সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    বাংলাদেশ কেন সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ!

    বাংলাদেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ চীন আক্রমণের জন্য। তেমনি চীনের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ আত্মরক্ষার জন্য। আর, ভারতের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ শুধু একটি নয়, তিনটি কারণে। প্রথমতঃ চীনের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা, দ্বিতীয়তঃ চীনকে পাল্টা আক্রমণ করা; এবং তৃতীয়তঃ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ভারতীয় ফেডারেশনের মধ্যে ধরে রাখা।

    চীনের ওপর উত্তর থেকে আক্রমণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থান হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। তাই, চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য যুদ্ধের ক্ষেত্র বাংলাদেশের রণকৌশলিক গুরুত্ব অপরিসীম। চীনও তার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য বঙ্গোপসাগরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। স¤প্রতি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে চীনের তৈরি ২টি মিং-ক্লাস সাবমেরিন সরবরাহের ফলে বিচলিত বোধ করছে ভারত। ভারতের ধারণা, চীনের সাবমেরিন ইতোমধ্যে নিয়মিত বঙ্গোপসাগরে আনাগোনা করছে। এই প্রেক্ষাপটে দুদেশের মধ্যে সামরিক সৌহার্দ্য বাড়াতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার দেশটির তিন বাহিনীর ২য় শীর্ষ কর্মকর্তাদের এবং কোস্ট গার্ডের প্রধানকে নিয়ে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ঘুরে যান। 
    যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ডিফেন্স নিউজ ডটকম এ নিয়ে ভারতের বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষকের মত প্রকাশ করে। তাদের মধ্যে ভারতের নৌবাহিনীর সাবেক অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশের মতে, বাংলাদেশের কাছে সাবমেরিন বিক্রির অর্থই হচ্ছে বন্ধু দেশগুলোর সহায়তায় ভারতের চারপাশে শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে চীনের একটি কৌশল।

    জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতির অধ্যাপক সাওয়ারান সিং বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বরাবরই চীন থেকে সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। এবার সাবমেরিন যুক্ত হওয়ায় এটা বলতে বাধা নেই যে, বাংলাদেশ সামরিক দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেল এবং দুই দেশের (বাংলাদেশ ও চীন) সামরিক সহযোগিতা আরো বাড়ল। বাংলাদেশের এই শক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় দেশটিকে প্রতিযোগী করে তুলবে।জাপানের দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন নেয়ার পর বাংলাদেশে সাবমেরিন ঘাঁটি বানাতে হবে এবং বিষয়টি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে। তবে দুই পরাক্রমশালী দেশের নিজস্ব লড়াইয়ের মাঝখানে পড়তে চায় না বাংলাদেশ।

    দক্ষিণ-এশিয়াভিত্তিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে স¤প্রতি গুঞ্জন উঠেছে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত কয়েকটি চুক্তি এবং তাদের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনার পর ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগ বোধ করেছে ভারত। ওই উদ্বেগ দূর করতেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে প্রতিরক্ষা চুক্তির তোড়জোড় করছে ভারত। হিন্দুস্তান টাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রতিরক্ষা খাতে চীন-বাংলাদেশ নৈকট্য বাড়ছে। এ কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে ভারত উঠেপড়ে লেগেছে বলে দাবি করে হিন্দুস্তান টাইমস।

    হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয় ভারত এমন একটি বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি চাইছে যার আওতায় প্রশিক্ষণ, সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি এবং দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার জন্য লাইন অব ক্রেডিট অর্থাৎ এলওসি (এটি এক ধরনের ঋণ, তবে অন্য ঋণের সঙ্গে এর পার্থক্য হলো এইখানে ঋণদাতা চাইলেই যখন তখন তাদের ঋণ স্থগিত/বাতিল করে দিতে পারে) হিসেবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দিতে ইচ্ছুক ভারত। যদি তা বাস্তবায়িত হয় তবে তা প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ঋণ-সহযোগিতা হবে বলে উল্লেখ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস।

    এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন স্তরের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের ঢাকা সফর ছাড়াও দেশটির রাষ্ট্রদূত একাধিকবার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা করে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশকে কারিগরি ও প্রশিক্ষণ সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দেন। নৌবাহিনীকে সরবরাহ করছে যুদ্ধজাহাজ। সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের দেশটিতে নানান প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াচ্ছে দিন দিন। তাছাড়া বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতু বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। যার ফলে বাংলাদেশকে নিয়ে দেশটির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশকে বেছে নেয়ার আর একটি লক্ষ্য হলো, চীনকে সামরিকভাবে মোকাবেলা করতে হলে পরে মার্কিন নৌবহরকে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে নিয়মিত টহল দিতে হবে। আর সে জন্যই বাংলাদেশের নৌবন্দরগুলোর গুরুত্ব আমেরিকার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌঘাঁটি গঠন সংক্রান্ত খবরে পেন্টাগনের ওই অঞ্চলে কর্তৃত্ব হারানোর উদ্বেগ বাড়াছে।
    মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, ভারত নিজেই বিদেশ থেকে অস্ত্র কিনছে। তাদের থেকে আমরা কেন অস্ত্র কিনব। আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করি তাতে অনেক আধুনিক অস্ত্র কেনার সক্ষমতা রাখি। এ ধরনের চুক্তি হলে দেশের বাংলাদেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ভারতের সঙ্গে যে ২৫ বছরের চুক্তি হয়েছিল তা প্রকাশের পর জাতি স্তম্ভিত হয়। এবার যেন সে ধরনের দেশবিরোধী চুক্তিতে যাওয়া না হয়। আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দূরদর্শী, তিনি ভারতের চুক্তির ফাঁদে পা দেবেন না। 
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকালে সম্ভাব্য একটি ব্যাপক ধরনের, ২৫ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তির জন্য দিল্লির তোড়জোড় প্রসঙ্গে গতকাল আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভূ-কৌশলগত বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেছেন, এটা হবে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকারক। বাস্তবে এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ বা স্বার্থ রক্ষার বাস্তব কারণ নেই। ভবিষ্যতে যদি চীনের সাথে ভারতের যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাহলে ভারত ওই ধরনের চুক্তির ফলে বাংলাদেশের উপর দিয়ে অনায়াসে সৈন্য পরিচালনা করতে পারবে। এতে করে বাংলাদেশও সেই যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। ভারতের সাথে কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করাটাই হবে তা জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে প্রতিকূলে বা বিরুদ্ধে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে সেখানে অপর প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের যুদ্ধ ঠেকানোর কোনো বিষয়ও আসছে না। কেননা মিয়ানমার আমাদের জন্য কখনও হুমকি নয়; ছিলও না। তবে তিনি বলেন, সরকার যদি বর্তমান ও ভবিষ্যতে জাতীয় স্বার্থের দিকগুলো মাথায় না রেখেই দিল্লির সাথে এ ধরনের চুক্তি সম্পাদন করে তাহলে তা তো ভিন্ন কথা। কারণ সরকার তো যে কোনো কিছু চাইলেই তা করা হয়ে যাচ্ছে। সরকার ভারতকে কিছু দিতে চাইলে যেন তা দেবেই। কিন্তু তার বিনিময়ে আমরা তিস্তার ন্যায্য পানিও পাচ্ছি না।

    সূত্র- ইনকিলাব




    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !