সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    আখাউড়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির

    বিয়ের পিঁড়িতে কনে ঝুমা শীল


    বিয়ে ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এর গভীরতা ব্যাপক। আমাদের দেশের সব বিয়ের উৎসব ও আমেজ প্রায় একই ধরনের।তবে ধর্ম, সামাজ ও সম্প্রদায়ের নানা নিয়মের বেড়াজাল থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ঘটেছে ব্যতিক্রম।সমাজের সুবিধাবঞ্চিত হিন্দু কনে ঝুমা শীলের বিয়ের দিন তারিখ ও আনুষ্ঠানিকতা ঠিক থাকলেও অর্থের অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েন অসহায় পিতা কানু শীল ও মাতা লক্ষ্মী শীল। দিনমজুরের মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে হণ্যে হয়ে ঘুরছিল মেয়েটির পরিবার।

    কনে ঝুমার বিয়ের জন্য যখন প্রবল আর্থিক সংকটে পরিবার, ঠিক তখনই এই বিয়েতে আর্থিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিক সমাজ। বিয়ের স্বর্ণালংকার, কাপড়, আসবাবপত্রসহ হিন্দু ধর্মীয় বিয়ের রীতিনীতিতে নেচে-গেয়ে জাঁকজমক আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।জমকালো অনুষ্ঠান করে আখাউড়ায় হিন্দু কনের বিয়ে দিয়ে এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করলো মুসলমানরা।

    ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের রাধানগর গ্রাম। যুগ যুগান্তর ধরে হিন্দু আর মুসলমানদের একত্রিত বসবাস। পূজা-অর্চনা কিংবা বিয়ে উভয় ধর্মের পারিবারিক যে কোনো অনুষ্ঠানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই উপস্থিত হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া আখাউড়ার পুরনো রেওয়াজ।কনের বাবা রাধানগরের ভাড়া করা বাসায় সোমবার গোধূলির শেষ লগ্নে অর্থাৎ সন্ধ্যার পর যখন রাত গড়ায় তখন বরবরণ শুরু হয়। বিয়ে অনুষ্ঠানে সাতপাক, শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সম্প্রদান ও অঞ্জলির মধ্যদিয়ে বিয়ের মূলপর্ব শেষ হয়।

    পরে বর-কনে দু'জনের দিকে শুভ দৃষ্টি আর একই সময় মালা বদল করা হয়। এ সময় পুরোহিত মন্ত্র উচ্চারণ করে বর-কনের ডান হাত একত্রে করে কুশ দিয়ে বেঁধে দেন।মঙ্গলবার সকালে বরকে সামাজিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিদায় দেয়া হয়। বিদায়লগ্নে কানু শীল ও লক্ষ্মী শীল তাদের দু'চোখ ভরে গেছে আনন্দের অশ্রুজলে।কন্যাকে সামাজিকভাবে পাত্রস্থ করতে পেরে অনেক খুশি বলে কেঁদে ফেলেন তারা।

    কৃতজ্ঞাতা জ্ঞাপন করেন ওসি রসুল আহম্মদ নিজামী, যুগান্তরের সাংবাদিক শিপন হাবীব, আখাউড়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী ভূঁইয়া ও পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু কাউছারের কাছে।

    আখাউড়া থানার ওসি রসুল আহমদ নিজামী বলেন, থানা এলাকার প্রতিবেশী হিসেবে বিয়েটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পেরে নিজের কাছে ভালো লাগছে। পুরো পরিবেশ যেন ভরে উঠে আনন্দে-উল্লাসে। কারও কপালে সিঁদুর কারও মাথায় টুপি, কারও গায়ে পাঞ্জাবি, কারও গায়ে ধূতি ছিল। স্থানীয়রা এই বিয়েতে মানবতার নজির গড়েছেন।

    আখাউড়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মহিউদ্দিন মিশু বলেন, সাম্প্রদায়িকতা যখন দেশের বিভিন্ন অংশকে গ্রাস করছে, তখন আখাউড়াতে মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নয়া নজির স্থাপন করেছে এই হিন্দু কনের বিয়ের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে। তবে এরকম একটা উদাহরণ আখাউড়াতে তথা এ দেশের সংহতির আরেকটি দিককে তুলে ধরেছে।

    আখাউড়াতে শুধু এটাই প্রথম ঘটনা নয়, এর আগেও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রয়োজনে বহু কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসতে দেখা যায় স্থানীয় মুসলিমদের। এই সংহতির কাছে সত্যিই হেরে যেতে বাধ্য সাম্প্রদায়িকতার হিংসা। সংহতির এই গর্বের কাছে অনেক ছোট হয়ে যায় সাম্প্রদায়িক হানাহানির চিন্তা-ভাবনা।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !