ধনী হওয়ার আমল!
আমল-১ঃ
রিযিক বৃদ্ধি ও ধনী হওয়ার এক পরিক্ষিত দোয়া বা আমল । ( না পড়লে অবশ্যই বড় কিছু মিস করবেন)
হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন এক সময় জনৈক ব্যাক্তি হুজুরে আকরাম (সাঃ)
এর খেদমতে এসে আরয করলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! দুনিয়া আমাকে পরিত্যাগ করেছে
এবং আমি রিক্ত হস্তে অভাব গ্রস্থ এবং অক্ষম হয়ে পড়েছি । আমার পরিত্রানের
কোন উপায় আছে কি ? তদুত্তরে হুজুর (সাঃ) বললেন তুমি কোথায় আছো ? (ইহলোকে
না পরলোকে ) সালাতে মালায়েকা (ফেরেশতাগণের দুআ) এবং তাসবীহে খালায়েক যার
বদৌলতে ফেরেশতাগণ কে রিজিক প্রদান করা হয় তা তোমার কাছ থেকে কোথায় গেল ?
যে দুআ ও প্রার্থনার বরকতে ফেরেশতাকুল এবং মানব জাতি স্ব স্ব জীবিকা প্রাপ্ত হয়ে থাকে তা কি তুমি জানোনা ?
সে ব্যাক্তি আরয করিলো সেই দুআ কি ?
হুযুর (সাঃ) বললেন,
سبحان الله و بحمده سبحان الله العظيم و بحمده استغفر الله
উচ্চারন- সুবাহানাল্লহী ওয়া বিহামদীহি সুবাহানাল্লহীল আজীমী ওয়া বিহামদীহি আসতাগফিরুল্লাহ ।
অর্থাৎ "আল্লাহ তা'আলার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তার প্রশংসাগীতির সাথে
তাকে স্মরণ করছি, মহান আল্লাহ তা'আলার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তার
প্রশংসা বর্ণনার সাথে আল্লহ্ তাআ'লার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। "
এই দুআ প্রত্যহ ফজরের নামাজের আগে কিংবা পরে একশত বার করে পড়তে হবে, হেটে হেটে বা এদিক সেদিক দুনিয়াবি ধ্যান নিয়ে পড়া যাবেনা, এক যায়গাতে বসে পড়তে হবে, তাহলে সংসার, দুনিয়া আপনা আপনি আপনার দিকে ফিরবে, অর্থাৎ দুনিয়া আপনার
কাছে হেয় ও লাঞ্ছিত অবস্থায় ধরা দিবে এবং এতদ্ভিন্ন আল্লহ তাআ'লার এর এক
একটি শব্দ হতে এক একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তাসবীহ পাঠে
নিযুক্ত করে দিবেন এবং উহার সমুদয় সওয়াব আপনি পাবেন । অতঃপর লোকটি চলে গেল এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত ফিরে এলো না।এরপর একদিন এসে আরজ করলঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুনিয়া আমার কাছে এত বেশি পরিমাণে এসেছে যে তাকে কোথায় রাখবো আমি জানি না ।
এই মূল দুআর সাথে বুযুর্গগণ
(و لا حول و لا قوة إلا بالله العلي العظيم)
উচ্চারণ- ওয়া লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহীল আলীইয়ীল আজীম
এই তাসবীহ টি ও পাঠ করেছেন।
কারন হাদীসে পাকের মধ্যে আছে এটি সকল গোনাহের মাগফিরাতের এবং রিযিক বৃদ্ধির সহায়ক হবে ।
এর মূল বক্তব্য হচ্ছে এস্তেগফার । বলাবাহুল্য গোনাহের কারনেই মানুষের রিযিকে সংকীর্ণতা এবং সকল প্রকার দুঃখ কষ্ট বালা মুসিবত ও পেরেশানীর কারন ঘটে।রেফারেন্স - (শরহে এহইয়াহ, মাদারেজ)
মূল দুআ'টির মধ্যে সর্বমোট ১৫ টি শব্দ আছে ।
সেই হিসাবে একশতবার পাঠ করার দ্বারা পনেরশত ফেরেশতা সৃষ্টি করে তাদেরকে তাসবীহ পাঠে নিযুক্ত করা হবে।
এই দুআ'র অনেক বরকত ও ফজিলত হাদীসের বহু কিতাবে বর্ণনা করা আছে ।
এই দোআ বুখারী শরীফের সর্বশেষ হাদীসটির মূল অংশ ও বটে যার ফজিলত ফাযায়েলে জিকিরের মধ্যে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।
এই দুআ নিয়মিত করার দ্বারা সংসারে কোন অভাব অনটন থাকতেই পারেনা (আমি নিজে করি )
এটা একটা মহামূল্যবান বহু পরিক্ষিত দুআ ও আ'মাল যার সমূহ কল্যাণ ও বরকত
যুগ যুগ ধরে আল্লাহ পাকের অসংখ্য, অগণিত বান্দাগণ লাভ করে আসতেছে ।
তাই আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ থাকবে ফযরের নামাজ টা পড়বেন এবং এই দুআ
একশত বারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং উঠতে, বসতে, চলতে, ফিরতে বেশি করে
পাঠ করবেন,
যেনো আ'মাল দ্বারা আমরা দুনিয়া ও আখেরাতের সব কল্যান সমূহ লাভ করে মহা সৌভাগ্যশালী হতে পারি ।
আমার যত গোপনীয় আমল ছিলো তার মধ্যে এটা হচ্ছে প্রথম আ'মাল
আজ থেকে এই সিরিজ চলবে....
বিঃ দ্রঃ বে নামাজীর কোন আমল বা দুআই আল্লাহ কবুল করেননা।
যারা হারাম ইনকাম করে অথবা হারাম খায় তাদের কোন কিছুও আল্লাহ তায়ালার নিকট কবুল হয়না ।
হালাল খাদ্য ও নিয়মিত নামাজ পড়তে হবে ।
আমল-২ঃ
নবী করীম (স:) ফরমান,যে ব্যক্তি এই দোয়া দৈনিক ১০০০ বার পাঠ করে আল্লাহ চাহেতু সে অল্প দিনেই ধনী হয়ে যেতে পারে। জুমার নামাজের পর যদি ৭০ বার পাঠ করে তবে সপ্তাহ দিনেই আল্লাহ চাহেতু তার আর্থিক অবস্থার পরির্বতন হতে পারে। ”আল্লাহুম্মাকাফীনী বিহালালিকা আনহারা মিকা ওয়াআগনিণী বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক”(মিরকাত)
মুস্তায়ানু আ’লা মা -তাছিফুন, মুস্তায়ানু আ’লা মা -তাছিফুন, মুস্তায়ানু আ’লা মা -তাছিফুন এভাবে ১০১ বার পড়ুন। এই দোয়া মুখস্থ করে নিয়মিত পাঠ করুন ......
আমল-৩ঃ
বিবাহ ধনী হওয়ার একটা সহজ উপায়।আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ওয়াদা করেছেন যে,বিবাহ করলে তিনি নিজ অনুগ্রহে তাকে ধনী করে দেবেন।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ
وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ
وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ (32)
অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যকার যারা
বিবাহবিহীন আছে এবং দাস দাসীদের মধ্যে যারা নেককার তাদের বিবাহ দিয়ে দাও।
যদি তারা অভাবগ্রস্থ থাকে আল্লাহ্ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী করে
দিবেন।আর আল্লাহ্ তায়ালা প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।(সুরা নূরঃ ৩২)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)বলেছেন,আল্লাহ্ তায়ালা বিবাহ দিতে উৎসাহ
দিয়েছেন এবং স্বাধীন ও গোলামদেরকে তার (বিবাহ করতে)আদেশ দিয়েছেন এবং এর
বদৌলতে তাদেরকে ধনাঢ্যতার ওয়াদা করেছেন।এরপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত
করলেন।
সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীয(রহঃ)হতে বর্ণিত,তিনি বলেন:
আমার কাছে
খবর এসেছে,হযরত আবু বকর(রাঃ)বলেছেন:আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদেরকে বিবাহের
ব্যাপারে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন কর।তাহলে তিনি তোমাদেরকে ধন্যাঢ্যতার
যে ওয়াদা দিয়েছেন তা পূর্ণ করে দেবেন। এরপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত
করলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন: তোমরা বিবাহের মাধ্যমে
ধনী হওয়ার রাস্তা খুজে নাও। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন: إِنْ يَكُونُوا
فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ অর্থাৎ, যদি তারা অভাবী থাকে
আল্লাহ্ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী করে দেবেন। (তাফসীরে ইবনে কাসিরঃ
৬/৫১)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
ثَلَاثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللَّهِ
عَوْنُهُمْ: المُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، وَالمُكَاتَبُ الَّذِي
يُرِيدُ الأَدَاءَ، وَالنَّاكِحُ الَّذِي يُرِيدُ العَفَافَ
অর্থাৎ, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়।
আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে
চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে
(বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়। (তিরমীজি-১৬৫৫, নাসায়ী-৩২১৮,
৩১২০,সহীহ ইবনে হিব্বান-৪০৩০,বায়হাকীঃসুনানুল কুবরা-১৩৪৫৬,২১৬১২; হাদিসটি
হাসান)
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিবাহ আমার সুন্নাত। যে আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা বিবাহ করো, কারণ আমি আমার উম্মতের আধিক্য নিয়ে আল্লাহর দরবারে গর্ব করবো। যার সামর্থ্য আছে সে অবশ্যই বিবাহ করবে আর যার সামর্থ্য নেই তার উপর কর্তব্য হলো রোজা রাখা। কারণ, রোজা তার জন্য প্রতিষেধক।
[ইবনে মাজাহ]
অতএব, মুসলিম অমুসলিম সকল অবিবাহিত ভাইবোনদের ভাবার সময় এসেছে; তারাই চিন্তা করবেন যে, তারা কখন বিবাহ করবেন?
অতএব, মুসলিম অমুসলিম সকল অবিবাহিত ভাইবোনদের ভাবার সময় এসেছে; তারাই চিন্তা করবেন যে, তারা কখন বিবাহ করবেন?
আমল-৪ঃ
যে ব্যক্তি তিনটি কাজ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধনী করে দেনঃ-
১. সব সময় ওজু অবস্থায় থাকা।
২. আল্লাহর রাস্তায় দান।
৩. হজ্জ্ব করা।
আমল-৫ঃ
এক যুবক হুযুরের সমীফে হাজির হলেন।নিজের দারিদ্রতার অভিযোগ নিয়ে। এয়া রাসুলাল্লাহ আমি অনেক গরীব। জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কোন কিছুই আমার কাছে নাই। পরিবার পরিজনের খরচ বহন করার সামর্থ্ও নাই।এয়া রাসুলাল্লাহ আমি খুবই গরবী আমার উপর দয়া করুন।হুযুর (দঃ) এশ্ন করলেন তোমার ঘরে কি আছে?
এক যুবক হুযুরের সমীফে হাজির হলেন।নিজের দারিদ্রতার অভিযোগ নিয়ে। এয়া রাসুলাল্লাহ আমি অনেক গরীব। জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কোন কিছুই আমার কাছে নাই। পরিবার পরিজনের খরচ বহন করার সামর্থ্ও নাই।এয়া রাসুলাল্লাহ আমি খুবই গরবী আমার উপর দয়া করুন।হুযুর (দঃ) এশ্ন করলেন তোমার ঘরে কি আছে?
সেজবাব দিল এয়ারাসুলাল্লাহ আমার কাছে ১টি কম্বল আর ১টি পেয়ালা ছাড়া আর কিছুই নাই।
হুযুর (দঃ) ফরমালেন যাও তা নিয়ে আস। সে ঘরে গেল আর সে কম্বল আর পেয়ালা নিয়ে আসল।তা বিক্রী করে একটা কুঠার কিনে আনলেন আর হুযুর (দঃ) তাতে নিজ হাতে হাতল লাগিয়ে দিলেন আর তাকে নির্দেশ দিলেন যাও এ দিয়ে লাকড়ি কাটার কাজ কর। সে গিয়ে জঙ্গল থেকে লাকড়ি কেটে এনে বিক্রী করতে লাগল, ১৫ দিন পর অত্যন্ত আনন্দ চিন্তে হুযুরের বারেগাহে চলে আসল। আর আরজ করল এয়া রাসুলাল্লাহ ১৫দিনে আল্লাহ তায়ালা আমাকে ১০ দেরহাম দান করেছেন।
এবার হুযুর (দঃ) তাকে বললেন তুমি এ ১০ দেরহামকে ৩ ভাগ কর।
-একভাগ, নিজের জন্য খরচ কর।
-একভাগনিজের আত্মিয়স্বজনের জন্য খরচ কর।
-একভাগগরীবদের জন্য খরচ কর।
এ আমলটি সে গরীব লোকটি নিয়মিত করত, সে যা কামাই করত তা ৩ ভাগ করত ১ হিচ্ছা নিজের জন্য ১ হিচ্ছা আত্মিয় স্বজনের জন্য ১ হিচ্ছা গরীবদের জন্য খরচ করত। এ ভাবে আমল করতেকরতে মদীনার সবচেয়ে গরীব লোকটি হযরত ওমরের জামানায় মদীনার সবচেয়ে ধনী লোকদের একজনে পরিনত হলেন।
হুযুর (দঃ) যদি চাইতেন তাকে কয়েকটি খেজুর দিয়ে দিতে পারতেন, যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কে থলের মধ্যে ৭টি খেজুর দিয়েছেন সে থলে থেকে আবু হুরায়রা ২৬ বছর পর্যন্ত নিজে খেজুর খেয়েছেন, পরিবারের সকলে খেয়েছেন, দান সদকা করেছেন, অভাবীদের দান করেছেন, মেহমানকে খাইয়েছেন, ২৬ বছর পর সে থলে হারিয়ে যায়। যদি সে থলে হারিয়ে না যেত তা যদি আজো মওজুদ থাকত তাহলে আজো সে থলে থেকে মানুষ খেজুর খেতে পারত।
এ গরীব সাহাবীকে খেজুর না দিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত উম্মতের জন্য ১টি শিক্ষা দিয়ে গেছেন যদি কোন সময় দারিদ্রতা চলে আসে, অভাব আসে, তাহলে মানুষের কাছে হাত না পেতে মেহনত করতে থাক, আল্লাহ তায়ালা সে মেহনতের বিনিময়ে যে সম্পদ দান করবেন তা ৩ ভাগ করে ১ ভাগ নিজে খরচ করবে ১ ভাগ আত্মিয়স্বজনের জন্য খরচ করবে ১ ভাগ দান সদকা করবে আল্লাহ তোমাকে ধনী বানিয়ে দিবেন, তোমার হায়াতে জিন্দেগীতে বরকত দান করবেন। তোমার অভাব দুর করে তোমাকে আমীরতরিন লোকদের মধ্যে শামিল করে দিবেন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.