৭ নিয়ম মেনে চললে সিজার এড়ানো সম্ভব: ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার
সূতির কাছে এক আতঙ্কের নাম সিজার। এক দু’জন ব্যাতিক্রম বাদে পরিবারের কেউই চান না প্রসূতির সিজার হোক। তবু দিন দিন সিজারের পরিমাণ বাড়ছে। উন্নত দেশে সিজারকে অনুৎসাহিত করা হলেও আমাদের দেশে কার্যত তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
তদুপরি মা ও তার গর্ভস্থ সন্তানের নিরাপত্তাসহ নানা দিক বিবেচনায় রেখে সিজার করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। সিজার বাড়ার পেছনে রোগীর স্বজনরা ডাক্তারদের বাণিজ্যিক মনোভাবকে দায়ী করলেও সিজার করানোর ক্ষেত্রে অন্ত:স্বত্ত্বা ও অভিভাবকদের দায়ও কম নয়। অনেকে প্রসবকালীন বেদনা থেকে বাঁচতে সিজারের সিদ্ধান্ত নেন।
মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ -২০১৬ অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে মোট সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে সিজারের পরিমাণ ছিল ১২%। কিন্তু ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৩১% এ। অর্থাৎ মাত্র কয়েক বছরে সিজারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে মোট সন্তান প্রসবের ৮৩ শতাংশই হচ্ছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সিজারিয়ান প্রসবের হার ৩৫ শতাংশ। এখনও ৫০ ভাগের বেশি প্রসব বাড়িতে হয়।
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, মায়ের গর্ভাবস্থায় সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে সিজার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। নারী গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই যদি কিছু নিয়ম মেনে চলে তাহলে স্বাভাবিক প্রসব হওয়া সম্ভব। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের জন্য সেই নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো-
প্রথমত, মায়ের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাসবোধ থাকতে হবে যে, তিনি স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করবেন।
দ্বিতীয়ত, lugel exercise নামে এক ধরণের ব্যায়াম আছে। যাতে পেলভিক এলাকার মাংসপেশী সংকোচন ও প্রসারণ করার মাধ্যমে কটি দেশের প্রসারণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
তৃতীয়ত, গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে প্রশ্বাস ছাড়লে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে। অন্ত:স্বত্ত্বার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বড় একটি সমস্যা। তাই এ পদ্ধতি অবলম্বন করে নিস্কৃতি পেতে পারেন।
চতুর্থত, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত হাঁটলে সাঁতার কাটলে ও হালকা কিছু ব্যায়াম করলে অন্ত:স্বত্ত্বা শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান থাকেন। যা স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সহায়ক হয়।
পঞ্চমত, নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে কোনো রোগ থাকলে যেমন হাইপার টেনশন ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে মা নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে পারেন।
ষষ্ঠত, ডাক্তারের দেওয়া খাদ্য তালিকা অনুস্মরণ করলে সন্তান খুব বড়ও হয় না আবার ছোটও হয় না। ফলে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সপ্তমত, প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন- পানি, খাওয়ার স্যালাইন, শরবত, পাতলা মশুর ডাল, ডাবের পানি, ভাতের মার ইত্যাদি।
না বললেই নয়, সিজারে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মায়ের জীবন যেমন ঝুঁকির মুখে পড়ে তেমনি পরবর্তীতে মাকে নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতার শিকার হতে হয়। তাই সিজারকে `না ` বলাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
লেখক: ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার, এমবিবিএস,এমসিপিএস, এফসিপিএস, কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল।
সূত্রঃ- একুশে টেলিভিশন
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.