ব্যাংকের প্রাইজ বন্ড কি?
⥤ প্রাইজ বন্ড কি?
উত্তরঃ- প্রাইজ বন্ড বাংলাদেশ সরকারের একটি সুদ বিহীন বিনিয়োগ পদ্ধতি। স্থানীয়ভাবে সম্পদ সংগ্রহ এবং জনসাধারণকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে চালু করা হয়। প্রাইজ বন্ড বিক্রয়ের মাধ্যমে সরকার জনগণের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করে এবং পূর্ব নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত ড্র অনুযায়ী বিজয়ী নম্বরের বন্ডের অনুকূলে আর্থিক পুরস্কার প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে প্রাইজ বন্ড ইস্যু করে। প্রাইজ বন্ড অসাধারন একটি বিনিয়োগ পদ্ধতি। ভাগ্য প্রসন্ন্য হলে আপনিও হয়ে যেতে পারেন বিজয়ীদের একজন। অথবা আপনি চাইলেই ব্যাংকে আপনার বন্ড টি হস্তান্তর করে এর টাকা ফেরত নিতে পারেন। ভাগ্য টাকে বাজিয়ে দেখুন। নইলে অর্থ ফেরত এর সুযোগ তো রয়েছেই।প্রাইজ বন্ড সম্পর্কে অনেকেরই অনেক ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে। এই ভ্রান্ত ধারনা গুলো ভেঙে দেয়াই আমার আজকের টিউনের উদ্দেশ্য।
⥤ প্রাইজ বন্ড চেকার কি ?
উত্তরঃ- এটি একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ যার মাধ্যমে পত্রিকা দেখার ঝামেলা ছাড়াই ড্র এর সাথে সাথেই সরাসরি জানতে পারবেন আপনার মোবাইল ফোনে। প্রাইজ বন্ড চেকার অ্যাপ টি পেতে গুগল প্লে স্টোরে সার্চ করুন prize bond checker লিখে অথবা এই লিঙ্কে ক্লিক করুন ঃ
⥤ প্রাইজ বন্ড চেকার কেন?
উত্তরঃ- প্রাইজ বন্ড চেকারের ওয়েব সাইট অথবা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে আপনি প্রাইজ বন্ড ডিজিটালি সংরক্ষণ করলে সর্বশেষ দুই বছরের ড্র'র রেজাল্টের সাথে আপনার বন্ডের নম্বর চেক করে ফলাফল জানিয়ে দিবে। আপনি ভাগ্যবান হলে, ড্র'র তারিখ থেকে দুই বছরের মধ্যে পুরস্কারের টাকা দাবী করতে পারবেন। শুধু পুরনো রেজাল্ট নয়, নতুন ড্র'র সঙ্গে সঙ্গে অটোমেটিক ভাবে আপনার বন্ডের সাথে ফলাফল চেক করে জানিয়ে দেয়া হবে।
উত্তরঃ- ধরুন, আপনি ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের এক তারিখে ১০০টি অতিরিক্ত প্রাইজ বন্ডের সাবস্ক্রিপসন কিনেছেন। এর পরে ফেব্রুয়ারি মাসের এক তারিখে আবার ৫০০টি অতিরিক্ত সাবস্ক্রিপসন কিনলেন। আপনার অতিরিক্ত প্রাইজ বন্ডের সাবস্ক্রিপসনের সংখ্যা হবে ৬০০টি। এর পরে, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরে প্রথমে কেনা ১০০টি অতিরিক্ত প্রাইজ বন্ডের সাবস্ক্রিপসনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সে সময় সাবস্ক্রিপসনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আপনার কাছে নোটিফিকেশন যাবে। আপনি মেয়াদ না বাড়লে আপনার সাবস্ক্রিপসন লক হয়ে যাবে। আপনি কোন ড্র'র রেজাল্ট দেখতে পারবেন না। তখন আপনার অতিরিক্ত সাবস্ক্রিপসনে থাকা ৬০০টি বন্ডের মধ্যে যে কোন ১০০টির নম্বর ডিলিট করে দিলে সাবস্ক্রিপসন আনলক হয়ে যাবে। এই ভাবে প্রাইজ বন্ড চেকারের সাবস্ক্রিপসন নবায়ন করতে হবে।
⥤ প্রাইজ বণ্ডের ড্র কখন হয় ?
উত্তরঃ- সাধারণত, প্রতি বছর ৪ বার, প্রতি তিন মাস অন্তর (৩১ জানুয়ারী, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর) 'ড্র' অনুষ্ঠিত হয়। তবে উক্ত তারিখগুলোর কোনটিতে কোন সাপ্তাহিক ছুটি (বর্তমানে শুক্র ও শনিবার) বা সরকারি ছুটি (সাধারণ/নির্বাহী আদেশে/ঐচ্ছিক), অথবা অনিবার্য কোন কারনে প্রাইজ বন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হতে না পারলে পরবর্তী কার্যদিবসে তা সম্পন্ন করা হয়।
⥤ প্রাইজ বন্ডের পুরস্কার কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ-প্রতি ড্র তে প্রতি সিরিজে পুরস্কার অাছে।
(ক) ৬,০০,০০০ টাকার প্রথম পুরস্কার একটি
(খ) ৩,২৫,০০০ টাকার দ্বিতীয় পুরস্কার একটি
(গ) ১,০০,০০০ টাকার তৃতীয় পুরস্কার দু'টি
(ঘ) ৫০,০০০ টাকার চতুর্থ পুরস্কার দু'টি
(ঙ) ১০,০০০ টাকার পঞ্চম পুরস্কার চল্লিশটি
উত্তরঃ- একটি প্রাইজ বন্ডে নির্দেশিত বিক্রয় তারিখ থেকে কমপক্ষে ২ (দুই) মাস পার হলে উক্ত বন্ড ড্র'র আওতায় আসবে। বন্ড টি কবে কিনেছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, বন্ডে উল্লেখিত তারিখ থেকে দুই মাস পার হয়েছে কিনা সেটি লক্ষণীয় বিষয়।
উত্তরঃ- ১০০ টাকা মূল্য মানের প্রাইজ বন্ড হলেই টা ড্র এর আওতা ভুক্ত। বিশ বা ত্রিশ বছর আগের পুরনো বন্ড হলেও তা ড্র এর জন্য প্রযোজ্য।
উত্তরঃ- ড্র তে বিজয়ী হলে ড্র এর তারিখ হতে ২ বছরের মধ্যে আপনি পুরস্কার দাবি করতে পারবেন।
উত্তরঃ- জেতার পর মূল বন্ডসহ নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে বিজয়ীকে পে-অর্ডার দেওয়া হয়। পুরষ্কারের দাবী ফরম পাওয়া যাবে যে কোন ব্যাংক অথবা টিউন অফিসে। এ ছাড়া অনলাইনে পাওয়া যাবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ফরম এই দুই ওয়েবসাইটে।পে-অর্ডারের মাধ্যমে পুরষ্কার দেয়া হবে তাই বিজয়ীর ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। পুরস্কারের টাকার ওপর কর দিতে হয় ২০ শতাংশ।
এখনে উল্লেখ্য যে, ড্র'র তারিখ থেকে পরবর্তী ২ বৎসরের মধ্যে ঐ ড্র-তে প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থ দাবি করা না হলে ঐ পুরস্কার বাতিল হয়ে যায় যা কোনক্রমেই আর পরিশোধ করা হয় না।
উত্তরঃ- প্রাইজ বন্ড যে কোন বাংলাদেশী এমনকি একটি শিশু ও কিনতে পারে। কোন বয়েস সীমা বা শর্ত প্রযোজ্য নয়।
উত্তরঃ- প্রাইজ বন্ড হস্তান্তর যোগ্য এবং স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে বন্ড এর ধারক ই বণ্ডের মালিক।
উত্তরঃ- বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখা অফিস, বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলির অনুমোদিত শাখাসমূহ, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো এবং দেশের যে কোন ডাকঘর থেকে প্রাইজ বন্ড সংগ্রহ করা যায়।
⥤ প্রাইজ বণ্ডের ড্র এর ফলাফল জানবেন কিভাবে ?
উত্তরঃ- জাতীয় দৈনিক পত্রিকা গুলো ড্র এর ফলাফল প্রকাশ করে। তবে পত্রিকা দেখে ড্র এর ফলাফল ও প্রাইজ বণ্ডের নাম্বার মিলিয়ে দেখা একটি যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ও কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে আপনি প্রাইজ বন্ড চেকার অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই জেনে নিতে পারেন ড্র এর ফলাফল।
⥤ সর্বোচ্চ কত গুলো প্রাইজ বন্ড কিনতে পারবেন ?
উত্তরঃ- সাধারণত একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার সম পরিমান প্রাইজ বন্ড কিনতে পারবেন।
উত্তরঃ- জাতীয় দৈনিক পত্রিকা গুলো ড্র এর ফলাফল প্রকাশ করে। তবে পত্রিকা দেখে ড্র এর ফলাফল ও প্রাইজ বণ্ডের নাম্বার মিলিয়ে দেখা একটি যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ও কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে আপনি প্রাইজ বন্ড চেকার অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই জেনে নিতে পারেন ড্র এর ফলাফল।
উত্তরঃ- সাধারণত একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার সম পরিমান প্রাইজ বন্ড কিনতে পারবেন।
⥤ কত টাকা মূল্যের প্রাইজ বন্ড পাওয়া যায়?
উত্তরঃ- বাংলাদেশে বর্তমানে ১০০ টাকা মূল্যের প্রাইজ বন্ড পাওয়া যায় যদিও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে ৮ ধরনের প্রাইজ বন্ড পাওয়া যায়। আগে বাংলাদেশে ১০ টাকা মূল্যের বন্ড পাওয়া যেত যা এখন আর প্রচলিত নেই।
পুরস্কার দাবি না করলে পুরস্কারের টাকা কি করা হয় ?
উত্তরঃ- কোন বিজয়ী যদি পুরস্কার জেতার ২ বছরের মধ্যে পুরস্কার দাবি না করেন, পুরস্কারের টাকা সরকারি কোষা গারে জমা হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের এজেন্ট হিসেবে এই স্কিম পরিচালনা করে। প্রাইজ বন্ড সম্পর্কিত যেকোনো নিয়ম পরিবর্তন পরিবর্ধন করার সকল ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের।
আমাদের ভ্রান্ত ধারনা এবং অবহেলায় প্রাইজ বন্ড জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, সব ব্যাংকে বা টিউন অফিসে প্রাইজ বন্ড সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না। এর একমাত্র কারন গ্রাহক সংকট ও অনীহা। প্রাইজ বন্ড কিন্তু দারুন একটি সঞ্চয় পদ্ধতি যেখানে আপনার ক্ষতি হওয়ার কোন সুযোগ নেই,বরং আপনার ব্যাপক লাভের সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশের প্রতি টি ঘরেই খুজলে পুরনো প্রাইজ বন্ড পাওয়া যাবে যেগুলো সময়ের অভাবে বা অবহেলায় চেক করা হয় নি। একবার ভেবে দেখেছেন কি, এই অবহেলায় পড়ে থাকা কাগজের টুকরো টি আপনার ভাগ্য খুলে দিতে পারে ! এখনো সময় আছে, ভেবে দেখুন।
🙂 আজই চেক করুন আপনার বাড়িতে পরে থাকা প্রাইজ বন্ডগুলো।প্রাইজ বন্ড কিনুন এবং অন্য কে উৎসাহিত করুন।ভাগ্য সুপ্রসন্ন হোক, এই শুভ কামনা রইল।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.