আবরার হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে: আইনমন্ত্রী
আইন,বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির সব ব্যবস্থা করা হবে।তিনি বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যেই জড়িত থাকুক না কেন এবং তাদের পরিচয় যা-ই হোক না কেন সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে এবং ন্যায়বিচারের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শেষ করা হবে।
রোববার নোয়াখালীতে দশতলা বিশিষ্ট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন।আনিসুল হক বলেন, সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য দ্রুতগতিতে তদন্তের ব্যবস্থা করেছে।তিনি বলেন, মানুষ যাতে বিচারের জন্য পথে পথে না ঘোরে। মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়। ন্যায়বিচার যেন শুধু মুখের বুলি না হয়। ন্যায়বিচার যেন কাগজে দেখা যায়। সেই ব্যবস্থা সরকার করছে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার চায় মানুষ দ্রুত বিচার পাক এবং বিচার না হওয়ার কারণে স্ট্রিট জাস্টিসের জন্ম না হোক।অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দেশের সব আদালত সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে।
আনিসুল হক বলেন, উচ্চ আদালতের একটি রায় অনুযায়ী দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের পৃথকভাবে পথচলা শুরু হয় ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর। চলার শুরুতেই আদালতসমূহে বিশেষ করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে এজলাসের ব্যাপক অপ্রতুলতাসহ বিচারক সংকট দেখা দেয়। এতে করে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণ যেমন ভোগান্তির শিকার হতে থাকেন, তেমনি মামলার জটদিনের পর দিন বাড়তে থাকে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং পৃথকীকরণকে সুদৃঢ় ও টেকসই করার জন্য বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। প্রথমেই এজলাস সংকট দূরীকরণের জন্য আদালত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। পাশাপাশি নতুন বিচারক নিয়োগের কার্যক্রম জোরদার করা হয়।
তিনি বলেন, বিগত সাড়ে ১০ বছরে নতুন করে ১ হাজার ২৮ জন বিচারক নিয়োগ দেয়ার পরও অধস্তন আদালতের এজলাস সংকট প্রায় পুরোটাই দূর করা সম্ভব হয়েছে।মন্ত্রী বলেন, নোয়াখালীতে ৬০ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত যে আদালত ভবন উদ্বোধন করা হল তা আসলে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। বর্তমানে বাংলাদেশের এমন কোনো সেক্টর খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে তার সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
তিনি বলেন, আমরা যদি বিচার বিভাগের কথাই বলি, তাহলে দেখা যাবে ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে বিচার বিভাগের যে উন্নয়ন হয়েছে তার সবগুলো যোগ করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়কালের উন্নয়নের সমান হবে না।
তিনি বলেন, অন্যান্য সরকারের সময় জেলা জজ ছাড়া কোনো বিচারক গাড়ি পেতেন না। বর্তমান সরকার জেলা জজ ছাড়াও অতিরিক্ত জেলা জজদের গাড়ি বরাদ্দ দিচ্ছে। অধস্তন আদালতে কর্মরত বিচারকগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে কেবল ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরেই ১০৯টি সিডান কার ও ৬টি মাইক্রোবাস বরাদ্দ দিয়েছি। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেও বিজ্ঞ বিচারকগণের ব্যবহারের জন্য আরও ১১৫টি সিডান কার ও মাইক্রোবাস ক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের আবাসিক সমস্যা দূর করার জন্য ঢাকার কাকরাইল এলাকায় বিশতলা বিশিষ্ট সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এখন তাদের এজলাস এবং চেম্বারের অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা দূর করার জন্য ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ১২তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ তলাবিশিষ্ট বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
নোয়াখালীর জেলা ও দায়রা জজ সালেহ উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নোয়াখালী ৪ ও ৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য যথাক্রমে একরামুল করিম চৌধুরী ও আয়েশা ফেরদাউস, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ফরিদা খানম, আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, যুগ্ম-সচিব বিকাশ কুমার সাহা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.