ছোটগল্প – বেশ্যা..
“হ্যাঁ আমি শরীর বেচি ; রোজ রাতে একজন, দুজন বা কখনো তারও বেশী লোকের সামনে আমি নগ্ন হই, আমায় ব্রা-এর হুক খুলতে হয় তাদের অল্প কিছু বকশিশের আশায়, শুতে হয় পয়সার জন্য। জানি এই ভদ্র সভ্য কথিত সমাজ আমার কাজকে ব্যবসা তো বলে, কিন্তু খুব নোংরাও ভাবে।
যে ছেলেটি রোজ সকালে চৌ-রাস্তার বাজারের মুখে আলুর বস্তা পিঠে তুলে পয়সা আনছে, সে কেনো আদর্শ পরিবারের জন্য? আরে, তার শরীরে ক্ষমতা আছে তাই সে বস্তা বইছে, আরে আমার তো ক্ষমতা নেই, শুধু আমার শরীর আছে তাই আমি ব্যবহার করছি।”
হঠাৎ একদিন যখন পাড়ার সেই সুন্দরী, যে এতকাল পর্যন্ত সকলের চোখের মণি ছিল, কেউ নাকি তাকে একদিন নিষিদ্ধ সরণিতে দেখেছে, ব্যস্ মণির বালি হতে সময় নিলো এক বেলা। তারপর দৃষ্টির পরিবর্তন এবং সপ্তাহের শেষে ক্লাব ঘরে বিচার বৈঠক। আমি বছরে দুবার চাঁদা দিই, পুজোর জন্য একবার, আর একবার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য, তো আলোচনা সভায় আসবো না! তার মধ্যে যেখানে এমন রসালো বিষয়। হ্যাঁ যদি আলোক দার ছেলের অপারেশনের জন্য বা শ্যামলের বাবা মা কে বৃদ্ধাশ্রম থেকে ফেরানোর আলোচনা হতো, তবে হয়তো ধোনির ১০০ রানটা বেশী প্রয়োজনীয় হতো। কিন্তু আজ তো সেই মেয়েটিকে নিয়ে আলোচনা যে পাড়ায় সবচেয়ে বেশী গা ঢেকে চলতো।
যাক, আলোচ্য বিষয় শুরু হল। একটা দুটো কথার পর শুরু হল তার হায় হায়। কবে যেন করিমের মা নাকি দেখেছিল অটোতে সে সালোয়ারের পাশ দিয়ে নীল ব্রা-এর ফিঁতে বের করে বসে ছিল, আলোচনায় কারণ বেরোলো অটোর ভাড়া না দেওয়ার জন্যেই বা তাকে তার জালে বেঁধে একটু আয় বাড়ানোর জন্যেই এমন কাজ। আবার কেউ বললো শেষ বৃষ্টিতে সে বৃষ্টি ভিজে পাড়ায় ঢুকছিল যেখানে সবাই কোনো না কোনো শেড-এর তলায় দাঁড়িয়ে ছিল। এইসব নানা যুক্তি-তর্ক শেষ। প্রমাণ।সিদ্ধান্ত । সাত দিন। তাকে পাড়া ছাড়তে হবে।
সবার হ্যাঁ তে আমিও হ্যাঁ বললাম। গণতন্ত্রের গন্য সমাজের অগণিত গোষ্ঠীর মধ্যে এক গোষ্ঠীতে আমিও তো বাস করি, তাই তার গন্ডির বাইরে যেতে চাইনি। তাই তো একবারও বিচার করি নি যে তাকে নিষিদ্ধ সরণিতে দেখেছে তিনিই বা কেন ওদিকে উঁকি দিয়েছিলেন? বা সত্যিই পুরুষের ক্ষমতা আছে তাই বস্তা কাঁধে জীবন চলে, তার কি আছে?
ভাবার বিষয়, তার যা আছে তার সমানে অনেকের ক্ষমতাও হার মানে। হয়তো তাই ভোরের আলো চোখে পড়তেই ক্ষমতার আত্মসম্মান আঘাত করে, তখনই ক্ষমতা তার চরিত্রে আঙুল তুলে তাকে বেশ্যা বলে।
লেখা – মৈনাক মিত্র
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.