তোমরা আমার সন্তান, বাবার ইজ্জত বাঁচাও: শিক্ষার্থীদের বুয়েট ভিসি
সমঝোতা ছাড়াই বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের বৈঠক শেষ হয়েছে।আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ১০ দফা দাবির মধ্যে প্রধান দাবিগুলো ভিসি মেনে নিলেও তার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বুয়েট অডিটোরিয়ামে আবরার ফাহাদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।বৈঠকে ভিসি ছাড়াও অংশ নেন বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইয়াজ হোসেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাসুদসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠকের শুরুতেই ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আবরার ফাহাদ হত্যার ৩০ ঘণ্টা পার হলেও ক্যাম্পাসে আসেননি ভিসি। এমনকি ক্যাম্পাসে আবরারের জানাজায়ও যাননি তিনি। যে কারণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন। সেই দাবির প্রেক্ষিতে ক্ষমা চান বুয়েট ভিসি।
আবরার ফাহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং মামলার যাবতীয় খরচ বহনকরার ঘোষণা দেন ভিসি। বুয়েটে র্যাগিং বন্ধের ঘোষণা দিয়ে অতীতের সব ঘটনা তদন্ত করে বিচার করা হবে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে বুয়েটে স্থায়ীভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। একই সঙ্গে বুয়েটে শিক্ষক রাজনীতিও করা যাবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি।
ভিসি বলেন, আমি আমার প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে বুয়েটে সব ধরনের সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি। আজ (শুক্রবার) থেকে এখন থেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। আমরা বিভিন্ন দলগুলোতে চিঠি পাঠাব, যাতে বুয়েটে তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
বৈঠকে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করার কথাও জানান ভিসি।বৈঠকের শেষপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ১০ দফা দাবির মধ্যে যেসব দাবি বুয়েট প্রশাসনের এখতিয়ারে তার বাস্তবায়ন না দেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম চলবে না।
এ সময় ভিসি বলেন, ‘আমি তোমাদের সব দাবির সঙ্গে একমত। সরকারের বিভিন্ন মহলে গিয়ে এগুলো বাস্তবায়ন করেছি। তোমরা আমার সন্তান। বাবা হিসেবে একটি আবেদন, অন্তত পক্ষে আমাদের ইজ্জতটা মাটিতে লুটাবে না। ভর্তি পরীক্ষাটা নিতে দাও।’
উল্লেখ্য, আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল রয়েছে বুয়েট ক্যাম্পাস।
প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছেন। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশাররফ সকাল, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.