির শাহ আলম, পেনাং, কোয়ান্তান, মেলাকাসহ প্রতিটি রাজ্যে- এমনকি মারদেকা মাঠেও করা হয় ইফতারের বিশেষ আয়োজন।এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারিভাবে আয়োজন করা হয় ফ্রি ইফতারের ব্যবস্থা। ফ্রি ইফতার ধনী-গরিব সবাই এক সঙ্গে বসে ইফতার করেন। এ যেন আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার বড় আয়োজন।মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার পিং-সিটি পুত্রাযায়ার রমজান বাজার পরিদর্শন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। এ সময় একটি শিশুর সঙ্গে খুনসুটি করতেও দেখা যায় আধুনিক মালয়েশিয়ার এই জনককে।
এদিকে স্থানীয়রা ইফতার করেন বিভিন্ন প্রকারের হাতে বানানো পিঠা, হালুয়া নাশতা, সাদা ভাত, ফলমূলসহ মালয়েশিয়ান খাবার দিয়ে। সঙ্গে থাকে আম, তরমুজ, বাঙ্গি, কলা, পেঁপে, আপেল, আঙুর, কমলাসহ নানা রকম মালয়েশিয়ান ফল।এ মাসে বেশ অতিথি পরায়ণ হয়ে ওঠে মালয়েশিয়ানরা। রমজানে মালয়েশিয়াতে সরকারি অফিস, আদালত স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় ছুটি হয়। ক্রেতাদের জন্য আকর্ষণীয় ছাড় ঘোষণা করে শপিংমলগুলো। রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যায় কেনাকাটার ধুম।
মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা রমজান পালন করেন অনেকটা দেশীয় আমেজে। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় রমজানে শ্রমিকদের নামাজ পড়ার ও রোজা রাখার সুযোগ করে দেয়া হয়। মসজিদগুলোতে বিনামূল্যে ইফতারির সুযোগ থাকে। মসজিদে মসজিদে তারাবির নামাজ পড়া হয়।মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা রমজান মাসে ইফতার করেন দেশীয় খাবার দিয়েই। বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোতে দেশীয় ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ইফতারি বানানো হয়। ইফতারিতে খেজুর, জিলাপি, সরবত, জুস, হালিম, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, লাচ্চিসহ নানা প্রকারের খাবার রাখা হয়।
বাংলাদেশিরা যেখানে থাকেন সেখানেই এক সঙ্গে ইফতার করেন। তাই মালয়েশিয়ানদের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের আয়োজনটা বড় হয়। মালয়েশিয়ানরা অভিভূত হয় বাঙালিদের ইফতারির বিশাল আয়োজন দেখে।রমজান মাসে প্রতিদিন বিকালে মালয়েশিয়ার পিং-সিটি পুত্রাযায়া, শাহ আলম, মারদেকাসহ প্রায় সব জায়গায় বাজার রমাদান নামে ইফতারি বেচাকেনার মেলা বসে। বাজার রমজানে বিভিন্ন প্রকারের মালয়েশিয়ান খাবারের সমারহ ঘটে। তবে এসব খাবার প্রবাসী বাঙালিদের খুব একটা টানে না। ইফতারির আসল আইটেমগুলো তারা বাসায় নিজেরা তৈরি করেন বা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে আনেন।
রমজানে মুসলমানদের দিনে প্রকাশ্যে খাওয়া মালয়েশিয়ার আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রতিবছর এ অপরাধে আটক হন অনেকে। এ ছাড়া পুরো রমজানে সরকারি নজরদারিতে জিনিসপত্রের দাম অন্যান্য সময়ের থেকে কম রাখা হয়। এ মাসে মসজিদগুলোতে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যায়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায়। নামাজের পরে কোরআন তেলাওয়াত করতে পছন্দ করেন মালয়েশিয়ানরা। মসজিদে মসজিদে ইফতারিতে বিনামূল্যে শরবত ও বুবুর বা নরম খিচুড়ির ব্যবস্থা থাকে।
বাংলাদেশের মতো সব ইফতার আইটেমই আছে। জিলাপি কেজি প্রতি ১০ রিঙ্গিত, বুন্দিয়া ১২ রিঙ্গিত, ছোলা ১২ রিঙ্গিত, পিয়াজু প্রতিটা এক রিঙ্গিত। এ ছাড়া রকমারি মিষ্টিতে ভরপুর। শত কষ্ট থাকা সত্ত্বেও সবার মুখে আনন্দ ভরা আমেজ। রমজান যেন এই সুখ বার্তাই নিয়ে এসেছে।দেশীয় খাবার ছাড়া ভিনদেশি খাবারে ইফতার জমে না বাংলাদেশিদের। সুদূর প্রবাসে থেকেও তাই তৃপ্তি মেটাতে ইফতারে বাঙালি খাবারই তাদের প্রথম পছন্দ।
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত কোতারায়াতে পুরো রাস্তায় এক বিশাল জমায়েত হতো। এখন চিরচেনা কোতারয়ায় নেই প্রবাসীদের জমাট। বর্তমান সময়ে অভিবাসন বিভাগের ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে জনশূন্য কোতারয়া।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.