সাধারণ মানুষ তার ভয়ে আতঙ্কিত ছিল: র্যাবের চার্জশিট

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে।মামলার তদন্ততকারী কর্মকর্তা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩ (র্যাব)-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. বেলায়েত হোসেন এ চার্জশিট দাখিল করেন।
রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়। আদালত চার্জশিট দেখে- তা সিএমএম বরাবর পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। মামলার বিচারের লক্ষে শিগগিরই এ চার্জশিট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হবে।
চার্জশিটে বলা হয়, আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ১৯৯৬ সাল থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী যুবলীগে সম্পৃক্ত হন। ২০১২ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এলাকায় বিশাল এক সন্ত্রাসীবাহিনী গড়ে তুলেন। সে একজন ভয়ঙ্কর আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসী হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুর, মুগদা, কমলাপুর, রামপুরা, সবুজবাগসহ আশপাশ এলাকায় সে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সাধারণ মানুষ তার ভয়ে আতঙ্কিত ছিল।
দীর্ঘদিন ধরে সে ঢাকা মতিঝিল ইয়ংমেন্স ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবে জুয়া, ক্যাসিনো, মাদকের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। সে খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী গণপরিবহন থেকে নিয়মিত মোটা অংকের চাঁদা আদায় করত। প্রতি ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুরহাট নিয়ন্ত্রণ, খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতি রাতে শক্তির দাপট দেখিয়ে মাছেরহাট বসিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করা ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ।
এলাকার সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ সব প্রতিষ্ঠানে তার মালিকানাধীন ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একছত্র টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করত। ফকিরাপুল ইয়ামেন্স ক্লাবের সভাপতি থেকে ক্যাসিনো, মাদক, জুয়ার আসর বসিয়ে প্রতিদিন হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে আটকের পর ওই ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে মোট ১৬৩ জন মাদকসেবীকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদান করেন। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো সামগ্রী ও নগদ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। তার এ সব অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রয়েছে অবৈধ অস্ত্রধারী এক বিশাল বাহিনী। এই বাহিনী পরিচালনাসহ তার অবৈধ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ও ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হতো অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। মূলত অবৈধ ব্যবসা ও রাজনৈতিক দাপটে পেশিশক্তি প্রয়োগ করার জন্যই দীর্ঘদিন এই অস্ত্রের ব্যবহার করে আসছে।
আদালত সূত্র জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর খালেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে গুলশান থানায় তিনটি এবং মতিঝিল থানায় মাদক আইনে একটি মামলা করে র্যাব।
খালেদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় করা অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনের মামলার এহাজারে বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গুলশান-২-এর রোড নং-৫৯, বাড়ি নং-৪-এর ৩/এ ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে আসামি খালেদকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি তার কাছে অস্ত্র ও মাদক আছে বলে স্বীকার করে। তখন বাসায় তল্লাশি চালিয়ে একটি শর্টগান, ৫৭ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, একটি ৭ দশমিক ৬৫ এমএম পিস্তল, তিনটি খালি ম্যাগাজিন ও ৫৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। বাসা থেকে তিনটি পলিব্যাগে মোট ৫৮৫ পিস ইয়াবাও উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া দেশীয় মুদ্রায় ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫০ টাকা ও বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা যা বাংলাদেশি টাকায় মোট ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রার মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, দুবাই, সৌদি, ভারতীয়, মালয়েশিয়ান ও থ্যাইল্যান্ডের বিভিন্ন কারেন্সি রয়েছে। আসামি একজন পেশাদার জুয়ার ব্যবসায়ী। রাজধানীতে তার অনেকগুলো জুয়ার ব্যবসা রয়েছে। বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা তিনি বিদেশে পাচার করার বিষয়ে হেফাজতে রয়েছে।
এ ছাড়া মতিঝিল থানায় করা মাদক আইনের মামলায় বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় র্যাবের বিশেষ অভিযানে আসামি খালেদকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ গুলশান বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের সময় তিনি জানান, মতিঝিলের ইস্টার্ন কমলাপুর কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের পঞ্চম তলার ৪০২ নম্বর রুমে ভূঁইয়া গ্পরু অব কোম্পানিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে আসামি মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন করত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ওই রুমে তল্লাশি চালিয়ে ১৯০ পিস হালকা গোলাপি রংয়ের ইয়াবা ট্যাবলেট, দেশি-বিদেশি বিয়ার, সিসা ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
Bangladeshi Taka Converter
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.