দেশে নতুন সিম সংযোগ বন্ধে বিটিআরসির কাছে চিঠি যাচ্ছে!
দেশে টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি চালু হওয়ার পর এখন ফাইভজি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। অথচ জেলা শহরগুলো টুজিতেই সীমাবদ্ধ ডেটা সার্ভিস। খোদ রাজধানীতেই ফোরজি সিমে আসছে টুজি সিগন্যাল। ইন্টারনেট সার্ভিসেও সন্তুষ্ট নন গ্রাহক। ফোরজির টাকা পরিশোধ করা হলেও দেয়া হয় না কাঙ্ক্ষিত গতি। বিটিআরসির আইন অনুযায়ী ২ শতাংশের অধিক কলড্রপ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলেও এখন প্রতিমুহূর্তে কলড্রপ হচ্ছে। ফোনের কানেকশন পেতে লেগে যাচ্ছে অনেক বেশি সময়।
দেশে মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে প্রায় ২০ লাখ গ্রাহক সেবা নিচ্ছে। সেবার পরিধি বাড়ানোর জন্য যত্রতত্র বসছে বিটিএস (মোবাইল টাওয়ার)। এসব টাওয়ারের রেডিয়েশনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পশু-পাখি, গাছ-পালা। বেশি টাওয়ারের এলাকায় মানুষ প্রচণ্ড স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। এসব কিছু বিবেচনা করে দেশে অপারেটরদের নতুন সিম সংযোগ বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে চিঠি নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
শিগগির এ চিঠি বিটিআরসির কাছে দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জড়ালো উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সংগঠনটি। এ ব্যাপারে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে প্রায় ২০ লাখ গ্রাহক সেবা নিচ্ছে। ফলে কলড্রপ, নেটওয়ার্ক দুর্বলতা ও ডাটা ব্যবহারে সমস্যায় পতিত হচ্ছে গ্রাহকরা।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য দেশে ১-১.৫ লক্ষ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়। অপারেটররা যেখানে শর্ত মেনেই লাইসেন্স নিয়েছে সেখানে তরঙ্গের দাম বেশি এ যুক্তি ন্যায়সঙ্গত নয়। গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে নতুন করে সিম বিক্রয় না করার জন্য বিটিআরসির কাছে আমরা চিঠি দিতে যাচ্ছি। আমরা চিঠি দেয়ার পর এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সকল ধরনের উদ্যোগ নেব।
বিটিআরসি বলছে, দেশের সকল মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবার মান অর্থাৎ কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে সর্বশেষ গত বছরের ৬ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রথমবার ড্রাইভ টেস্ট পরিচালনা করে। এতে কলড্রপ, কল সেটআপ সময় ছাড়াও ইন্টারনেট স্পিড এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে মান পরিমাপ করা হয়।
চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি প্রকাশিত এই ফলাফলে দেখা যায়, কলড্রপ, কল সেটআপ সময় এবং ফোরজি স্পিডে গ্রামীণফোন; জনমত জরিপ ও ফোরজি স্পিডে রবি; কল সেটআপ সময় ও ফোরজি স্পিডে বাংলালিংক এবং কল সেটআপ সময় ও থ্রিজি স্পিডে টেলিটকের মান বিটিআরসির স্ট্যান্ডার্ডের অনেক নিচে।
এক হাজার ৩৫০ কিলোমিটার এলাকায় ড্রাইভ টেস্টে আনুমানিক তিন হাজার ৩০০ স্যাম্পল গ্রহণ করে বিটিআরসি। কল সেটআপে সাফল্যের হার কম বেশি ৯৭ শতাংশকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে বিটিআরসি জানায়, গ্রামীণফোনের ৯৯.০৪ শতাংশ, রবির ৯৭.৮৯ শতাংশ, বাংলালিংকের ৯৯.৮২ শতাংশ এবং টেলিটকের ৯৯.১২ শতাংশ সাফল্য রয়েছে। কল সেটআপে কোনো অপারেটরের মান কম পায়নি বিটিআরসি।
২ শতাংশকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে কলড্রপের হার গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে ৩.৩৮ শতাংশ, রবি’র ১.৩৫ শতাংশ, বাংলালিংকের ০.৫৮ শতাংশ এবং টেলিটকের ১.৫৮ শতাংশ। কলড্রপে গ্রামীণফোনের হার বিটিআরসির স্ট্যান্ডার্ডের নিচে। মেইন অপেনিয়ন সোর্স স্কোর ৩.৫ শতাংশ ধরে এক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের ৩.৬১, রবি’র ৩.৪৭, বাংলালিংকের ৩.৭৩ ও টেলিটকের ৩.৬৩ শতাংশ। রবির ক্ষেত্রে নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ডের নিচে।
কল সেটআপ সময় ৭ সেকেন্ড ধরে গ্রামীণফোনের ১০.১৪, রবি’র ৬.১৫, বাংলালিংকের ৭.৬৯ ও টেলিটকের ৭.১১ সেকেন্ড। রবি বাদে সব অপারেটরের মান খারাপ বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। ইন্টারনেট স্পিড থ্রিজির (ডিএল) ২ এমবিপিএস স্ট্যান্ডার্ড ধরে গ্রামীণফোনের ৩.০৮, রবি’র ৩.১৬, বাংলালিংকের ৩.৩৮ ও টেলিটকের ১.৩৬ এমবিপিএস। এক্ষেত্রে টেলিটকের স্থান সন্তোষজনক নয় বলে জানায় বিটিআরসি।
থ্রিজি (ইউএল) ১২৮ কেবিপিএস স্ট্যান্ডার্ড ধরে গ্রামীণফোনের ২০০৭, রবির ১৭৯২, বাংলালিংকের ১৬৭৯ ও টেলিটকের ৯০১ কেবিপিএস। এক্ষেত্রে সব অপারেটরেই সন্তোষজনক। ফোরজি (ডিএল) ৭ এমবিপিএস স্ট্যান্ডার্ড ধরে গ্রামীণফোনের ৫.৮৮, রবি’র ৫.৯১, বাংলালিংকের ৫.১৮। এক্ষেত্রে সব অপারেটর স্ট্যান্ডার্ড মানের নিচে।
আর ফোরজি ইউএল এর ক্ষেত্রে ১ এমবিপিএস ধরে গ্রামীণফোনের ২.৫৫, রবি’র ২.৫০ ও বাংলালিংকের ২.৩৩। এখানে কোন অপারেটরের মান স্ট্যান্ডার্ডের নিচে নয়। তবে টেলিটকের ফোরজি চালুর আগে ড্রাইভ টেস্ট করায় অপারেটরটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ঢাকার উত্তরা, বারিধারা, গুলশান, বনানী, খিলগাঁও, রামপুরা, মগবাজার, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, মিরপুর-১, ২ ও ১৪, বেড়িবাঁধ, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও পল্লবী এলাকায় ড্রাইভ টেস্ট পরিচালনা করে বিটিআরসি।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, কলড্রপে সবচেয়ে এগিয়ে গ্রামীণফোন। যার পরিমাণ ৩.৩৮ শতাংশ। বিটিআরসির আইন অনুযায়ী ২ শতাংশের অধিক কলড্রপ অপরাধ। বিটিআরসির টেস্ট ড্রাইভের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১.৩৮ শতাংশ কলড্রপ হচ্ছে আইনবহির্ভূতভাবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টেলিটকেরও কলড্রপের সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, কলড্রপের চার্জ না কাটার ব্যাপারে মহামান্য হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা এরই মধ্যেই রয়েছে। এত কিছুর পরেও কেন কোনো নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নরওয়ের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টেলিনরের বিরুদ্ধে সেই দেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ৭২০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে—এমন নজিরও আমরা লক্ষ করেছি। কিন্তু আমাদের দেশে ওই দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বছরে তিন হাজার ৫২০ কোটি টাকা লাভ করলেও তাদের বিরুদ্ধে শুধু চিঠি ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষা বা রাষ্ট্রের কোনো লাভ হচ্ছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা চাই প্রত্যক্ষভাবে গ্রাহক স্বার্থরক্ষা ও রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগে বিটিআরসি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.