রিয়াদে যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকে নেতানিয়াহু নাকি মোসাদপ্রধান?
ইসরাইলের বেন গৌরিয়ান বিমানবন্দর থেকে একটি রহস্যময় বিমান সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবতরণের পর সেটির যাত্রী কে ছিলেন, তা নিয়ে ইহুদি রাষ্ট্রটির গণমাধ্যমে জল্পনা-কল্পনা চলছে।বেশ কয়েকটি ইসরাইলি গণমাধ্যম বরাতে রেডিও ফারডার খবরে বলা হয়েছে, সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে একটি গোপন বৈঠকে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কিংবা মোসাদপ্রধান ইয়োসি কোহেন রিয়াদ সফরে ছিলেন।
তবে এ ঘটনায় ইসরাইলি সরকারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিমানটি মাঝখানে আম্মানে ২ মিনিটের বিরতি দিয়েছিল বলে খবরে বলা হয়েছে।বিমানটির যাত্রী কে ছিলেন, তা নিয়ে ইসরাইলি গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠেছে।বিমান শনাক্তকরণ উপাত্তে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত চ্যালেঞ্জার ৬০৪ নামে ব্যক্তিগত মালিকানার বিমানটি সৌদি রাজধানী রিয়াদে ঘণ্টাখানেক ছিল। এর পরে ইসরাইলের বেন গৌরিয়ান বিমানবন্দরে ফিরে যায় সেটি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিমানটি সৌদিতে অবতরণ করেছিল বলে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবর্গের খবরে জানা গেছে।এমন সময় এই রহস্যময় বিমান উড্ডয়নের খবর এসেছে, যখন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার রিয়াদ সফরে ছিলেন।এতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কিংবা অন্য কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রিয়াদের বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন কিনা, তা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
ইসরাইলি দৈনিক হারিৎসের সাংবাদিক ও স্বভাবজাত বিমান শনাক্তকরণ উপাত্ত সংগ্রহকারী আভি শার্ফ বলেন, রিয়াদে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে তেলআবিব থেকে কেউ এসেছেন কিনা, আমি জানি না।দখলদার রাষ্ট্রটির গোয়েন্দাবিষয়ক খবরের ওয়েবসাইট ইনটেলিটাইম লিখেছে, নেতানিয়াহু কেন একটি সরকার গঠনে প্রেসিডেন্ট রৌভিন রিভলিনকে ম্যান্ডেট ফিরিয়ে দিতে দেরি করেছিলেন, এ ঘটনায় সেই ব্যাখ্যা দিয়ে দিচ্ছে। বিমানের অন্য যাত্রীদের কেন জর্ডান থেকে তুলে নিতে হয়েছে, তা নিয়েও বিস্ময় রয়েছে।
মানুষের চোখে ধুলা দিতেই বিমানটি আম্মানে থেমেছিল কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক ইয়োসি মেলম্যান। তিনি বলেন, এতে করে বিমানটি একক ট্রান্সপোন্ডার কোড পাবে।ফ্লাইটরাডার২৪ ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিমানটি ইসরাইল থেকে কায়রোতে কয়েকবার ভ্রমণ করেছে।
মারিভ ডেইলির লেখক ইয়োসি মেলম্যান টুইটারে বলেন, নেতানিয়াহু কিংবা মোসাদপ্রধান ইয়োসি কোহেন বিমানযোগে উপসাগরীয় দেশটিতে সফর করেছেন। সম্ভবত সেখানে সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।যদিও সৌদি আরবের সঙ্গে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সিংহাসনের উত্তরসূরি হওয়ার পর দেশ দুটির উষ্ণতা দিনে দিনে বাড়ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব মোকাবেলায় মরিয়া অবস্থান থেকে সৌদি ও ইসরাইলকে এক মেরুতে নিয়ে এসেছে বলে গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হচ্ছে।এই সফরকে অস্বাভাবিক বিরল বলে আখ্যায়িত করেছেন আভি শার্ফ। ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, ঘণ্টাখানেক সৌদি আরবে থেকে বিমানটি ইসরাইলে ফিরে গেছে।
গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে ইসরাইলি দূত ডান্নি ডানোন জেরুজালেম পোস্টকে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আরব দেশের সঙ্গে কাজ করছে ইসরাইল। এমনকি কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এমন দেশও এতে যুক্ত রয়েছে।তিনি বলেন, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে এক টেবিলে বসাতে ইউরোপীয়রা চেষ্টা করছেন, তখন বিভিন্ন আরব দেশের সঙ্গে মিলে ইরানের সত্যিকার চেহারা প্রকাশের চেষ্টা করছে ইসরাইল।
এর আগে নেতানিয়াহু স্বীকার করেছেন যে, সৌদি আরবের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ তৈরি করেছে তেলআবিব। গত বছর ইসরাইলির দৈনিক মারিভের খবরে জানানো হয়েছে, জর্ডানের রাজধানী আম্মানে মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন নেতানিয়াহু।হোয়াইট হাউসের বিশেষ উপদেষ্টা জারেড কুশনার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত জেসন গ্রিনব্লাটের আম্মান সফরের ফাঁকে এই বৈঠক হয়েছে বলে খবরে দাবি করা হচ্ছে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.