আপনার কোরবানির গোশতে গরীব ও প্রতিবেশীর হক আছে !
দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে কুসুমের মা কুসুমের বাবাকে বললেন, আমি তো পিঁয়াজ-মরিচ কেটে রেখেছিলাম, কেউ তো গোশত পাঠালো না ! প্রতিবেশীরা আমাদের কথা ভুলে গেলো না তো ? আপনি কি একটু গিয়ে দেখবেন ?
কুসুমের বাবাঃ তুমি তো জানো আজ পর্যন্ত কারো কাছে আমি হাত পাতিনি আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই কোন না কোন ব্যবস্থা করে দেবেন ।
দুপুরের পর পীড়াপীড়িতে বের না হয়ে পারলেন না। প্রথম গেলেন বড় সাহেবের বাড়ীতে । বললেন,বড় সাহেব ! আমি আপনার পড়শী । কিছু গোশত দেবেন ?
গোশত চাইতেই বড় সাহেবের চেহারা গোস্বায় লাল হয়ে গেল । তাচ্ছিল্যের সাথে বললেন, কি জানি কোত্থেকে গোশত চাইতে চলে আসে-বলেই ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিলেন ।
অপমানে কুসুমের বাবার চোখে পানি চলে আসলো । ভারী পায়ে চলতে চলতে এবার গেলেন মিঁয়া সাহেবের ঘরের দিকে, দরজায় করাঘাত করে বিনীতভাবে কিছু গোশত চাইলেন । মিঁয়া সাহেব গোশতের কথা শুনেই বিরক্তিভরে তাকালেন । পলিথিনে কয়েক টুকরো গোশত দিয়ে দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিলেন । যাক ছোট মেয়েটাকে তো একটা বুঝ দেয়া যাবে, এমনটা ভাবতে ভাবতে কুসুমের বাবা ঘরে ফিরে এলেন। ঘরে ফিরে পলিথিন খুলে দেখলেন
শুধু দুটো হাড্ডি আর চর্বি । চুপচাপ রুমে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন।
এরই মধ্যে ছোট কুসুম বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, বাবা ! গোশত লাগবে না। আমি গোস্ত খাবো না, আমার পেট ব্যাথা করছে। মেয়ের একথা শুনে বাবা আর চাপা কান্না ধরে রাখতে পারলেন না ।
এমন সময় বাইরে থেকে সবজি বিক্রেতা আকরাম ভাই ডাক দিলো । কুসুমের বাপ ঘরে আছেন ?
কুসুমের আব্বু দরজা খুলতেই আকরাম ভাই তিন- চার কেজি গোশতের একটি ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল, গ্রাম থেকে ছোট ভাই নিয়ে এসেছে । এতো গোশত কি একা খাওয়া সম্ভব, বলেন ?
এটা আপনারা খাবেন । আনন্দ আর কৃতজ্ঞতায় কুসুমের বাবা ভেজা চোখ মুছতে লাগলেন । অন্তর থেকে আকরামের জন্য দোয়া করতে লাগলেন।
গোশত রান্না করে সবাই মজা করে খেয়ে উঠতে না উঠতেই প্রচন্ড তুফান শুরু হলো । বিদ্যুৎও চলে গেল । সারাদিন গেল, এমনকি দ্বিতীয় দিনও বিদ্যুৎ এলো না তুফানে ট্রান্সমিটার জ্বলে গিয়েছিলো ।
কুসুমের বাবা তৃতীয় দিন কুসুমকে নিয়ে হাঁটতে বের হলেন । বাবা-মেয়ে দেখলো, বড় সাহেব ও মিঁয়া সাহেব গোশতে ভরা অনেকগুলো পোঁটলা ডাস্টবিনে ফেলছেন । বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে থাকা সব গোশত নষ্ট হয়ে গিয়েছে । ফেলে দেয়া পঁচা গোশতের উপর একদল কুকুরকে হামলে পড়তে দেখে কুসুম বলল, বাবা তারা কি কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য কুরবানী করেছিলেন ?
পাশ থেকে মিঁয়া সাহেব ও হাজী সাহেব ছোট মেয়েটির কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললেন।
হ্যাঁ, এটিই আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষের বাস্তবচিত্র । আমরা যেন মিঁয়া সাহেব আর বড় সাহেবদের মতো না হই। লাইনে দাঁড় করিয়ে নয় বরং(সম্ভব হলে) অভাবীদের ঘরে ঘরে কুরবানীর গোশত পোঁছে দেই ।
আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে উত্তম বিনিময় পাওয়ার আশায় । আল্লাহ তায়ালা আমাদের সমস্ত নেক আ'মল গুলো কবুল করুন ।আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো যেন মাফ করে দেন।
- আমিন
(সংগৃহীত)
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.