ঘরে বসেই তৈরি করুন গোলাপজল !
গোলাপজল আসলে কী? এটা হচ্ছে প্রকৃতি থেকে পাওয়া সবচেয়ে বিশুদ্ধ উপাদানগুলোর মধ্যে একটা যা আমাদের ত্বকের ন্যাচারাল Ph বজায় রাখতে সাহায্য করে। গোলাপজল ত্বক পরিষ্কার করতে, টোনার হিসেবে, ফেসপ্যাকের সাথে; যেভাবে আপনি চান ব্যবহার করতে পারেন। আর আজকাল বাজারে আসল গোলাপ জল খুঁজে পাওয়া ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি জানেন কি? একটু চেষ্টা করলেই আপনি ঘরেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন একদম ১০০% বিশুদ্ধ গোলাপজল! আর আপনাকে কৃত্রিম গোলাপের পারফিউম দেয়া লিকুইড ব্যবহার করতে হবে না। কীভাবে বানাবেন গোলাপজল? আজকের লেখায় সেটাই আপনাদের জানিয়ে দেব-
পদ্ধতি ১- ফ্রেশ গোলাপের পাপড়ি দিয়ে গোলাপজল তৈরি
উপকরণ –
– ১ কাপ ফ্রেশ গোলাপের পাপড়ি (২ টি গোলাপ, কোনভাবেই ফুলের দোকানের কেমিক্যাল দেয়া ফুল নেবেন না। এমন ফুল নিন যাতে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে এতে কোন কীটনাশক বা অন্য কেমিক্যাল ইউজ করা হয়নি।
– ২ কাপ ডিসটিলড পানি (distilled water) । কলের পানি ব্যবহার করলে গোলাপজল বেশিদিন ভালো থাকবে না।
যা করবেন-
– প্রথমে ফ্রেশ গোলাপের পাপড়িগুলো নিন। গোলাপ যত ফ্রশ হবে গোলাপ জলের কোয়ালিটি তত ভালো হবে। আলাদা আলাদা জাতের গোলাপ ব্যবহার করবেন না। এতে গোলাপজলের ঘ্রাণ বিগড়ে যেতে পারে।
– পরিষ্কার পাতিল অথবা সসপ্যানে গোলাপের পাপড়ি রেখে তার উপরে পানি ঢালুন।
– এবার পাত্রটির মুখ ঢেকে খুবই কম আঁচে চুলায় বসান। মনে রাখবেন কোনভাবেই যেন পানি ফোটা শুরু না করে অথবা গোলাপ সিদ্ধ না হয়ে যায়! যদি গোলাপ পাপড়ি তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়ে পানির রঙ নীল হয়ে যায় তবে ধরে নেবেন আপনার গোলাপজল তৈরি করা হয়নি।
– হালকা গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট গোলাপ পাপড়ি রাখুন। তারপর পাত্রটি চুলা থেকে তুলে নিন। শেষে এসে আপনার পানি হালকা গোলাপি/লাল হতে পারে।
– পানি থেকে পাপড়ি ছাঁকনি দিয়ে আলাদা করে নিন। এবার পানি পুরোপুরি ঠাণ্ডা করুন। ঠাণ্ডা হবার পর পানি আপনার পছন্দের পাত্রে ভরে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন। দেরি করবেন না।
– এভাবে তৈরি গোলাপজল ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
পদ্ধতি ২- শুকনো পাপড়ি দিয়ে গোলাপজল তৈরি
উপকরণ-
– বড় সাইজের গ্লাস জার
– ১/৪ কাপ (এক কাপের চার ভাগের ১ ভাগ) শুকনো গোলাপ পাপড়ি।
– ১.৫ কাপ (দেড় কাপ) গরম করে নেয়া distilled পানি।
যা করবেন-
– গ্লাস জারের মধ্যে শুকনো পাপড়ি নিন। এক্ষেত্রেও মনে রাখবেন কোন কেমিক্যাল পাপড়িতে আছে এমন সন্দেহ থাকলে সেই গোলাপ ব্যবহার করবেন না।
– ফুটিয়ে নেয়া গরম distilled পানি আস্তে আস্তে জারের ভেতরে পাপড়ির উপর ঢালুন।
– পাত্রের মুখ ঢেকে দিন এবং ১০-১৫ মিনিট পাত্রের পানি ঠাণ্ডা হতে দিন।
– পানি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে অন্য একটি পাত্রে ছাঁকনির সাহায্যে গোলাপজল আলাদা করে ঢেলে নিন।
– সাথে সাথে ঠাণ্ডা করে নেয়া গোলাপজল ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন। এটাও ১ সপ্তাহ ব্যবহার করতে পারবেন।
দেখলেন? কত সহজ গোলাপজল বানানো? এবার আসুন আরেকবার জেনে নিই, কীভাবে আর কেন গোলাপজল রূপচর্চায় ব্যবহার করা এত উপকারী-
– গোলাপজল অ্যান্টি সেপটিক, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হবার কারণে আপনার ত্বকে টোনার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপাদান।
– নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের তেল নিঃসরণ কন্ট্রোল করে, ত্বকের ড্যামেজ সারিয়ে তোলে। ট্যান দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে।
– শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা সারাদিন ত্বকে আদ্রতা পাওয়ার জন্য যতবার খুশি গোলাপজল ব্যবহার করতে পারবে।
– যেকোনো ত্বকের অধিকারীরা যেকোনো ফেসপ্যাক, মাস্কের সাথে মিশিয়ে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারবেন।
– ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে, ধুলা ময়লা দূর করে। যেকোনো সময় ত্বকে মিষ্ট হিসেবে তাই গোলাপজল ব্যবহার করা যায়। গোলাপজল মেখে বা স্প্রে করে টিস্যু দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলেই বুঝতে পারবেন মেকআপ রিমুভার আর ফেসওয়াশ হিসেবে এটা কতটা কার্যকরী!
– বয়স্ক ত্বকের মেছতা, বলিরেখা দূরে রাখতে সাহায্য করে।
– ক্লান্ত বসে যাওয়া চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঠাণ্ডা গলাপজলে তুলা ভিজিয়ে চোখের উপরে রেখে দিলে সাথে সাথে ফল পাবেন।
– শরীরের ফাটা শুষ্ক অংশে গ্লিসারিন মিশিয়ে গোলাপজল ব্যবহার করলে ফাটা, রুক্ষ দেহ মুহূর্তেই হয়ে উঠবে কোমল।
– গোসলের পানিতে ঘরে তৈরি গোলাপজল মিশিয়ে নিলে সারাদিনেও শরীরে দুর্গন্ধ হবে না। দামি স্প্রে, ডিওডরেন্ট ব্যবহারের কোন দরকার হবে না!!
তাহলে আর দেরি কেন? গোলাপের সিজন তো চলেই এলো। এবার আর বাজারের ভরসায় না থেকে নিজেই বানিয়ে ফেলুন একদম খাটি গোলাপজল!
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.