একসঙ্গে ৮০ দেশে যুদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র!
যুক্তরাষ্ট্র সমকালের মহা পরাক্রমশালী বিশ্ব শাসক। আরও খোলামেলা ভাষায় বললে, আধুনিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। সাম্রাজ্যবাদী জাতি। গত দুই দশক ধরে ভয়ংকর করে তুলেছে পৃথিবীকে। একটার পর একটা দেশে টার্গেট করছে। যুদ্ধ করছে।
কখনও ‘ধ্বংসাত্মক ও গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ থাকার মিথ্যা অজুহাতে আবার কখনও ‘মানবিক হস্তক্ষেপ’র ছদ্মবেশে চালানো হয়েছে আগ্রাসন। কখনও এককভাবে আবার কখনও সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে নিয়ে।স্বার্থোদ্ধারে প্রথমে হুমকি-ধমকি। তাতে কাজ না হলে বিমান বাহিনী রণতরী, যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, আর্টিলারি, রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র আর হালের মনুষ্যবিহীন মারণাস্ত্র ড্রোন নিয়ে পুরো রণসাজে সজ্জিত হয়ে হামলে পড়ছে।
বৃষ্টির মতো বোমা ফেলছে যুদ্ধবিমানগুলো। রণতরী থেকে ছোড়া হচ্ছে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র। এভাবে আঘাতের পর আঘাতে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল-ক্লিনিক। হত্যা করছে লাখ লাখ মানুষকে। একটা শেষ হলেই আরেকটা ধরছে।এভাবে বর্তমানে বিশ্বের ৮০টি দেশে যুদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এবারের টার্গেট ইরান। পারস্য উপসাগরে একর পর এক যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করছে। ইরান শত্রু সৌদিকে নিয়ে আঞ্চলিক জোট গঠন করছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপাচ্ছে।
এসব আলামতই বলে দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য কি? ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই’র নামে দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ নিয়ে সম্প্রতি একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক খ্যাতনামা ম্যাগাজিন স্মিথসোনিয়ান। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে বিশ্বের ৮০টি দেশে (যা পৃথিবীর মোট দেশের ৪০ শতাংশ) যুদ্ধ করছে মার্কিন সেনাবাহিনী।
কখনও সরাসরি আবার কখনও অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে সংঘাত জিইয়ে রেখেছে। ৪০টি দেশে সামরিক ঘাঁটি গেড়েছে এবং অন্তত ৬৫টি দেশের সেনাবাহিনীকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। অন্তত ১৪টি দেশে মার্কিন বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ২৬টি দেশের নিয়মিত যুদ্ধে মহড়া করছে।
এছাড়া কোনো সেনাবাহিনী না পাঠিয়েই শুধু বিমান ও ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে ৭টি দেশে। এক প্রতিবেদনে মিন্ট প্রেস নিউজ বলেছে, মার্কিন আগ্রাসনের শিকার আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার মতো দেশগুলোই ঘুরেফিরে সামনে আসে।কিন্তু আফ্রিকার তিউনিশিয়া, সোমালিয়া, মালি, নাজেরিয়া, নাইজার, সুদান ও কেনিয়া এশিয়ার ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোর কথা খুব কম মানুষই জানে। বিরামহীন এই যুদ্ধে রক্তপাত, সম্পদ ও প্রাণের ক্ষতি সত্ত্বেও এর খামতির কোনো লক্ষণ নেই।
বরং আরও নতুন নতুন দেশে বিস্তারের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, ফিলিস্তিনের সঙ্গে যোগ হতে যাচ্ছে ইরান।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের বীজ ছড়িয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নাইন ইলেভেন হামলার (২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন টুইন টাওয়ারের কথিত সন্ত্রাসী হামলা) পরই সেটা নতুন মাত্রা পায়।
বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’র ঘোষণা দেয় তৎকালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন। অভিযুক্ত আল কায়দা নেতা সৌদি নাগরিক ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেয়ার অজুহাতে আফগানিস্তান-পাকিস্তানে শুরু সামরিক অভিযান।এরপর গুনে গুনে পার হয়েছে ১৯টি বছর। এক সরকারের পর এসেছে আরেক সরকার। কিন্তু ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসবিরোধী শেষ হয়নি। সেই একই ধুয়ো তুলে বিশ্বের দেশে দেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিনিরা। আফগান যুদ্ধ চলতে চলতেই ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ রাখার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি তুলে ২০০৩ সালে আগ্রাসন চালানো হয় ইরাকে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া দেশটিকে। ইরাক যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই ধরা হয় লিবিয়াকে। এরপর সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেন- এভাবে তালিকায় প্রতিদিন যোগ হয়েছে নতুন নতুন দেশ ও অঞ্চল।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.