সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    ব্যাংকার দের জন্য শিক্ষনীয় গল্প!


    ৬,০০০ টাকার বেতনের চাকরি টা যখন ইয়াসিন ছেড়ে দিলো তখন ইয়াসিনের বউ সুমি সরাসরিই ইয়াসিনকে বলেছিলো, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো।তোমার মতো ২ই টাকার ফকিরের ঘরে আমি থাকবো না। কথাগুলো সুমি কেঁদে কেঁদেই বলেছিলো।ইয়াসিন শুধু চুপ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

    কিছু করার ছিলো না ওর। নিজের বউ এর জন্য তো, আল্লাহর আর তার রাসুলের বিরুদ্ধে ও যেতে পারবে না।কখনো না।এর জন্য সুমি যদি ওকে ডিভোর্স দিতে চাই, তো দিবে। আমি তবুও আমার সৃষ্টিকারীর কথার অবাধ্য হতে পারবো না।(ইয়াসিন) 
    কথা কি কানে ঢুকছে না??(সুমি)
    হুম বলো শুনছি।(ইয়াসিন)
    চাকরিতে আবার ফিরবে নাকি ডিভোর্স নিবা কোনটা?/ (সুমি)
    ইয়াসিন সুমির দিকে তাকিয়ে, কি বলো এটা?? তুমি যেমন আমার কাছে দামী, তোমার চাইতে আমার রব আর রাসুল আমার কাছে আরো বেশি দামী। আর শোনো না প্লিজ, দেখো, তুমি তো জানো, জব টা আমি কেনো ছেড়েছি। তুমি ত
    শিক্ষিত বলো। তাই না??(ইয়াসিন) 
    এত জ্ঞান দিয়ে আমার পেট ভরবে কি?? এত হাদিস কালাম দিয়ে কি এক বেলা তোমার ভাত জুটবে?? আল্লাহ তো আর আমাদের খেতে দিচ্ছেন না। (সুমি)

    ইয়াসিন সুমিকে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।এত বড় কথা বলতে পারলে কি করে?? লজ্যা করলো না এটা বলতে?? আরে তোমায় সে খায়তে দেয় না তো কি আমি দেয় নাকি?? মাধ্যম টা তো আমি, কিন্তু খাইতে দেয় তো সেই। হাইরো মানুষ রে, কবে জানবে, কবে বুঝবে?? ইয়াসিন কথাগুলো বলার পর চুপ করে রইলো)সুমি চড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে রাগে ফুসতে লাগলো। ওইদিনেই সন্ধায়, সুমি মতিঝিলে থাকা বাবার বাসায় চলে যায়। আর রাত্রে ফোন দিয়ে ইয়াসিন কে বলে দেয়, রাত টা পাড় হলেই যেনো ও কোর্টের উপরে চলে আসে। উকিলের সাথে কথা হয়েছে সুমির বাবার। উকিল যত দ্রুত সম্ভব ডিভোর্স লেটার তৈরী করে ফেলবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। 

    রাত্রে, বেডের উপর শুয়ে ইয়াসিন কথাগুলো ভাবছে, আজ দেড় বছরের বিবাহিত জীবন ওদের। সুমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, সামান্য পরিচয় থেকেই ভালো লাগা তারপর বিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর ইয়াসিন বুঝতে পারলো, সুমির চাহিদার শেষ নেই। এইটা লাগবে, ওইটা লাগবে। ইয়াসিন  অল্প পরিমানের একটা বেসরকারি জব করতো জন্য খোঁটা দিতো সবসময়, জোর করে বাবার থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে, ব্যাংকের ম্যানেজার পদে জয়েন করায়ে দেয় ইয়াসিন কে। কিন্তু ইয়াসিনের কেমন যেনো প্রথম থেকেই অনীহা ছিলো ব্যাংকের জবের প্রতি। ও মাদ্রাসার ছাত্র না হলেও গ্রামের বাসায় মাদ্রাসা তে আরবি পড়েছিলো। ছোট থেকেই কুরআন পড়তো। পরে, বাংলা কুরআন পড়ে বাংলা মানে জানতো আর সেই মতো কাজ করতো। কারন ইয়াসিনের মায়ের আদেশ ছিলো, বাবা, এই দেখো( কুরআন দেখিয়ে) এই কিতাব তোমায় দুনিয়াতে সৎ আর পরকালে তে জান্নাতের পথ দেখাবে। আর শোনো, জীবনে যেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হউ না কেনো, এই কিতাব কে কখনো ছাড়বা না। পারলে তোমার পার্থিব জীবনের সমস্ত সুখ ছেড়ে দিবা কিন্তু এই কিতাবের অমর্যাদা কখনো করো না। এই ভালোবাসার জন্য যদি তুমি কখনো খারাপ কিছু ছেড়ে দাও তবে জেনে রেখো, আল্লাহ সুবাহাতায়ালা তোমাকে এর চাইতেও ভালো কিছু দিবে। কথাগুলো ভাবছে ইয়াসিন ।

     মা তো গত হয়েছেন  ৬ মাস হলো। মায়ের উপদেশ টা সবসময় ইয়াসিনের কানে বাঁজতো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ২ টা। আর কিছুসময় পড়েই তো উঠতে হবে নামাজের জন্য। এখন ঘুমায়ে পড়লে যদি নামাজের সময় না জাগতে পারি??
    ইয়াসিনের চোখে মুখে ভয় স্পষ্টতর হলো।না ঘুমাবো না। জেগে থাকি বলে ইয়াসিন চুপ করে শুয়ে রইলো। কিন্তু মনে কোন শান্তি পাচ্ছে না। বার বার শুধু সুমির কথা মনে পড়ছে, চোখের কোনে জল এসে পড়ছে বার বার। রাগ করেই উঠে পড়লো ইয়াসিন । শয়তান ওকে নানান রকমের ওয়াছ ওয়াছা দিচ্ছে, ইয়াসিনের ভেতরে থাকা শয়তানি মন বলছে, কি করছিস এটা?? এত সুন্দরী বউ, এত টাকার চাকরি কেনো ছাড়বি?? ছাড়িস না।

    ইয়াসিন ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে নিলো।রুমে এসে টেবিলের উপরে থাকা কুরআন টা এনে, লাইটের আলোতে বিসমিল্লাহ বলে পড়তে শুরু করলো। এতটা শান্তি পাচ্ছে ইয়াসিন যে, আনন্দে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে কুরআনের উপর। ইয়াসিনের পবিত্র মন বললো, দুনিয়া উল্টায় গিলেও তোমার বিরুদ্ধে যাবো না মালিক। ব্যাংকের জবটাতে সুদ যে খাওয়া হয় এটা ইয়াসিন  জানতো। কিন্তু ম্যানেজার ওকে যেই সুদ টা দিতে চায়তো ও সেটা নিতো না। এইভাবেই কিছুদিন জব টা করে ইয়াসিন । কিন্তু সেদিন হাদিসে যখন দেখতে পেলো, যারা সুদ খায়, যারা সুদ দেয়, যারা সুদের সাক্ষী হয়, এবং যারা সুদের আদান প্রদান লেখে নবী করীম (সঃ) তাদের সকলকে অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারী ইবনু মাসউদ (রাঃ))

    ইয়াসিনের ভয়ে শরীরের সমস্ত পশমগুলো দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো। ওইদিনেই জব টা ছেড়ে দেয় ইয়াসিন । এক মুহুর্তের জন্যও বিলম্ব করে নি। এছাড়া ইয়াসিন ওইদিনেই বাসায় আসার পথে এক হুজুরের থেকে জানতে পারে, সুদ খাওয়া আর আপন মায়ের সাথে যিনা করা এক(নাউজুবিল্লাহ) সমস্ত পথ ইয়াসিন তওবা করতে করতে আসে।

    সকালের আলো রুমের ভেতরে আসতেই, ইয়াসিনের ঘুম ভেঙে যায়। ফজরের নামাজ পড়ে একটু চোখ বুজেছিলো। ওমনি ঘুমায় গিয়েছে।ঘড়ির দিকে তাকায় দেখে, ৮ টার বেশি বাঁজে, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে, ৪০ টার মতো কল। রাসেল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কোর্টের উপরে চলে যায়। উকিল সাহেব ৩ মাস পর পর ৩ বার সাইনের কথা বলে দিলো। সুমিকে দেখে মনে হচ্ছে না ওর একটুও কষ্ট হচ্ছে। ইয়াসিন চুপচাপ সই টা করে দিলো।

    ৫ বছর পরে,
    আসসালামুয়ালাইকুম, এই, এই উঠবা না??(সাদিয়া)
    অলাইকুমুসসালাম। এইতো উঠছি, বলে ইয়াসিন বেড থেকে উঠে পড়লো, ওযু করে এসে রুমেতে আগে থেকেই বিছিয়ে রাখা ২ টা জায়নামাজের ১ম কাতারে মানে সামনের জায়নামাজে গিয়ে ইমামতীর জন্য দাঁড়িয়ে পড়লো, আর পেছনে সাদিয়া নিঃশব্দে নামাজে মনোযোগ দিলো।

    হ্যা, সাদিয়া ইয়াসিনের ২য় স্ত্রী। ওইদিন ফেরার পথে এক ব্যাগভর্তি প্রায় কয়েক কোটি টাকা পায় ইয়াসিন । ভেতরে থাকা ঠিকানা অনুযায়ী পৌছে যায় সেই বাসায়। বাসাতে বৃদ্ধ লোক আর তার মেয়ে ছাড়া কেউ ছিলো না। ওনার বয়স ও শেষ পর্যায়ে ছিলো। তাই ওনার মেয়েকে ইয়াসিনের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইয়াসিন ওনাকে একটু আগে ডিভোর্স এর কথা বললে আর কি কারনে ডিভোর্স দিচ্ছে, এই অবস্থায় কি আপনার মেয়ে আমাকে গ্রহন করবে??(ইয়াসিন)

    অন্দরমহল থেকে সাদিয়া বলে উঠে বাবা আমি রাজি। ডিভোর্স এর ঝামেলা শেষ করেই ইয়াসিন আর সাদিয়ার বিয়ে হয়। এবং ইয়াসিন ওর শ্বশুড়ের সমস্ত সম্পত্তি পায় যার অর্ধেক দিয়ে মাদ্রাসা নির্মান করে আর অর্ধেক দিয়ে হালাল ব্যাবসা শুরু করে।যেখানে কোন হারাম লেনদেন ছিলো না। আর বিয়ের এই ৫ বছরে সাদিয়া কখনো গলা উঁচু করে একটা কথাও ইয়াসিন কে বলেনি। ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।ইয়াসিন নিজেও সাদিয়া কে কখনো বকা দেয়নি। শুধু ভুল টা ধরিয়ে দিয়েছে।

    আজ ইয়াসিনের মোনাজাতে, ওর মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে, বাবা, তুমি তোমার মালিকের খুশির জন্য যা ছাড়বে, তোমাকে তিনি তার চেয়ে দ্বিগুন দিবে। ইয়াসিনের চোখ থেকে পানি পড়ছে, তবে সেটা আনন্দের। এই আনন্দের স্বাদ যে কত মধুর তা অন্য কারর বোঝার ক্ষমতা নেই।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !