সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    আবরারকে হত্যার আগে-পরে ফেসবুকে খুনিদের গোপন কথোপকথন ভাইরাল!

    আবরারকে হত্যার আগে-পরে ফেসবুকে খুনিদের গোপন কথোপকথন ভাইরাল
    বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হল ছাড়া করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল বুয়েট ছাত্রলীগ। বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে আবরার হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে গোপন কথোপকথনে। ছাত্রলীগের এই নেতারা মেসেঞ্জারে গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন। আবরার নিহত হওয়ার আগে-পরে তারা সেখানে কথা বলেছেন, হত্যার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। আবরার নিহত হওয়ার পর একজন লিখেছেন মরে গেছে। এরপর অন্যজন বলেছেন, মার বেশি হয়ে গেছে।

    আবরারের খুনিদের এই আলাপের বিবরণ থেকে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগ বা এসবিএইচএসএল নামে গ্রুপের মেসেঞ্জারে তারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন। আবরারকে হত্যা করার আগে-পরে আসামিদের কথোপকথন যুগান্তর পাঠকদের সামনে হুবহু তুলে ধরা হলো—

    বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবীন শনিবার দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে এই গ্রুপে লেখেন, ‘১৭-র আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও বলেছিলাম। তোদের তো দেখি কোনো বিকার নেই। শিবির চেক দিতে বলেছিলাম।’

    মেহেদী হাসান এই কথা লেখার পর এই মামলায় গ্রেফতার মনিরুজ্জামান লিখেন, ‘ওকে ভাই।’

    তখন মেহেদী আবার লেখেন, ‘দুই দিন টাইম দিলাম।’

    মনিরুজ্জামান আবার লেখেন, ‘ওকে ভাই।’

    এরপর মেহেদী মেসেঞ্জারে মনিরুজ্জামানকে ১৬ তম ব্যাচের মিজানুর রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন। মিজানুর আবরারের রুমমেট ও এই মামলায় বৃহ্স্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন।

    মেহেদী লিখেন, ‘দরকারে ১৬ ব্যাচের মিজানের সঙ্গে কথা বলিস। ও আরও কিছু ইনফরমেশন দেবে শিবির ইনভলভমেন্টের বিষয়ে।’

    এর পরের দিন রোববার রাত ৭টা ৫২ মিনিটে মনিরুজ্জামান মনির মেসেঞ্জার গ্রুপে লিখেন, ‘নিচে নাম সবাই।’

    এরপর ছাত্রলীগের শাহীন লেখেন, ‘ওকে ভাই।’

    শওকত নামে একজন লিখেন, ‘ওকে ভাই।’

    মেসেঞ্জারে আবু নওশাদ সাকিব নামের বুয়েট ছাত্র লেখেন, ‘আবরার ফাহাদ কী হলে আছে?’

    এর প্রতিক্রিয়ায় শামসুল লিখেন, ‘হ ভাই। ২০১১ তে’। তখন নওশাদ লেখেন, ‘২০১১ তে আছে।’

    মেসেঞ্জার গ্রুপে রাত ১টা ২৬ মিনিটে একজন লিখেন, ‘আবরার ফাহাদকে ধরছিলি তোরা?’

    জবাবে ইফতি মোশাররফ (আবরারকে হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন) ফেসবুক মেসেঞ্জারে লিখেন, ‘হ।’

    এরপর একজন লিখেন, ‘বের করসস।’

    জবাবে মোশাররফ লেখেন, ‘কী? হল থেকে নাকি স্বীকারোক্তি?’

    একজন লিখেন, ‘স্বীকার করলে তো বের করে দেয়া উচিত।’

    জবাবে ইফতি মোশাররফ লেখেন, আবরার ফাহাদ মরে যাচ্ছে।

    ইফতি লেখেন, ‘মরে যাচ্ছে। মাইর বেশি হয়ে গেছে।’

    আবরার ফাহাদকে যে কক্ষে (২০১১) ফেলে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় সেই কক্ষের একজন হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা ইফতি মোশাররফ।

    আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে। রোববার রাত ৮টার দিকে তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে।

    আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছেন। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

    গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।

    প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

    তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।

    ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বুয়েট শাখার সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !